Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

সুবিধা নিয়েও ভোট নয় কেন? নিজের খাসতালুকে ‘অভিমানী’ শুভেন্দু

মুখ্যমন্ত্রীর সেই সুর এ বার শোনা গেল পূর্ব মেদিনীপুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর গলাতেও।

রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারী।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নন্দীগ্রাম শেষ আপডেট: ১৮ অক্টোবর ২০১৯ ০১:২৯
Share: Save:

রাজ্যের মানুষের জন্য তিনি অনেক করেছেন। কিন্তু ভোটবাক্সে তার সবটা আসেনি।

জেলা সফরে দলীয় বা প্রশাসনিক সভায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে শোনা গিয়েছে এমন কথা। এমনকী লোকসভা ভোটে মনের মতো ফল না হওয়ায় এই প্রসঙ্গে খেদ প্রকাশ করতেও দেখা গিয়েছে তাঁকে।

মুখ্যমন্ত্রীর সেই সুর এ বার শোনা গেল পূর্ব মেদিনীপুরের দাপুটে তৃণমূল নেতা তথা রাজ্যের পরিবহণ ও সেচমন্ত্রী শুভেন্দু অধিকারীর গলাতেও।

নন্দীগ্রামে ব্রজমোহন তিওয়ারি স্কুলের অডিটোরিয়ামে দলের বিজয় সম্মিলনী অনুষ্ঠানে শুভেন্দু হাজির ছিলেন বুধবার রাতে। সেখানেই দলীয় কর্মী-সমর্থকদের উদ্দেশে শুভেন্দু বলেন, ‘‘লোকসভা নির্বাচনে আপনারা সম্মিলিত ভাবে নন্দীগ্রাম বিধানসভা থেকে ৯৫ হাজার ভোটের লিড হবে বলে কথা দেওয়ার পরেও কেন মাত্র ৬৯ হাজার লিড পেলাম? ২৬ হাজার ভোট কমল কেন?’’ এরপর তিনি প্রশ্ন তোলেন, সমস্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়ার পরেও কেন ভোটে আশানুরূপ লিড মিলছে না? লোকসভা ভোটে ২৩ টা বুথে কেন তৃণমূল লিড পেল না?’ কেন এমন ঘটল তা দলের কর্মী-সমর্থকদের ভেবে দেখতে বলে ওই সব ‘সুবিধাবাদীদের’ চিহ্নিত করতেও বলেন ‘নন্দীগ্রামের সেনাপতি’।

নন্দীগ্রামের মাটিতে বিজয়া সম্মিলনীর এই মঞ্চে শুভেন্দুর গলায় শোনা গিয়েছে ‘গণতান্ত্রিক পরিবেশে’র কথাও। তিনি বলেন, ‘‘নিশ্চিত ভাবেই সব দল থাকবে। সব দলের পতাকা থাকবে।’’ মন্ত্রীর মুখে এ হেন মন্তব্য ঘিরে অবশ্য শুরু হয়েছে রাজনৈতিক জল্পনা। যে শুভেন্দু ২০১৮ সালে পঞ্চায়েত ভোটের আগে দলের নেতা-কর্মীদের পঞ্চায়েতকে বিরোধী শূন্য করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ঘোষণা করেছিলেন বিরোধীশূন্য পঞ্চায়েত করতে পারলে বেশি সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে, তিনিই এখন বিরোধীদের অস্তিত্বের প্রতি ‘সহানুভূতিশীল’ হওয়ায় অনেকেই অবাক।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, লোকসভা ভোটের পর জেলায় দলের হাল দেখে চাপে পড়ে এখন সুর বদল করেছেন মন্ত্রী। লোকসভায় জিততে না পারলেও ‘অধিকারী গড়’ এই জেলায় বেড়েছে বিজেপি। গেরুয়া চোরাস্রোতে ময়না, নন্দীগ্রাম, পাঁশকুড়ায় তৃণমূল বেশ বেকায়দায়। তার উপর সম্প্রতি দলের দুই নেতা-কর্মী খুনের ঘটনায় তৃণমূল নেতৃত্বে উপর আস্থা হারাচ্ছেন দলের কর্মীরাই। পাঁশকুড়া পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কুরবান শা এবং ময়নার প্রাক্তন পঞ্চায়েত সদস্য বসুদেব মণ্ডল খুনের তদন্তে শুভেন্দু পুলিশে ভরসা রাখার কথা বললেও, দু’টি ক্ষেত্রেই নিহতদের পরিবারের তা মানতে নারাজ। কুরবান শা-র পরিবারের তরফে তো ইতিমধ্যেই সিআইডি তদন্ত চাওয়া হয়েছে। বসুদেব মণ্ডলের পরিবারও সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীর কাছে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। দলের এমন পরিস্থিতিতে নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু সহনশীলতার পথে হাঁটতে চাইছেন বলে মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।

যদিও নন্দীগ্রামে তিনি এমন কথা বলেননি বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘লোকসভা ভোটের আগে স্থানীয় নেতৃত্ব ৯৫ হাজার লিড পাবেন বলে জানিয়েছিল। সেটা ৬৯ হাজার হয়েছে। যদিও সেই সংখ্যাটাও অনেকই। তবু আমি আত্মসমীক্ষা করে দেখতে বলেছি।’’

বিরোধী প্রসঙ্গে শুভেন্দুর মন্তব্য নিয়ে অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েনি বিজেপি। বিজেপির জেলা সভাপতি (তমলুক) নবারুণ নায়েক বলেন, ‘‘এতদিন উনি বিরোধী দলগুলিকে কোনও সম্মান দেখাননি। যে ভোট পেয়ে জেতার কথা উনি বলছেন, সেই ভোটও উনি লুট করেই পেয়েছেন। বিজেপির উত্থানে তৃণমূল নেতারা আসলে বিভ্রান্ত।’’

পুরো বিষয়টি নিয়ে তৃণমূলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘কিছু মানুষের অপকর্ম এবং উগ্র চাওয়া-পাওয়ার রাজনীতির জন্য একটা ভুল-বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছিল। তবে আমরা সেই ক্ষয়ক্ষতি মেরামত করে নিয়েছি। আশা করছি আগামী বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফল করব।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Mamata Banerjee Suvendu Adhikari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE