Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

বিষ্ঠা-আক্রান্ত ডাক্তারকেই শোকজ-চিঠি

ডাক্তারদের বড় অংশেরই বক্তব্য, সরকার হাসপাতালে পরিকাঠামো দিতে পারছে না, ডাক্তার দিতে পারছে না, নিরাপত্তা দিতে পারছে না। উল্টে চিকিৎসকদের বলির পাঁঠা করছে। সরকারি চাকরিতে এর পর আর ডাক্তাররা আসতেই চাইবেন না।

শো-কজের চিঠি।

শো-কজের চিঠি।

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অক্টোবর ২০১৭ ০৩:৩৪
Share: Save:

তাঁকে বেধড়ক মেরে বিষ্ঠা মাখিয়ে দিয়েছিল হামলাকারীরা। ডেবরা হাসপাতালের সেই ঘটনায় নিগৃহীত চিকিৎসককেই উল্টে শো-কজের নোটিস ধরাল স্বাস্থ্য দফতর!

অগস্ট মাসে পশ্চিম মেদিনীপুরের ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে আলপনা পাত্র নামে এক প্রসূতিকে অন্যত্র রেফার করা নিয়ে গোলমাল বাধে। থামাতে গেলে ব্লক মেডিক্যাল স্বাস্থ্য অধিকর্তা (বিএমওএইচ) রজত পালের উপরে হামলা হয়। হামলাকারীরা তাঁকে শৌচাগারে নিয়ে গিয়ে শরীরে বিষ্ঠা মাখিয়ে দেয়। ওই ঘটনার নিন্দায় ফেটে পড়েছিলেন চিকিৎসক-সহ সর্বস্তরের মানুষ। দোষীদের শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী।

কিন্তু কালীপুজোর সন্ধ্যায় শো কজের নোটিস হাতে পেয়ে স্তম্ভিত রজতবাবু। ক্ষুব্ধ চিকিৎসক মহলও। ডাক্তারদের বড় অংশেরই বক্তব্য, সরকার হাসপাতালে পরিকাঠামো দিতে পারছে না, ডাক্তার দিতে পারছে না, নিরাপত্তা দিতে পারছে না। উল্টে চিকিৎসকদের বলির পাঁঠা করছে। সরকারি চাকরিতে এর পর আর ডাক্তাররা আসতেই চাইবেন না।

ডক্টর্স ফোরামের সভাপতি রেজাউল করিম অভিযোগ করেন, ‘‘দোষীরা জামিন পেয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর আক্রান্ত চিকিৎসককে দোষী বানানো হচ্ছে।’’ অ্যাসোসিয়েশন অব হেলথ সার্ভিস ডক্টর্স-এর তরফে চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘কিছু স্বাস্থ্যকর্তা দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে নিচুতলার চিকিৎসক কর্তাদের ঘাড়ে বন্দুক রাখছেন।’’

রজতবাবু বুধবার তাঁর লিখিত জবাব পাঠিয়ে দিয়েছেন। পরে তাঁর বিহ্বল মন্তব্য, ‘‘পুরো ঘটনাটাই স্বাস্থ্য দফতরের ব্যর্থতার ফল, কিন্তু শূলে চড়ানো হচ্ছে আমাকে!’’ ১২ অক্টোবর তারিখে লেখা শো–কজ নোটিসে তাঁকেই কার্যত কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে। অভিযোগ করা হয়েছে— প্রসূতির চিকিৎসার ক্ষেত্রে তিনি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেননি। কেন এর জন্য তাঁর বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের ব্যবস্থা নেওয়া হবে না তার ব্যাখ্যা চেয়েছে স্বাস্থ্য দফতর।

রজতবাবুর কথায়, ‘‘বার-বার বলার পরেও সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে কোনও সুপার দেওয়া হয়নি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এত বড় ব্লকের জনস্বাস্থ্য, প্রসূতি-স্বাস্থ্যের পুরো দায়িত্ব আমার। সে সব করব নাকি রাতদিন হাসপাতালে ডাক্তারদের উপর নজরদারি করব? তবু রাতে গোলমালের খবর পেয়ে কোয়ার্টার থেকে ছুটে গিয়েছিলাম। তখনই আক্রান্ত হই। তাতে আমাকেই দোষের ভাগী হতে হল?’’

ডেবরার ঘটনায় চিকিৎসক মহলের সম্মিলিত প্রতিবাদ ও ক্ষোভের মুখে পড়ে ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের ঘোর তৃণমূল প্রভাবিত রাজ্য শাখাও রজতবাবুর পাশে দাঁড়িয়েছিল। শো কজের ঘটনায় তারাও অস্বস্তিতে। সংগঠনের তরফে শান্তনু সেন এখন বলছেন, ‘‘ভাল করে বিষয়টি না জেনে মন্তব্য করতে পারব না।’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা মুখ্য স্বাস্থ্যঅধিকর্তা গিরিশচন্দ্র বেরাও দাবি করেন, ‘‘বিএমওএইচের কোনও দোষ ছিল না। বিএমওএইচ তো প্রশাসনিক ব্যাপার দেখবেন, ডাক্তারেরা কোথায় কাকে রেফার করছে সেটা তাঁর দেখার কথা নয়।’’

স্বাস্থ্য অধিকর্তা বিশ্বরঞ্জন শতপথীর অবশ্য যুক্তি, ‘‘অধস্তন কেউ অন্যায় করলে ঊর্ধ্বতন কর্তাকে শো-কজ করা যায়।’’ তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়, সুপার স্পেশ্যালিটি হওয়া সত্ত্বেও ডেবরা হাসপাতালে সুপার নেই, ডাক্তার কম, ওটি-ও কার্যকর ছিল না। সে সব দেওয়ার দায়িত্ব তো সরকারের। এক জন বিএমওএইচের পক্ষে কি সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের দেখাশোনা করা সম্ভব? শতপথী বলেন, ‘‘প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলে ডেবরা সুপার স্পেশ্যালিটির কাজ বিএমওএইচকেই দেখতে বলা হয়েছিল। এমন কিছু কাজ নয়।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Doctor letter Show Cause Letter
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE