খাগড়াগড়ে এই বাড়িতেই বিস্ফোরণ হয়েছিল। ফাইল চিত্র।
সপরিবার ছুটিতে যাওয়ার কথা ছিল বোমার কারিগরদের। কিন্তু যাওয়ার আগে বিপুল পরিমাণ বোমা তাদের তৈরি করে দিয়ে যেতে হবে, এমনটাই বলা হয়েছিল। মানে, এক দিনে তারা যে ক’টা তৈরি করতে পারে, তার দ্বিগুণ তৈরি করতে হবে। আর ওই তাড়াহুড়়োর জন্যই খাগড়াগড়ে বিস্ফোরণ ঘটে বলে মনে করেন গোয়েন্দারা।
কিন্তু ওই ব্যস্ততার কী কারণ ছিল? অল্প সময়ের মধ্যে এত বোমাই বা তৈরি করতে বলা হয়েছিল কেন? কোথায় পাঠানোর কথা ছিল সে সব?
আরও পড়ুন: অবসাদের তিমি দমনে স্কুলে এ বার মনোবিদ
আজ, ২ অক্টোবর খাগড়াগড়ের সেই বিস্ফোরণের তিন বছর পূর্ণ হলো। অথচ সেই সব প্রশ্নের উত্তর এখনও মিলল না। কারণ, ছুটিতে যাওয়ার আগে বিপুল পরিমাণ বোমা বানাতেই হবে— এমন নির্দেশ যে দিয়েছিল, সেই কওসর ওরফে জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে আজও ধরা যায়নি। খাগড়াগড় মামলার বিচার শুরু হয়েছে, কিন্তু মূল চক্রী কওসরের ধরা না-পড়া এখনও গলার কাঁটা হয়ে বিঁধছে জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা বা এনআইএ-র গোয়েন্দাদের।
গোয়েন্দাদের একটি সূত্রের খবর, শেষ পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এই রাজ্যে মুর্শিদাবাদের ধুলিয়ান ও পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডের পাকুড়— এই ১৫ কিলোমিটারের মধ্যে তার গতিবিধির খবর পাওয়া গিয়েছে। ব্যস ওইটুকুই। তার টিকিটি ছোঁয়া যায়নি। কওসরের মায়ানমারে চলে যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একটি অংশ।
জুলাইয়ে ঢাকায় গিয়ে এনআইএ-র অফিসাররা কথা বলে আসেন এই মামলার আর এক প্রধান অভিযুক্ত হাতকাটা নাসিরুল্লা ওরফে সোহেল মেহফুজের সঙ্গে। এনআইএ-র একটি সূত্রে জানা যাচ্ছে, বোমারু মিজানের ব্যাপারে তাকে প্রশ্ন করা হলে নাসিরুল্লা তির্যক ভঙ্গিতে বলে, অত বড় নেতার খবর সে রাখে না। গোয়েন্দাদের মতে, জঙ্গি সংগঠন জামাতুল মুজাহিদিন বাংলাদেশ (জেএমবি)-এ কওসর, সাজিদ, সালাউদ্দিন সালেহিনদের ক্রমশ গুরুত্ব বেড়ে যাওয়ার ফলে হতাশগ্রস্ত নাসিরুল্লা নব্য জেএমবি বা আইএস-প্রভাবিত জেএমবি-তে যোগ দেয়।
এক গোয়েন্দা কর্তার বক্তব্য, কওসর কেবল মামলার অন্যতম প্রধান অভিযুক্ত নয়, সে-ই মূল চক্রী। কারণ, খাগড়াগড়ে হাসান চৌধুরীর ওই বাড়ির দোতলাটি সে-ই বোরখা তৈরির কথা বলে ভাড়া নিয়েছিল। পরে ধীরে ধীরে শাকিল, হাকিম, করিমরা ওই বাড়িতে ঘাঁটি গাড়ে। পরে কওসর ওই বাড়ি ছেড়ে দিলেও নিয়মিত একটি লাল মোটর সাইকেলে চড়ে সেখানে গিয়ে বোমা নিয়ে আসত। কিন্তু বোমা সে কোথায় পৌঁছে দিত? ঘটনার সময়ে এই রাজ্যে জেএমবি-র প্রধান ছিল সাজিদ ওরফে মাসুদ রানা। সাজিদকে এই নিয়ে গোয়েন্দারা জিজ্ঞেস করলে সে বলেছিল, সব জানে ‘কওসর ভাই’।
গোয়েন্দারা জেনেছেন, ২০১৪-র ফেব্রুয়ারিতে কওসর এই রাজ্যে ঢোকার পর জেএমবি-র কার্যকলাপে গতি আসে। সে বছর ময়মনসিংহের ত্রিশালে প্রিজন ভ্যানে হামলা চালিয়ে মুক্ত করা হয়েছিল কওসরকে।
এক তদন্তকারী অফিসার বলেন, ‘‘বোমা বানানোয় কওসর যে রকম পটু, তাতে সে অধরা মানে নাশকতার আশঙ্কা থেকেই যায়।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy