অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কংগ্রেসের কি সংঘবদ্ধ হওয়া সম্ভব ছিল না? প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্যে ইঙ্গিত সে রকমই। —ফাইল চিত্র।
বাংলার কংগ্রেসে সবাই যে অত্যন্ত খুশি ছিলেন অধীর চৌধুরীকে নিয়ে, তা নয়। অধীরের কট্টরপন্থা সাধারণ কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয় ছিল ঠিকই। কিন্তু দশকের পর দশক ধরে নানা উপদলে বিভক্ত থাকতে অভ্যস্ত হয়ে পড়া পশ্চিমবঙ্গ প্রদেশ কংগ্রেসের মাথায় বেশি দিন টিকে থাকা খুব একটা সহজ নয়। শুধু কর্মীদের মধ্যে জনপ্রিয় হলে চলে না। সব গোষ্ঠীর মন জুগিয়ে চলাও জরুরি। সে চেষ্টা অধীর চৌধুরী বিন্দুমাত্র করেননি। ফলে অধীরের অপসারণে যে অনেকেই খুশি, প্রতিক্রিয়াতেই তার প্রমাণ মিলতে শুরু করেছে।
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদে নির্বাচিত হওয়ার খবর পেয়ে সোমেন মিত্র বলেছেন, তাঁর প্রথম কাজ হবে দলকে শক্তিশালী করা। যে কেউ এই মন্তব্যই করবেন। অভ্যন্তরীণ কোন্দলে বহুধাবিভক্ত হয়ে থাকা কংগ্রেসের নতুন সভাপতি মনোনীত হওয়ার পরে এর চেয়ে সংযত মন্তব্য আর কিছু হতেই পারে না। কিন্তু বিধান ভবনে অধীর ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিতরা বলছেন, সোমেন মিত্র দুঁদে নেতা, তাঁর কাছ থেকে হালকা মন্তব্য আশা করাই বৃথা। নিজে কিছু বলবেন না তিনি, যা বলার, তাঁর ঘনিষ্ঠরা বলবেন।
যাঁকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে অধীরকে ওই পদে বসানো হয়েছিল, সেই প্রদীপ ভট্টাচার্য দীর্ঘ দিন ধরেই সোমেন ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। অধীরের সঙ্গে প্রদীপের সম্পর্ক কতটা ‘মধুর’, সে কথাও কংগ্রেসে সকলেই জানেন। অধীরকে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি পদ থেকে সরানোর জন্য খোদ রাহুলের কাছে দরবার করেছিলেন প্রদীপ, জানা গিয়েছিল কংগ্রেস সূত্রেই। আবার প্রদীপ ভট্টাচার্যকে রাজ্যসভার টিকিট দিতে অধীর মোটেই রাজি ছিলেন না, এমন কথাও বিধান ভবনে কান পাতলেই শোনা যায়।
আরও পড়ুন
অপসারিত অধীর, প্রদেশ কংগ্রেসের নয়া সভাপতি সোমেন মিত্র
অধীরের অপসারণের পরে তাই প্রদীপের প্রতিক্রিয়া বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ। কী বললেন প্রদেশ কংগ্রেসের কো-অর্নিনেশন কমিটির নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান? বললেন, ‘‘দলটাকে সংঘবদ্ধ করা সর্বাগ্রে জরুরি। দল একেবারেই সংঘবদ্ধ ছিল না। ফলে আমাদের শক্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছিল।’’
কেন সংঘবদ্ধ হচ্ছিল না দল? অধীর চৌধুরীর জন্য? সরাসরি তেমন কোনও মন্তব্য করলেন না প্রদীপ। বললেন, ‘‘এক জনকে সরিয়ে আর এক জনকে সভাপতি করা মানে এই নয় যে, আগের জন কিছুই করেননি। এক জন বড়, আর এক জন ছোট, এ রকম নয়। অধীর চৌধুরীও নিশ্চয়ই কিছু কাজ করেছেন। কিন্তু কংগ্রেসে নির্দিষ্ট সময় অন্তর সভাপতি বদল হয়েই থাকে। তাই এতে অস্বাভাবিকরতার কিছু নেই।’’
কিন্তু দলের সংঘবদ্ধতা নিয়ে প্রশ্ন তা হলে উঠল কেন? অধীর চৌধুরীর নেতৃত্বে কি সংঘবদ্ধ হওয়া সম্ভব ছিল না? প্রদীপ ভট্টাচার্যের মন্তব্যে ইঙ্গিত কিন্তু সে রকমই। বললেন, ‘‘দলে সবার গুরুত্ব রয়েছে। অধীরের যেমন গুরুত্ব রয়েছে, তেমন আবু হাসেম খান চৌধুরীরও গুরুত্ব রয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হয়। কো-অর্ডিনেশন কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবে এ বার আমি সেই কাজটাই করব।’’
আরও পড়ুন
নিয়োগে ‘না’! তবু ওই দুই শিক্ষককে কেন ডাকল স্কুল? রহস্য বাড়ছে ইসলামপুরে
অর্থাৎ, গোটা করে না বললেও, প্রদীপ বুঝিয়ে দিলেন, অধীরের রাজত্বে সবাই গুরুত্ব পাচ্ছিলেন না, সবাইকে নিয়ে চলার কথা ভাবা হচ্ছিল না। কংগ্রেসি রাজনীতির সঙ্গে যাঁরা দীর্ঘ দিন রয়েছেন, তাঁরা বলছেন, এই কথাগুলো শুধু প্রদীপ ভট্টাচার্যের কথা নয়। এগুলো সোমেন মিত্রেরও কথা। কিন্তু সদ্য সভাপতি পদে আসা সোমেন নিজে কথাগুলো বললেন না। বার্তা দিতে চাইলেন যে, তিনি সব কোন্দলের ঊর্ধ্বে। তবে বিশ্বস্ত অনুগামীকে দিয়ে কথাগুলো বলিয়ে নিলেন। বুঝিয়ে দিতে চাইলেন, অধীরের চার বছরের সভাপতিত্বেই যে কংগ্রেস এ রাজ্যে বেহাল হয়েছে। নতুন সভাপতির কাজটা তাই অনেক কঠিন।
(বাংলার রাজনীতি, বাংলার শিক্ষা, বাংলার অর্থনীতি, বাংলার সংস্কৃতি, বাংলার স্বাস্থ্য, বাংলার আবহাওয়া - পশ্চিমবঙ্গের সব টাটকা খবর আমাদের রাজ্য বিভাগে।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy