Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
State News

পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে পেটে গুলি, ভদ্রেশ্বরে খুন পুর চেয়ারম্যান

ভদ্রেশ্বরের গেটবাজার এলাকায় রয়েছে স্থানীয় তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। গত রাতে সেখান থেকেই এক দলীয় কর্মীর মোটরবাইকে চেপে বাড়ি ফিরছিলেন মনোজবাবু। গেটবাজার এলাকাতেই মনোজবাবুর বাড়ি থেকে কয়েক পা দূরে তাঁদের ঘিরে ফেলে জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী।

মনোজ উপাধ্যায়।

মনোজ উপাধ্যায়।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ভদ্রেশ্বর শেষ আপডেট: ২২ নভেম্বর ২০১৭ ০৯:৫৭
Share: Save:

রাত তখন সওয়া ১১টা হবে। বাড়ি যাবেন বলে রোজকার মতো মঙ্গলবারও ক্লাব থেকে বেরিয়ে এক সতীর্থের বাইকে উঠেছিলেন ভদ্রেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যান মনোজ উপাধ্যায়। বাইকের চাকা কয়েক পাক ঘুরতেই পিছন থেকে ডাক আসে। ভেবেছিলেন, কোনও সমস্যা নিয়েই হয়তো এলাকার কেউ কথা বলতে চান। কিন্তু, সেই ডাকে দাঁড়িয়েই গুলি খেয়ে খুন হতে হল মনোজকে!

পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে বছর পঁয়তাল্লিশের মনোজকে পর পর ছ’টি গুলি করা হয়। সেই গুলি তাঁর পেটে-পিঠে-বুকে বিঁধে যায়। ময়নাতদন্তের সময় তাঁর শরীরে যে ক’টি ক্ষত দেখা গিয়েছে, তার সঙ্গে গুলির সংখ্যা মিলছে না বলে বুধবার সকাল পর্যন্ত চন্দননগর হাসপাতালে মনোজের দেহ স্ক্যান করে পরীক্ষা করেন চিকিৎসকেরা।

কিন্তু, কে বা কারা এ ভাবে খুন করল তৃণমূল পরিচালিত ওই পুরসভার চেয়ারম্যানকে?

এ দিন ভদ্রেশ্বরে গিয়ে রাজ্যের পুর-নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘কে খুন করল বা কেন খুন করা হল তা এখনই বলা সম্ভব নয়। তদন্ত চলছে। তবে বিজেপি এ রাজ্যে যে ভাবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কর্মীদের উপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে পরিস্থিতি খারাপ জায়গায় যাচ্ছে।’’ তবে এই ঘটনার সঙ্গে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কোনও সম্পর্ক নেই বলেই দাবি মন্ত্রীর।

মনোজবাবুর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করে হুগলি জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের মন্ত্রী তপন দাশগুপ্ত বলেন, “মনোজের মতো এত ভাল ছেলের যদি শত্রু থাকতে পারে আর ওঁকেও গুলি খেয়ে মরতে হয়, তবে আমাদেরও যে কোনও সময় গুলি খেয়ে মরতে হতে পারে।” তবে এই হামলার পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব মানতে নারাজ তপনবাবু। তিনি বলেন, “যারাই এই ঘটনার পিছনে থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

ভাল মানুষ হিসাবে সেখানে যথেষ্ট সুনাম মনোজের। কিন্তু, এলাকায় কান পাতলে অন্য কথা শোনা যাচ্ছে। গুঞ্জন, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের জন্যই খুন হতে হয়েছে চেয়ারম্যানকে। কিন্তু, কেন? তার ব্যাখ্যাও মিলেছে। এলাকায় নাকি তোলাবাজির সঙ্গে জড়িত দলীয় কর্মী-সমর্থকদের একাংশ। সেই ঘটনাতেই বাধা দিতে চেয়েছিলেন মনোজ। স্পষ্ট ভাবে সে কথা জানিয়েও দিয়েছিলেন। এলাকাবাসীর একাংশের দাবি, এই কারণেই মনোজকে ‘সরিয়ে দেওয়া’ হতে পারে। মনোজ খুনের ঘটনায় পাঁচ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এলাকায় তারা প্রত্যেকেই তৃণমূলের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা দুষ্কৃতী হিসাবেই পরিচিত। যদিও তৃণমূল তা অস্বীকার করেছে।

আরও পড়ুন
দাদাকে যেতে দিন, ভিড়কে আর্জি দীপার
শীতের শুরু? এক ধাক্কায় ৫ ডিগ্রি নামল কলকাতার তাপমাত্রা

বছরখানেক আগেও এক বার প্রাণনাশের চেষ্টা হয়েছিল মনোজের। সে বার কোনও রকমে বেঁচে গিয়েছিলেন। কিন্তু এ বার আর সে সুযোগ পেলেন না তিনি। পুলিশ জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত পৌনে ১১টা নাগাদ তাঁর উপর হামলা চালায় জনা পাঁচেক দুষ্কৃতী। যাঁর বাইকে উঠেছিলেন মনোজ, সেই যুবক পুলিশের কাছে কী জানিয়েছেন? ওই যুবকের দাবি, বাইকে ওঠা পরই কেউ চেয়ারম্যানকে পিছন থেকে ডাকে। মনোজ সেই সময় নেমে কথা বলছিলেন। প্রথমে তাঁরা ভেবেছিলেন, এলাকার পরিষেবা সংক্রান্ত কোনও অভিযোগ নিয়েই কথা বলতে চাইছেন ওঁরা। কিন্তু যে উত্তেজিত ভঙ্গিতে কথা হচ্ছিল, তাতে সন্দেহ হয় ওই যুবকের। এর পর তিনি দৌড়ে ক্লাবে পরিচিতদের ডাকতে যান। ঠিক তখনই বাইরে পর পর গুলির আওয়াজ পাওয়া যায়। ক্লাবের ছেলেরা বাইরে এসে দেখেন, রাস্তার উপর লুটিয়ে রয়েছেন মনোজ। রক্তে ভেসে যাচ্ছে চারপাশ। তাঁর বুকে ও পেটে গুলি করা হয়েছে।

দুষ্কৃতীরা তত ক্ষণে সেখান থেকে পালিয়েছে। ক্লাবের ছেলেরা মনোজবাবুর দেহ চন্দননগর হাসপাতালে নিয়ে যান। খবর দেওয়া হয় ভদ্রেশ্বর থানার পুলিশকে। পুলিশ জানিয়েছে, রাতেই মৃতদেহের ময়নাতদন্ত করা হয়। কিন্তু, সব ক’টি গুলি তখন শরীরে মেলেনি। ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ওই দলীয় কর্মীর বয়ানের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE