Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

ব্যাখ্যা পার্থের, দলের বিরুদ্ধে তোপ শিউলিদের

দল থেকে সাসপেন্ড করেও মুখ বন্ধ করা গেল না মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের দুই বিধায়ক শিউলি সাহা এবং শীলভদ্র দত্তের। সাসপেন্ড হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুকুলের আস্তানা বলে খ্যাত নিজাম প্যালেসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন দু’জনে।

সংবাদমাধ্যমের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তৃণমূলের বিধায়ক শিউলি সাহা। মঙ্গলবার নিজাম প্যালেসে। ছবি: সুদীপ আচার্য

সংবাদমাধ্যমের সামনেই কান্নায় ভেঙে পড়লেন তৃণমূলের বিধায়ক শিউলি সাহা। মঙ্গলবার নিজাম প্যালেসে। ছবি: সুদীপ আচার্য

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ জুলাই ২০১৫ ০৩:৪৮
Share: Save:

দল থেকে সাসপেন্ড করেও মুখ বন্ধ করা গেল না মুকুল রায় ঘনিষ্ঠ তৃণমূলের দুই বিধায়ক শিউলি সাহা এবং শীলভদ্র দত্তের। সাসপেন্ড হওয়ার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুকুলের আস্তানা বলে খ্যাত নিজাম প্যালেসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিলেন দু’জনে। রবিবার এই নিজাম প্যালেসেই ইফতারের আসরে মুকুলের সঙ্গে দুই বিধায়ক ছিলেন। সেই ঘটনার পরেই সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত ঘোষণা হওয়ায় বিক্ষুব্ধ দুই নেতা-নেত্রী তৃণমূলের বিরুদ্ধে সংখ্যালঘু ভাবাবেগকে ব্যবহার করার কৌশলও অব্যাহত রেখেছেন।

সংবাদমাধ্যমের মাধ্যমে দলীয় নেতৃত্বের কাছে দুই বিধায়কের আবেদন, ‘‘কী অপরাধ আমাদের জানান। অপরাধ যদি করে থাকি, দলীয় নেতৃত্বর কাছে তা কবুল করে নেব। যদি অপরাধ না করে থাকি, মানুষই তা হলে ঠিক করে দেবে, কোন পথে যাব।’’ মুকুলের অনুগামী হিসাবে ইফতারে যোগ দেওয়াতেই কি এই শাস্তি? হলদিয়ার বিধায়ক শিউলির জবাব, ‘‘মুকুলদা তৃণমূলের সাংসদ। উনি তো সাসপেন্ড হননি। তাঁর সঙ্গে থাকার জন্য শাস্তি দিতে হলে একসঙ্গে নন্দীগ্রামে যখন গেলাম, তখনই দল ডাকল না কেন?’’

সংখ্যালঘু-আবেগ উস্কে বিতর্ক তৈরির চেষ্টা হচ্ছে দেখে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় অবশ্য মঙ্গলবার স্পষ্ট করে দিতে চেয়েছেন, ‘‘ইফতার পার্টিতে যাওয়ার জন্য ওঁদের সাসপেন্ড করা হয়নি। ওঁরা মনগড়া কথা বলছেন! এক বছর ধরে ওঁদের ধারাবাহিক কাজকর্মে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের জন্যই এই সাসপেনশন।’’ সংখ্যালঘু-আবেগ ব্যবহার করতে চেয়ে মুকুল-শিবিরের কোনও লাভ হবে না বলেই পার্থবাবুর ব্যাখ্যা। তাঁর কথায়, ‘সংখ্যালঘুদের বন্ধু হিসাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁদের পাশেই রয়েছেন। সংখ্যালঘুদের এ ক্ষেত্রে হাতিয়ার করা হচ্ছে। এটা ঠিক নয়।’’ কিন্তু অনুগামীদের সাসপেন্ড করা হচ্ছে যখন, মুকুলকে শাস্তি দেওয়া হল না কেন? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘উনি শৃঙ্খলা ভেঙেছেন বলে তো শুনিনি!’’

শাসক দলের মধ্যেই অবশ্য চর্চা চলছে, মুকুলের ইফতারে যাওয়ার পরের দিন তড়িঘড়ি দুই বিধায়ককে সাসপেন্ড করে তৃণমূলের তরফেই বরং আতঙ্কের ছবি প্রকট করে তোলা হয়েছে! বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, মুকুলের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা তাঁদের দলে প্রভাব ফেলবে বলেই তৃণমূল মনে করছে। সেই আতঙ্কের ছায়াই আরও স্পষ্ট হয়েছে মালদহের চাঁচল-১ ব্লকের তৃণমূল সভাপতি মজিবর রহমানকে সাসপেন্ড করার সিদ্ধান্তে। মালদহের জেলা তৃণমূল সভাপতি মোয়াজ্জেম হোসেন স্পষ্টই বলেন, ‘‘মুকুল রায়ের ইফতার পার্টিতে যাওয়ার জন্য দল মজিবরকে সাসপেন্ড করেছে।’’ যদিও মজিবরের কৌঁশলির দাবি, ‘‘আমি মুকুলবাবুর ইফতার পার্টিতে যাইনি। বঙ্গীয় সংখ্যালঘু বুদ্ধিজীবী মঞ্চের ডাকা ইফতার পার্টিতে যাই। আমাকে সাসপেন্ড করা হয়েছে শুনেছি। তবে কোনও চিঠি পাইনি। আমি রাজ্য নেতৃত্বকে বিষয়টি জানিয়েছি।’’ প্রসঙ্গত, ওই সংখ্যালঘু মঞ্চ যৌথ ভাবে নিজাম প্যালেসে ইফতারের আনুষ্ঠানিক আয়োজক ছিল কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের একটি সংগঠনের সঙ্গে।

এক দিকে যেমন শিউলি-শীলভদ্রেরা তৃণমূলের নেতৃত্বের সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন, তেমনই মুকুল-ঘনিষ্ঠ এবং আর এক সাসপেন্ডেড বিধায়ক স্বপনকান্তি ঘোষ আদিবাসীদের উন্নয়ন নিয়ে বিঁধেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। বীরভূম, বর্ধমান, মুর্শিদাবাদ, কোচবিহারের আদিবাসী মানুষের জন্য কোথায় কী উন্নয়ন নিয়ে প্রশ্ন তুলে বিধায়কের কটাক্ষ, ‘‘তাঁরা কি মমতাদিদির আঁচল ধরে টানবেন?’’

দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানালেও শিউলিরা এখনই পরবর্তী পদক্ষেপের বিষয়ে কিছু ভাঙতে চাননি। শীলভদ্রের কথায়, ‘‘১৯টা দলের সঙ্গে জোটের ভোটে আমরা জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছিলাম। সকলের সঙ্গে কথা বলে পরবর্তী পদক্ষেপ করব।’’ শীলভদ্রের পাশে বসেই শিউলি এ দিন আবেগবিহ্বল হয়ে কেঁদে ফেলেছেন। বলেছেন, ‘‘নেত্রী কি ভুলে গিয়েছেন পুরনো দিনের কথা! যখন আমি মার খেয়েছি, লোকে আমার শাড়ি ছিঁড়ে দিয়েছে! সাসপেন্ড করার এই সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে উনি আমাকে ডেকে বকুনি দিতে পারতেন। থাপ্পড়ও দিতে পারতেন! মাথা পেতে নিতাম!’’

স্বয়ং মুকুল অবশ্য এ দিন ছিলেন দিল্লিতে। তবে তাঁর নিরাপত্তা ব্যবস্থায় আরও কাটছাঁট করেছে রাজ্য সরকার। আর তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, কল্যাণীতে এ দিনই মুখ্যমন্ত্রী মমতার সভায় দর্শকাসনের প্রথম সারিতে ছিলেন বীজপুরের বিধায়ক, মুকুল-পুত্র শুভ্রাংশু রায়! সভার পরে তাঁর বক্তব্য, ‘‘সভা ছিল, তাই এসেছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE