Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
কেন হল হামলা, পুলিশের দু’রকম ব্যাখ্যায় ধন্দ

ডিএমের বাংলোয় বোমা ফেলে ধৃত ৪

ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে চার জনকে গ্রেফতার  করা হল, তারা প্রত্যেকেই বালি কারবারে জড়িত বলে পুলিশের দাবি।

বোমাবাজিতে গ্রেফতারি নিয়ে পুলিশের সাংবাদিক বৈঠক। বুধবার সিউড়িতে। (ডান দিকে), আদালতে এক ধৃত (সামনে সবুজ জামা)। নিজস্ব চিত্র

বোমাবাজিতে গ্রেফতারি নিয়ে পুলিশের সাংবাদিক বৈঠক। বুধবার সিউড়িতে। (ডান দিকে), আদালতে এক ধৃত (সামনে সবুজ জামা)। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
সিউড়ি শেষ আপডেট: ০১ অগস্ট ২০১৯ ০০:৩৮
Share: Save:

অবৈধ ভাবে বালি মজুত নিয়ে জেলাশাসকের কড়া অবস্থানই গভীর রাতে তাঁর বাংলো লক্ষ্য করে বোমাবাজির কারণ বলে মনে করছিল বীরভূম পুলিশ-প্রশাসনের একটা অংশ। ঘটনার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে যে চার জনকে গ্রেফতার করা হল, তারা প্রত্যেকেই বালি কারবারে জড়িত বলে পুলিশের দাবি।

বুধবার সিউড়ি থানায় সংবাদমাধ্যমকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর) সুবিমল পাল জানান, সোমবার রাতে জেলাশাসকের বাংলো চত্বরে এবং এবিপি আনন্দের সাংবাদিকের বাড়ি লক্ষ্য করে বোমাবাজির ঘটনায় ধরা পড়েছে আসগর মোল্লা, শেখ জয়নাল ওরফে শেখ সুজন, শেখ আনোয়ার এবং শেখ কুতুবউদ্দিন। প্রথম তিন জনের বাড়ি সিউড়ি থানার বাঁশজোড়ে। কুতুবউদ্দিনের বাড়ি সিউড়ির ছাপতলায়। সুবিমলবাবুর দাবি, ধৃতেরা ময়ূরাক্ষীর বাঁশজোড় বালিঘাটের সঙ্গে যুক্ত। তারাই দু’জায়গায় কৌটো বোমা ফাটিয়েছে। সে কথা স্বীকারও করেছে। জেলা আদালতের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর কেশব দেওয়াসী বলেন, ‘‘জেলাশাসকের নিরাপত্তারক্ষী ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীর তরফে করা দু’টি মামলায় জড়িত থাকার অভিযোগে চার জনকে বুধবার মুখ্য বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেটের এজলাসে তুলে ১৪ দিন হেফাজতে নেওয়ার আবেদন জানায় পুলিশ। বিচারক ৫ দিনের পুলিশ হেফাজত মঞ্জুর করেছেন।’’

তবে, জেলাশাসকের বাংলোয় হামলার কারণ হিসেবে পুলিশেরই দু’রকমের দাবি ঘিরে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। কেন বিভ্রান্তি?

প্রথমত, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেছেন, ‘‘বোমাবাজির কারণ হিসেবে ধৃতেরা জানিয়েছে, দিন কয়েক ধরে প্রশাসনিক অভিযানের ফলে তাদের ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেই রাগেই হামলা। অনেকেই ঘটনার সঙ্গে জড়িত, আমরা তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছি। সবটা জানতে ধৃতদের হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।’’ আবার তিনিই দাবি করেন, বাংলো চত্বরে বোমাবাজি করার পিছনে শুধু আক্রোশ নয়, আরও একটি সমাজবিরোধী গোষ্ঠীর সঙ্গে ধৃতদের সংঘাতও দায়ী। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জানান, ধৃতেরা
জেরায় এ-ও জানিয়েছে, এবিপি আনন্দের সাংবাদিকের বাড়িতে বোমাবাজির আগে তারা বালিঘাটের ধারে বসে মদ্যপান করেছিল। পরে ফিরে খাওয়াদাওয়া সারে। তখন তারা খবর পায়, হুসনাবাদ (তিলপাড়া অঞ্চল) এলাকার কিছু সমাজবিরোধী, জেলাশাসকের বাংলোর সামনে সশস্ত্র অবস্থায় জড়ো হয়েছে। এ কথা জেনে ফের মোটরবাইকে এসে ওই এলাকায় বোমাবাজি করে ধৃত চার জন।

পুলিশের এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যা ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে। কারণ, এই ঘটনায় এমনিতেই ডিএম বাংলো চত্বরের নড়বড়ে নিরাপত্তা ব্যবস্থার ছবি প্রকাশ্যে এসেছে। তাই, এমন ব্যাখ্যা দিয়ে সেই ঢিলেঢালা অবস্থাকে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হয়েছে বলে মনে করছে কিছু মহল।

সোমবার রাত আড়াইটে নাগাদ জেলাশাসক মৌমিতা গোদারা বসুর বাংলো লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি বোমা ছোড়ে দুষ্কৃতীরা। সিউড়ি শহর লাগোয়া রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘেঁষেই রয়েছে জেলাশাসকের বাংলো। জাতীয় সড়ক থেকে বাংলো যাওয়ার রাস্তা ও সংলগ্ন এলাকায় ৭টি বোমা ফাটে। ওই রাতেই বোমাবাজি হয় সিউড়ি শহরে, এবিপি আনন্দের সাংবাদিকের বাড়ি লক্ষ্য করেও। এই ঘটনায় জেলাশাসকের বাংলো ও চারপাশের নিরাপত্তা নিয়ে নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। খোদ ডিএম বাংলো চত্বরে বোমাবাজি হওয়ায় অস্বস্তিতে পড়ে জেলা পুলিশ।
নড়েচড়ে বসে পুলিশ। মঙ্গলবার দুপুরেই ঘটনাস্থলে ঘুরে দেখে সিআইডির বম্ব স্কোয়াড। বিকেলে আসে পুলিশ কুকুরও। জেলা পুলিশ সুপারের নির্দেশে ডিএসপি (আইনশৃঙ্খলা ও ট্রাফিক) অভিষেক মণ্ডলের নেতৃত্বে সিট গঠন করা হয়। দলে নেওয়া হয় জেলার বাছাই পুলিশ আধিকারিকদের। তাতে ফল মেলে। রাতেই ধরা পড়ে চার জন।

পুলিশ প্রথম থেকেই ঘটনার পিছনে বালি মাফিয়াদের যোগ দেখছিল। বর্ষাকালে বালি মজুতের ক্ষেত্রে সরকারি নির্দেশিকা মানেননি, এই অভিযোগে সম্প্রতি বীরভূমের অধিকাংশ লিজ হোল্ডার বা লেসিদের বিরুদ্ধে জামিন-অযোগ্য ধারায় মামলা করেছে প্রশাসন। পুলিশ সূত্রের খবর, জেলাশাসকের কঠোর অবস্থানে বালি কারবারিদের সঙ্গে কোণঠাসা বালিঘাটের সঙ্গে যুক্ত সমাজবিরোধীরাও। সেই আক্রোশ থেকে হামলা হয়েছে— এই সূত্রে ধরে এগিয়েই সাফল্য। জেলাশাসক অবশ্য গ্রেফতারি নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suri Bombing Arrest District Magistrate
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE