Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

মিড-ডে মিলেই ওদের পুষ্টি, স্কুল ছুটিতে খাবার পাবে কোথায়?

স্কুলে গেলে পেট যেটুকু ভরত, ছুটি তা ভরাতে পারবে না। এই অবস্থায় ছুটি চলাকালীন মিড-ডে মিল চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে।

মিড-ডে মিলের লাইনে—ফাইল চিত্র।

মিড-ডে মিলের লাইনে—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ০৪ মে ২০১৯ ০৪:১৩
Share: Save:

ভয়াল ঘূর্ণিঝড় আর প্রচণ্ড দহনের দরুন স্কুলে প্রায় দু’মাসের ছুটি নিয়ে বিতর্ক শেষ হতে গিয়েও শেষ হল না।

পড়ুয়াহীন স্কুলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা কেন যাবেন, নতুন বন্দোবস্তে সেই প্রশ্নের সুরাহা হলেও এই অতিদীর্ঘ ছুটি কেন, সেই প্রশ্নকে ঘিরে বিতর্ক বহাল। শিক্ষা শিবিরের বক্তব্য, প্রায় দু’মাসের টানা ছুটির ফলে পাঠ্যক্রম শেষ করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। তাতে আখেরে ক্ষতি ছাত্রছাত্রীদেরই। আরও একটি দিক থেকে সমূহ ক্ষতি পড়ুয়াদের সেই অংশের, যাদের পুষ্টি মিড-ডে মিলের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। ছুটি মিললেও ওই সময়ে তারা দুপুরের খাবার পাবে না। স্কুলে গেলে পেট যেটুকু ভরত, ছুটি তা ভরাতে পারবে না। এই অবস্থায় ছুটি চলাকালীন মিড-ডে মিল চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তাবও দেওয়া হচ্ছে। কিন্তু সেটা সম্ভব হবে কি না, থেকেই যাচ্ছে প্রশ্ন।

সরকারি ও সরকারি সাহায্যপ্রাপ্ত স্কুলগুলি মূলত বাংলা মাধ্যমের। ওই সব স্কুলে সাধারণ ঘরের ছেলেমেয়েরা পড়তে আসে। অনেক পড়ুয়াই আসে দারিদ্রসীমার নীচের পরিবার থেকে। মিড-ডে মিলের মাধ্যমেই তারা কিছুটা পুষ্টি পায়। প্রতীচী ট্রাস্টের রিসার্চ কো-অর্ডিনেটর এবং ফেলো সাবির আহমেদ বলেন, ‘‘এই স্কুল বন্ধের সময় পড়ুয়াদের মিড-ডে মিল দেওয়ার বন্দোবস্ত করা দরকার। সরকার চাইলে তা পারে।’’ তাঁর বক্তব্য, ওই পড়ুয়াদের স্কুলের বাইরে রাখলে ওদের পড়াশোনা এগোয় না। কারণ ওদের অনেকেই প্রথম প্রজন্মের পড়ুয়া। বাড়িতে পড়া দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নেই। ওরা যা শেখে, স্কুলেই শেখে। তাই স্কুল থেকে এত দিন দূরে রাখলে ওদের পঠনপাঠন ভীষণ ভাবে বিঘ্নিত হবে। অনেক অভিভাবক ওদের বাড়িতে বসিয়ে না-রেখে বিভিন্ন কাজে পাঠিয়ে দিতে পারেন।

সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সৌগত বসু বলেন, ‘‘এত দিন স্কুল ছুটি থাকলে পড়ুয়াদের মধ্যে স্কুল সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব তৈরি হয়।’’ কলেজিয়াম অব অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমাস্টার্স অ্যান্ড হেডমিস্ট্রেসেসের সম্পাদক সৌদীপ্ত দাস বলেন, ‘‘শিক্ষার অধিকার আইন, ধারাবাহিক সামগ্রিক মূল্যায়ন, শিক্ষণ দিবস— সব কিছুকে ঢেকে দিল এই অদ্ভুত সিদ্ধান্ত! মিড-ডে মিলের উপরে এখনও অনেক পড়ুয়ারই এক বেলা পেট পুরে খাওয়া নির্ভর করে। জানি না, এই সব আদেশনামা জারির সময় আধিকারিকদের সেটা আদৌ মনে থাকছে কি না।’’ বঙ্গীয় শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতির নেতা স্বপন মণ্ডল মনে করেন, ৮ জুনের পরে স্কুল খুলে দেওয়া উচিত। পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতির নেতা নবকুমার কর্মকারের বক্তব্য, এত দীর্ঘ ছুটির ফলে পাঠ্যক্রম শেষ করা মুশকিল। মাধ্যমিক শিক্ষা ও শিক্ষাকর্মী সমিতির অনিমেষ হালদার জানান, এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তাঁদের সংগঠন সব জেলা স্কুল পরিদর্শকের দফতরে বিক্ষোভ দেখাবে।

শুক্রবার স্কুলশিক্ষা দফতরের নতুন নির্দেশিকায় জানানো হয়েছে, শুধু ক্লাস বন্ধ নয়, এই দু’মাস স্কুলই পুরোপুরি বন্ধ থাকবে। বৃহস্পতিবার শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেছিলেন, অতিরিক্ত ছুটি শুধু ছাত্রছাত্রীদের জন্য, ওই সময়ে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের স্কুলে যেতে হবে। এ দিন সুর বদলে পার্থবাবুর ব্যাখ্যা, স্কুল সম্পূর্ণ বন্ধ। তাই ছাত্রছাত্রী বা শিক্ষক, কাউকেই আসতে হবে না।

নতুন নির্দেশে এই দু’মাসের ছুটিকে তিন ভাগে ভাগ করে বোঝানো হয়েছে। প্রথমত, ঘূর্ণিঝড় ফণীর জন্য শুক্র ও শনিবার ছুটি। দ্বিতীয়ত, ভয়ঙ্কর গ্রীষ্মতাপের জন্য সোমবার থেকে শুরু করে বাড়তি ছুটি গরমের ছুটির শুরু পর্যন্ত। ২০ মে থেকে চলবে গরমের ছুটি। তৃতীয়ত, গরমের ছুটি শেষ হলে প্রলম্বিত গরমের জন্য আবার ছুটি ৩০ জুন পর্যন্ত। এমনিতে গরমের ছুটি চলার কথা ছিল ৮ জুন পর্যন্ত। আগে খুব গরম হলে দুপুরের ক্লাস সকালের দিকে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হত। কিন্তু তাতে অনেক স্কুলে সকালে প্রাথমিক বিভাগের ক্লাসের অসুবিধা হত। তাই সম্পূর্ণ ছুটির সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে স্কুলশিক্ষা দফতর সূত্রের খবর, গরমের ছুটি শেষে ছুটি বাড়িয়ে ৩০ জুন পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাওয়া হবে কি না, সেটা পুনর্বিবেচনা করা হবে। তবে গরমের ছুটি ছাড়া অতিরিক্ত যে-সব দিনে সরকার ক্লাস বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত বৃহস্পতিবার নিয়েছিল, সেই দিনগুলিতে শিক্ষক-শিক্ষিকাদের আসতে হবে বলে জানিয়েছিলেন শিক্ষামন্ত্রী। কিন্তু এ দিনের নতুন নির্দেশিকায় ক্লাস বন্ধের বদলে স্কুল বন্ধের কথা বলা হয়েছে। শিক্ষামন্ত্রীও এ দিন বলেন, ‘‘স্কুলই তো বন্ধ। শিক্ষকেরা আর আসবেন কেন?’’

শিক্ষামন্ত্রীর এই মন্তব্যের পরেই বিতর্ক আরও জাঁকিয়ে বসেছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE