ফাইল চিত্র
কথাটা খোলাখুলিই বললেন কলকাতা পুরসভার কাউন্সিলর অনন্যা বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘‘আমার এলাকায় সব রাজনৈতিক কার্যকলাপেই ওই ছেলেরা থাকে। ওদের তো রুটি-রুজির ব্যবস্থা করতে হবে। আমরা প্রোমোটার ও সিন্ডিকেটের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠক করি। এলাকাভিত্তিক কাজের বরাতের ব্যবস্থাও করে দিচ্ছি। এখন কোনও অসুবিধা হচ্ছে না।’’
দক্ষিণ কলকাতা ও শহরতলির সিন্ডিকেট-এর চাঁইরাও বলেছেন, ‘‘অসুবিধা তো নেই। কারণ, সিন্ডিকেটই এখন সিস্টেম।’’ পাড়ায় পাড়ায় সিন্ডিকেটের দখল নিয়ে নিত্যদিনের মারামারিও অনেক কমেছে, দাবি পুলিশেরও।
তবে কি এখানেও সব শান্তি আর কল্যাণ? দক্ষিণ কলকাতা এবং শহরতলিতে নির্মাণশিল্পের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই বলছেন, সিন্ডিকেট এখন নিজেদের নিয়ম তৈরি করে ‘সিস্টেম’ গড়ে নিয়েছে। নির্মাণ ব্যবসায়ীরা উৎপাদন খরচের মধ্যেই সিন্ডিকেটের ‘পাওনা’ ধরে নেন। সেই আপসেই আপাত শান্তি। দক্ষিণ কলকাতার লেক মার্কেট এলাকার অফিসে বসে সিন্ডিকেটের এক চাঁই বলেন, ‘‘এখন কোনও গন্ডগোল নেই। প্রোমোটারদের তো সব দিক থেকেই সুবিধা। কারণ, ঠিকাদারি থেকে ইমারতি জিনিস সরবরাহ— সব একই ছাদের তলায় পাওয়া যায়। প্রোমোটার ও তাঁর ইঞ্জিনিয়ার জিনিস পরীক্ষা করে নিচ্ছেন। তার পর হিসেব অনুযায়ী পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দিচ্ছেন।’’
ই এম বাইপাস সংলগ্ন কলকাতা পুরসভার একটি ওয়ার্ডে সিন্ডিকেটের প্রায় হাজার দুয়েক সদস্য রয়েছেন। এলাকার সব নির্মাণ সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমেই হচ্ছে। কিন্তু সব কিছুই ‘নিঃশব্দে’। ভবানীপুরের এক প্রোমোটার বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের মুনাফার অংশ এখন আমরা খরচের মধ্যেই ধরে নিয়েছি। ওদের সরবরাহ করা ইমারতি দ্রব্য ও ঠিকাদারির কাজ, সবই নিজেদের ইঞ্জিনিয়ারদের দিয়ে পরীক্ষা করিয়ে নিচ্ছি। মুনাফা কিছুটা কমে গিয়েছে। তবে ঝামেলাও কমেছে।’’
কিন্তু সিন্ডিকেট ‘সিস্টেম’ হয়ে উঠল কী ভাবে? প্রোমোটারদের দাবি, স্থানীয় যুবকেরাই সিন্ডিকেটের সদস্য। ফলে তাঁদের সঙ্গে সংঘাতে গিয়ে সুবিধা হয় না।
শহরতলির এক প্রোমোটার বলেন, ‘‘সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে স্থানীয় নেতাদের কাছে অভিযোগ করে কোনও লাভ হয় না। উল্টে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। তাই ইমারতি দ্রব্য সরবরাহ থেকে ঠিকাদারি— সব কিছুতেই আপস চলেছে।’’ ইট-বালি-সিমেন্ট অবশ্য এখানে বাজারদরেই বিক্রি হয় বলে দাবি দু’পক্ষেরই। ই এম বাইপাস এলাকার এক প্রোমোটারের কথায়, ‘‘অধিকাংশ এলাকায় ফ্ল্যাট তৈরি হওয়ার পর বিক্রি হচ্ছে না। তার পর যদি কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করার পর কাজ বন্ধ হয়ে যায়, তা হলে বিপুল লোকসান। অতএব...।’’ সিন্ডিকেটের পাল্টা দাবি, দু’পক্ষই আপস করেছে। তাই এখন এটাই ‘সিস্টেম’।
অবশ্য পুরনো প্রথায় সিন্ডিকেট চলছে বেহালা-ঠাকুরপুকুর জোকা এলাকায়। প্রোমোটার এবং সাধারণ মানুষের অভিযোগ, বাজার দরের বেশি দাম দিয়েই সিন্ডিকেটের থেকে ইমারতি দ্রব্য নিতে হয় আর সে জিনিস সরবরাহ করা হয় গভীর রাতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, বেহালা-ঠাকুরপুকুর ও জোকা এলাকায় প্রায় ১৫টি সিন্ডিকেট রয়েছে। ডায়মন্ড হারবার রোডের ধারে চোখে পড়বে একের পর এক সিন্ডিকেটের অফিস। প্রতি সিন্ডিকেটে জনা দশেক ছেলে।
তবে সিন্ডিকেটের এক চাঁইয়ের কথায়, ‘‘আমরা ঠিক দামেই ইমারতি জিনিস সরবরাহ করি। গুণমান বজায় রেখেই। কেউ মিথ্যে অভিযোগ করলে কিছু করার নেই।’’ সিন্ডিকেট-দৌরাত্ম্যের অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন স্থানীয় বিধায়ক দিলীপ মণ্ডলও। তাঁর দাবি, ‘‘স্থানীয় ছেলেরা সুস্থ পরিবেশেই ব্যবসা চালাচ্ছে। এতে অসুবিধা কোথায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy