Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Suvendu Adhikari

প্রণব-স্মরণে সভা শুভেন্দুর, মুখেই আনলেন না তৃণমূলের নাম

যে দলে শুভেন্দু এখনও রয়েছেন, ঘটনাচক্রে সেই তৃণমূলের ব্যানারে প্রণব-স্মরণের আয়োজন তিনি করেননি।

প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দীর্ঘ অন্তরাল ভেঙে জমায়েতের সামনে এলেন শুভেন্দু অধিকারী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে দীর্ঘ অন্তরাল ভেঙে জমায়েতের সামনে এলেন শুভেন্দু অধিকারী। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২০ ১৯:৫২
Share: Save:

তাঁকে ঘিরে জল্পনার অন্ত নেই। তিনি অবশ্য এখনও পর্যন্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মন্ত্রিসভার সদস্য। তবু তাঁর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে গুঞ্জন ক্রমশ ডালপালা মেলছে। তবু তিনি অন্তরালেই থেকেছেন। জল্পনা নস্যাৎ করার প্রয়োজনও বোধ করেননি। সেই শুভেন্দু অধিকারীই মঙ্গলবার দীর্ঘ অন্তরাল ভেঙে জমায়েতের সামনে এলেন। কিন্তু প্রয়াত প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে। এবং সে সভায় যে ভাষণ শুভেন্দু দিলেন, তা তাঁকে ঘিরে চলতে থাকা জল্পনাকে বাড়াল বই কমাল না।

যে দলে শুভেন্দু এখনও রয়েছেন, ঘটনাচক্রে সেই তৃণমূলের ব্যানারে প্রণব-স্মরণের আয়োজন তিনি করেননি। ‘তাম্রলিপ্ত জনকল্যাণ সমিতি’ নামে যে সংগঠনের তরফে ওই স্মরণসভার আয়োজন, শুভেন্দুই তার সভাপতি। আর সভাস্থল তমলুকের নিমতৌড়ি। সংসদীয় রাজনীতিতে শুভেন্দু উত্থানের আঁতুড়ঘর। ২০০৯ সালে এই তমলুক লোকসভা আসন থেকেই সিপিএমের তৎকালীন দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠকে হারিয়ে প্রথম বার সংসদে পৌঁছেছিলেন শুভেন্দু। ইঙ্গিতপূর্ণ ভাবে নিমতৌড়ির সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে শুভেন্দু এ দিন সেই জয়কে স্মরণ করেছেন। জানিয়েছেন, তাঁর সেই জয়ে প্রণব মুখোপাধ্যায়ের খুব বড় ভূমিকা ছিল।

তৃণমূলের টিকিটেই প্রথম সাংসদ হন শুভেন্দু। ২০০৯-এর সেই নির্বাচনে কংগ্রেসের সঙ্গে জোট গড়ে তৃণমূল লড়েছিল। তাই দু’দলের হেভিওয়েট নেতারা পরস্পরের প্রার্থীদের হয়ে সভা করেছিলেন প্রায় সর্বত্র। সেই সূত্রেই তৃণমূল প্রার্থী শুভেন্দুর জন্য তমলুকে সভা করতে গিয়েছিলেন কংগ্রেসের তৎকালীন সর্বোচ্চ নেতাদের অন্যতম প্রণববাবু। জোট রাজনীতিতে এই ঘটনা ব্যতিক্রমী নয়। কিন্তু তাঁর সমর্থনে প্রণববাবুর সেই সভার কথা এ দিন বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে উল্লেখ করেছেন শুভেন্দু।

আরও পড়ুন: বিধানসভা ভোটের মুখে হিন্দিভাষীদের কাছে পৌঁছতে সেল মমতার

নন্দীগ্রামের বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক তথা রাজ্যের পরিবহণ মন্ত্রীর কথায়, ‘‘২০০৯ সালে আমি যখন লোকসভায় এখানে লড়াই করছি, তিনি (প্রণববাবু) পুরুলিয়া থেকে হেলিকপ্টারে এসেছিলেন মহিষাদলে। আমার কাঁধে হাতটি রেখে মহিষাদলের মানুষের কাছে বলে গিয়েছিলেন, আমি তোমাদের এটুকু বলতে এসেছি, আমার উত্থান সতীশদা (সতীশ সামন্ত), সুশীলদার (সুশীল ধাড়া) হাত ধরে। আমি শুভেন্দুকে দিয়ে গেলাম তমলুকের মানুষের কাছে। শুভেন্দুকে তোমরা জেতাও, শুভেন্দু তোমাদের সঙ্গে কখনও বিশ্বাসঘাতকতা করবে না।’’ আরও একধাপ এগিয়ে শুভেন্দু বলেছেন, ‘‘এই কথা প্রণব মুখোপাধ্যায় বলে গিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতিতে এবং আপনারা দু’হাত ভরে আমাকে সংসদে পাঠিয়েছিলেন।’’ সেই নির্বাচন যে দলের টিকিটে তিনি লড়েছিলেন, সেই দল বা সেই দলের সর্বময় নেত্রীর কথা প্রসঙ্গক্রমেও ছুঁয়ে যাননি।

আরও পড়ুন: পুজোর মাস থেকেই পুরোহিতদের মাসে হাজার টাকা ভাতা

তাঁর রাজনৈতিক জীবনে প্রণববাবুর ভূমিকা এ দিন আরও নানা ভাবে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন শুভেন্দু। তৃণমূল তৈরি হওয়ার আগে যখন প্রণববাবু প্রদেশ কংগ্রেসের সভাপতি হন, তখন নিজের কোটায় তিনি শুভেন্দুকে প্রদেশ কংগ্রেস কমিটির সদস্য করে নিয়েছিলেন। সে কথাও মনে করিয়ে দিয়েছেন শুভেন্দু। দুবদা বেসিন এলাকায় প্রতি বছর ভয়াল বন্যার মোকাবিলায় কেলেঘাই-কপালেশ্বরী প্রকল্পে যে অর্থ বরাদ্দ কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী প্রণববাবু করেছিলেন, তাতেও তাঁর ভূমিকা ছিল বলে শুভেন্দু ইঙ্গিত দিয়েছেন। বলেছেন, ‘‘অর্থমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি ঘোষণা করলেন এবং আমার পিতৃদেব (শিশির অধিকারী) ও আমার দিকে তাকিয়ে বললেন— তোদের এলাকার জন্য এটা দিয়ে গেলাম।’’ শুভেন্দুর আরও বক্তব্য, প্রণববাবুর সঙ্গে তাঁর সম্পর্কের ঘনিষ্ঠতার প্রমাণ প্রয়াত নেতার আত্মজীবনীতেও তাঁর উল্লেখ।

প্রসঙ্গত, শুভেন্দুর সভাস্থল তেরঙায় মোড়া থাকলেও কোথাও তৃণমূলের নাম বা প্রতীক ছিল না। পরিবহণ মন্ত্রীর ভাষণও রাজনৈতিক ভাবে ইঙ্গিতবহ বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের বড় অংশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Suvendu Adhikari TMC Pranab Mukherjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE