ইন্দ্র ভান।—নিজস্ব চিত্র।
দিল্লিগামী ফরাক্কা এক্সপ্রেস শুক্রবার সন্ধ্যায় মালদহ স্টেশন ছাড়তেই বাতানুকূল কামরায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে চলন্ত ট্রেনেই মারা গিয়েছিলেন ইন্দ্র ভান (৪০) নামে এক যাত্রী।
ছুরিতে ছিন্ন ভিন্ন হয়ে গিয়েছিল ইন্দ্র ভানের সহ-যাত্রী উমেশ শর্মার হাত-পা-পিঠ। আশঙ্কাজনক অবস্থায় রাতেই তাঁকে ভর্তি করা হয়েছিল মালদহের বৈষ্ণবনগরের এনটিপিসি হাসপাতালে।
তবে, রেল পুলিশের দাবি, মালদহের কালিয়াচক থানার জামিরঘাটা স্টেশনের কাছে দুষ্কৃতীরা গুলিটা চালিয়ে ছিল ব্যবসায়ী উমেশবাবুকে লক্ষ্য করেই। কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ইন্দ্র ভানের পেটে লাগে। কামরার মধ্যেই লুটিয়ে পড়েন তিনি।
তাঁর বাড়ি দিল্লির আকবর নগরে। বালুরঘাটের জহর নবোদয় হাই স্কুলের হিন্দি বিভাগের শিক্ষক ইন্দ্র ভান বালুরঘাটের একটি মেসে থকতেন। তাঁর সন্তানসম্ভবা স্ত্রীকে দেখতে মালদহ থেকে ওই দিন দিল্লি রওনা হয়েছিলেন তিনি।
জখম ব্যবসায়ী উমেশ শর্মা বিহারের বক্সারপুরের বাসিন্দা। রেল পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে কাপড়ের কারবার রয়েছে তাঁর। মালদহ জিআরপির এক কর্তা অবশ্য দাবি করেন, ওই ব্যবসায়ী চোরাই সোনার ব্যবসাও করেন।
ওই কামরার অন্য এক যাত্রী রাজেন্দ্র কুমার অবশ্য বলছেন, ‘‘মালদহ ছেড়ে গৌড় স্টেশন পেরোতেই যাত্রীদের কাছ থেকে লুঠপাট শুরু করে ওই দুষ্কৃতীরা। উমেশ বর্মার গলায় ছুরি ঠেকিয়ে টাকার ব্যাগ হাতানোর চেষ্টা করতেই বাধা দিয়েছিলেন ওই যাত্রী। গুলিটা চলেছিল ঠিক তখনই। তবে তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে লাগে ইন্দ্র ভানের।’’
এর পরেই উমেশকে ক্রমান্বয়ে ছুরি মারতে থাকে দুষ্কৃতীরা। তার পর কালতিপুরের কাছে চেন টেনে নেমে পড়ে ট্রেন থেকে।
ট্রেনের বি-২ কামরার সমস্ত যাত্রী আতঙ্কে ওই কামরা ছেড়ে গিয়ে আশ্রয় নেন পাশের কামরায়।
রাত ৮টা ২০ নাগাদ নিউ ফরাক্কা স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালে ছুটে আসে পুলিশ ও রেলের কর্তারা।
আহতদের নিয়ে যাওয়া হয় এনটিপিসি-র হাসপাতালে।
ওই শিক্ষকের সহকর্মী মুকেশ সিংহও ছিলেন কামরায়। তিনি বলেন, ‘‘আমরা ফরাক্কা এক্সেপ্রেসের একই কামরায় ছিলাম। মালদহ টাউন স্টেশন থেকে ৭টা ১০ মিনিটে ট্রেনটি ছাড়ে। মিনিট কুড়ি পর সাত-আট জনের একটি দল পাশের কামরা থেকে আমাদের কামরায় ঢোকে। আমাদের কামরায় বসে থাকা এক ব্যক্তির সঙ্গে তাদের বচসা শুরু হয়। তখনই গুলি চালায় তারা। গুলিটা ছিটকে গিয়ে লাগে ইন্দ্রর শরীরে।’’
যাত্রীরা জানান, বাতানুকুল ওই কামরায় কোনও পুলিশ কর্মী ছিলেন না। ট্রেন ছাড়ার পরে টিকিট পরীক্ষককেও দেখা যায়নি কামরায়।
এই ডাকাতির ঘটনার জেরে জেলা পুলিশ এবং রেল সুরক্ষা বাহিনীর পারস্পারিক আকচাআকচিও সামনে এসে পড়েছে।
এ দিন রেল সুরক্ষা বিভাগের (আর পি এফ) মালদহের কমান্ডার এস এস তিওয়ারি তাঁর ক্ষোভ উগড়ে দেন রাজ্য পুলিশের বিরুদ্ধে। বলেন, ‘‘এলাকায় স্থানীয় দুষ্কৃতীরা প্রায়ই ট্রেনে তাণ্ডব চালাচ্ছে। অথচ স্থানীয় পুলিশের কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। মালদহের পুলিশ প্রশাসনও হাত গুটিয়ে বসে রয়েছে।’’ জেলা পুলিশ বা প্রশাসনের কেউ অবশ্য এ নিয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy