Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

বিরোধী প্রার্থীর নাম শুনে চমক দলে

বাঁ দিকে, তৃণমূলের সুভাষবাবু। ডান দিকে, সিপিএমের। নিজস্ব চিত্র।

বাঁ দিকে, তৃণমূলের সুভাষবাবু। ডান দিকে, সিপিএমের। নিজস্ব চিত্র।

সৌমেন দত্ত
বর্ধমান শেষ আপডেট: ০৮ মার্চ ২০১৬ ০২:২৪
Share: Save:

নামে কী এসে যায়!

আসলে যে সত্যিই এসে যায়, তা বিলক্ষণ টের পাচ্ছেন সিপিএমের ভাতার জোনাল কমিটির সম্পাদক সুভাষ মণ্ডল।

মোবাইলে হোক বা রাস্তাঘাটে সাদামাটা চেহারারা সুভাষবাবুকে দেখলেই একটাই প্রশ্ন, ‘‘দাদা আপনি শেষে তৃণমূলের হয়ে দাঁড়ালেন?’’ জবাব দিতে দিতে ক্লান্ত সুভাষবাবুর মেজাজ বিগড়ে যাওয়ার আগেই দলের কর্মী-সমর্থকেরা বলে উঠছেন, ‘‘আরে এ সুভাষ সে সুভাষ নয়।’’ আর সুভাষবাবুর আক্ষেপ, ‘‘এত দিনেও দলের, এলাকার লোকেরা চিনল না আমায়!’’

বিষয়টি খোলসা করা যাক। এ বার ভাতার বিধানসভায় তৃণমূলের প্রার্থী হয়েছেন সুভাষ মণ্ডল। বিদায়ী বিধায়ক বনমালী হাজরা আর ভাতার পঞ্চায়েত সমিতির পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ মানগোবিন্দ অধিকারীর দ্বন্দ্বের ফাঁক গলে তৃণমূলের প্রার্থী তালিকায় প্রথম বার নাম তুলে ফেলেছেন তিনি। আর তাঁর সঙ্গেই লোকে গুলিয়ে ফেলছে ১৯৯৬ থেকে ভাতারের টানা দু’বারের বাম বিধায়ক, ষাটোর্ধ্ব সুভাষ মণ্ডলকে। ফলে দু’বেলায় সিপিএমের তরফে বেশ কয়েক বার স্পষ্ট করে দিতে হচ্ছে, তৃণমূলের সুভাষ আউশগ্রাম ২ ব্লকের রামনগরের বাসিন্দা। তবে এখন গুসকরায় থাকেন। আর তাঁদের মাঠেঘাটে ঘুরে বেড়ানো, প্রাক্তন শিক্ষক সুভাষ তাঁদেরই আছেন।

সিপিএমের জেলা নেতাদের দাবি, ভাতারে তো বটেই খোদ সদরেও অনেকেরই জিজ্ঞাসা এ নিয়ে। অনেকই প্রশ্ন করছেন, ‘পার্টি দরদি সুভাষবাবু কী তৃণমূলে নাম লেখালেন?’ জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য আব্দার রেজ্জাক মণ্ডল তো বলেই ফেললেন, ‘‘আচ্ছা বিড়ম্বনায় পড়েছি। যেখানেই যাচ্ছি, সেখানেই ভাতারের জোনাল কমিটির সম্পাদক সুভাষকে নিয়ে কর্মী-সমর্থকেরা জিজ্ঞাসা করছেন। তাঁদের আবার আমাদের বুঝিয়ে বলতে হচ্ছে, ‘এ সুভাষ, ওই সুভাষ নয় রে!’” ভাতারের একটি লোকাল কমিটির নেতা শেখ চন্দনও বলেন, “রাস্তাঘাটে, মোবাইলে ঘনঘন ফোন করে শুভান্যুধায়ীরা জানতে চাইছেন, আমাদের সুভাষদা কী তৃণমূলের প্রার্থী? সবাইকে ঠিক করে বোঝানোও যাচ্ছে না। কি মুশকিল!।” ভাতারের যুব নেতা অভিষেক চট্টোপাধ্যায়ও বলেন, “চায়ের দোকানে বসেছিলাম। তৃণমূলের প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পরে অনেককেই বলতে শুনেছি, সুভাষদাও তৃণমূলের প্রার্থী হয়ে গেলেন।” তবে শুধু সমর্থক, শুভানুধ্যায়ী নন, প্রথমে নাম শুনে চমকে গিয়েছিলেন বেশ কিছু দলের নেতাও। নাম প্রকাশ না শর্তে তাঁরা বলেন, ‘‘নাম শুনে চমকে গিয়েছিলাম। পরপর ফোন আসায় বুক কেঁপে উঠেছিল। পরে ফোন করে নিশ্চিত হই।” তাঁরাই জানান, এখন পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌছেছে যে, সিপিএম নেতা-কর্মীদের সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে লিখতে হচ্ছে, ‘নাম এক হলেও ব্যক্তি দু’জন আলাদা। একের পর এক ফোন, মেসেজ আসছে। ভুল বার্তা ছড়িয়ে পড়ছে। সে জন্য এই পোস্ট করতে হয়েছে।’

কিন্তু এমন ধারনার কারণ কী?

সিপিএমের কর্মী-সমর্থকেরাই জানান, ভাঙরের বহিষ্কৃত সিপিএম বিধায়ক রেজ্জাক মোল্লা থেকে খণ্ডঘোষের নবীনচন্দ্র বাগ সকলেই দল ছেড়ে তৃণমূলে নাম লিখিয়েছেন। প্রার্থীও হয়েছেন। এ ছাড়াও বর্ধমানের একাধিক বিধায়ক ও নেতাকে দলে টানার জন্য নানা ভাবে প্রলোভন দেখিয়েছিল তৃণমূল। এ সব দেখেশুনেই তাঁদের মনে ওই ধারণা তৈরি হয়। সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর এক নেতা বলেন, “আমাদের দলে এখনও যে ক’জন কট্টরপন্থী নেতা রয়েছেন, তাঁদের মধ্যে একজন সুভাষবাবু। এলাকায় অত্যন্ত পরিচিত মানুষ। কিন্তু তৃণমূলের প্রার্থী বহিরাগত। তাতেই ভুল ধারনা তৈরি হয়।’’

সব দেখেশুনে সিপিএমের সুভাষবাবু বলেন, ‘‘আমি এ সব নিয়ে মুখই খুলব না।” আর তৃণমূলের সুভাষ বলেন, “কী আর করা যাবে বলুন! আমরা তো আর নাম বদলে ফেলতে পারব না।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

candidate opposition surprise
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE