প্রার্থী হিসেবে তিনিই প্রথম পছন্দ। শুধু দক্ষিণ ২৪ পরগনা নয়, সূর্যকান্ত মিশ্রকে তাঁর পুরনো কেন্দ্র নারায়ণগড়ে প্রার্থী হিসেবে চাইছে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সিপিএম-ও। কিন্তু দলের রাজ্য সম্পাদক হওয়ার পরে সূর্যবাবু আর ভোটে দাঁড়াতে রাজি নন। সিপিএমের শীর্ষ নেতাদের একাংশেরও একই মত। এই পরিস্থিতিতে তাই নারায়ণগড়ের জন্য বিকল্প প্রার্থীর নামও ভেবে রাখছেন জেলা সিপিএম নেতৃত্ব।
সিপিএম সূত্রের খবর, বিকল্প হিসেবে আলিমুদ্দিনে জানানো হয়েছে ভাস্কর দত্তের নাম। ভাস্করবাবু দলের জেলা কমিটির সদস্য। দীর্ঘদিন বেলদা জোনাল সম্পাদক ছিলেন। তবে সে প্রসঙ্গ এড়িয়ে সিপিএমের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক তরুণ রায়ের বক্তব্য, “সূর্যকান্ত মিশ্র প্রার্থী হবেন না বলে কে বলল? সব কিছু অনুমান করা ঠিক নয়।” আর সূর্যবাবু প্রার্থী না হলেও এই আসনে জয় নিয়ে আশাবাদী তরুণবাবু। তাঁর কথায়, “সূর্যবাবু প্রার্থী হলে ভাল। অন্য কেউ লড়লেও ওখান থেকে এ বার আমরা হইহই করে জিতব। মানুষ আমাদের সঙ্গে আছেন।”
তৃণমূল অবশ্য এ নিয়ে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না। দলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কার্যকরী সভাপতি নির্মল ঘোষের মন্তব্য, “পরাজয়ের ভয়ে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে আর দাঁড়াতে চাইছেন না সূর্যকান্ত মিশ্র। উনি পালিয়ে যেতে চাইছেন! গত ৩৪ বছরে সিপিএম তো এখানে কম লুঠপাট করেনি।” সিপিএম সূত্রে খবর, রাজ্য দফতরে পাঠানো প্রস্তাবে সূর্যবাবুর নামই প্রথমে জানানো হয়েছে। এ নিয়ে, লোকাল কমিটি, জোনাল কমিটি এবং জেলা কমিটিস্তরে আলোচনাও হয়েছে। শেষে দলের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীতে আলোচনা হয়েছে। দলের অধিকাংশ নেতা-কর্মীই মনে করেন, রাজ্যে সাম্প্রতিক নানা ঘটনায় শাসক দলের বিরুদ্ধে লড়াকু মুখ হিসেবে সূর্যবাবুর গ্রহণযোগ্যতা বেড়েছে। ফলে, তিনি প্রার্থী হলে নারায়ণগড়ে তৃণমূলকে হারানো যতটা সহজ হতে পারে, অন্য কেউ প্রার্থী হলে ততটা সহজ হবে না।
জেলা সিপিএমের এক নেতার কথায়, “সূর্যবাবুকে প্রার্থী হিসেবে চেয়ে নারায়ণগড়ের প্রত্যন্ত এলাকা থেকেও দাবি এসেছে। উনি প্রার্থী হলে জেতা নিয়ে কোনও সংশয় নেই! তবে অন্য কেউ প্রার্থী হলে আমাদের জয়ের সম্ভাবনা অনেকটাই কমে যাবে। দলকে কঠিন লড়াইয়ের মধ্যে পড়তে হবে।” সূর্যবাবু না হলে অন্য যাঁর নাম প্রার্থী হিসেবে প্রস্তাব করা হয়েছে, সেই ভাস্কর দত্ত কি বলছেন? ভাস্করবাবুর কথায়, “প্রার্থী চূড়ান্ত করার ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয় দল। আমার নাম প্রস্তাব করা হয়েছে কে বলল? আমি অন্তত জানি না!” এই আসন থেকে এ বার সিপিএমের জেতা সম্ভব? ভাস্করবাবুর জবাব, “আগে মানুষই এখানে আমাদের জিতিয়েছেন। এ বারও মানুষই জেতাবেন।” পরিসংখ্যান অবশ্য বলছে অন্য কথা। ধাক্কাটা এসেছিল গত বিধানসভা নির্বাচনেই। দীর্ঘদিন যেখান থেকে বড় ব্যবধানে জিতেছেন সূর্যকান্ত মিশ্র, সেই নারায়ণগড় থেকে ওই নির্বাচনে তাঁকে জিততে হয় মাত্র হাজার সাতেক ভোটে। এরপর থেকে রক্তক্ষরণ অব্যাহত। সিপিএমের ভোট ক্রমেই কমেছে। গত লোকসভা ভোটের নিরিখে জেলার এই এলাকায় বামেরা পিছিয়ে প্রায় ছাব্বিশ হাজার ভোটে! গত বিধানসভা নির্বাচনে এখানে বামেরা পেয়েছিল ৮৯,৮০৪ ভোট। তৃণমূল পেয়েছিল ৮২,৬৯৫ ভোট। গত লোকসভা নির্বাচনে বামেরা পেয়েছে ৬৪,৬৫১ ভোট। তৃণমূল পেয়েছে ৯১,০৫৬ ভোট। সামনে যে কঠিন লড়াই তা বুঝতে অসুবিধে হচ্ছে না জেলা সিপিএমের। অবশ্য নেতৃত্ব প্রকাশ্যে তা মানছেন না।
মাস কয়েক আগে নিজের নির্বাচনী এলাকায় জাঠা করতে গিয়ে বাধাও পেয়েছেন সূর্যবাবু। তৃণমূলের লোকজন তাঁকে বাধা দেন।
সিপিএমের এক জেলা নেতার অবশ্য বক্তব্য, “এটা নারায়ণগড়ের মাটি। এই মাটি হেমচন্দ্র কানুনগোর মাটি। এই মাটি লড়তে জানে। হামলা- মামলা- জেল করে ওরা আমাদের কখনও আটকাতে পারেনি। আটকাতে পারবেও না!” তাঁর কথায়, “গত লোকসভা নির্বাচনে প্রহসন হয়েছে। ভয়ভীতি কেটেছে। ওদের মোটর সাইকেল গুণ্ডাবাহিনী দেখলে এতদিন মানুষ ভয় পেত। এখন পায় না।” ওই নেতার বক্তব্য, “সূর্যকান্ত মিশ্র বলেছেন, ‘আমরা কেউ হিরো নয়। আমরা সব জিরো। মানুষই আসল হিরো। আমাদের মানুষের কাছে যেতে হবে।’ আমরা মানুষের কাছে যাচ্ছিও। ঠিকঠাক ভোট হলে, নির্বাচনী কমিশন তার দায়িত্ব পালন করলে, মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারলে এখানে তৃণমূলের ঘাসফুলের পাপড়িও থাকবে না। আর ঘাসও থাকবে না!” সিপিএমের এক নেতা অবশ্য মনে করিয়ে দিচ্ছেন, “সূর্যকান্ত মিশ্রের উপরে এখন অনেক দায়িত্ব। ফলে চাইলেই তাঁকে প্রার্থী হিসেবে পাওয়াটা কঠিন। এখন সব দলের সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy