লালবাজারে বৈঠকের পরে মুকুল, দিলীপেরা। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক
আবহ ‘সৌজন্যে’র। শর্তও নমনীয়। এমনকি, প্রশাসনিক সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনা করতেও খুব একটা নারাজ নন বিজেপি নেতৃত্ব। লালবাজারে বৃহস্পতিবার প্রশাসনের শীর্ষ কর্তাদের সঙ্গে বিজেপি নেতাদের আদালত নির্দেশিত বৈঠকের নির্যাস এমনই। ওই বৈঠকে বিজেপি নেতারা আরও জানিয়েছেন, তাঁদের প্রস্তাবিত যাত্রায় কোনও ধর্মীয় কর্মসূচিও থাকবে না। এটা কোনও রথযাত্রাও নয়, নিছকই রাজনৈতিক কর্মসূচি, যার পোশাকি নাম ‘গণতন্ত্র বাঁচাও’ যাত্রা।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ আগে জানিয়েছিলেন, রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে, স্বরাষ্ট্রসচিব অত্রি ভট্টাচার্য এবং ডিজি বীরেন্দ্রর সঙ্গে বৈঠকে যাবেন জাতীয় কর্মসমিতির সদস্য মুকুল রায়, রাজ্য দলের সহ-সভাপতি জয়প্রকাশ মজুমদার এবং সাধারণ সম্পাদক প্রতাপ বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু শেষ মুহূর্তে সিদ্ধান্ত বদলে বিজেপি-র তরফে নবান্নে বার্তা পাঠানো হয়, লালবাজারে ওই বৈঠকে যাবেন দিলীপবাবু, দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় এবং মুকুলবাবু। দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমাদের সর্বভারতীয় সভাপতি অমিত শাহের নির্দেশেই প্রতিনিধিদলে এই পরিবর্তন করা হল।’’ তবে প্রতাপবাবু এবং জয়প্রকাশবাবুও এ দিন ওই তিন জনের সঙ্গে লালবাজারে যান। বৈঠকের একেবারে শেষ দিকে তাঁদের সেখানে ডেকে নেওয়া হয়। বৈঠকের পরে দিলীপবাবু বলেন, ‘‘আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি, যাত্রাপথে কোনও বদল করব না। প্রশাসনিক কর্তারা তাঁদের বক্তব্য শনিবার জানাবেন।’’
বিজেপি সূত্রের দাবি, আগাগোড়া ভিডিও-বন্দি প্রায় আধঘণ্টার বৈঠকে প্রশাসনের তরফে জানতে চাওয়া হয়, রথযাত্রায় কোনও পরিবর্তন হবে কি না, যাত্রা চলাকালে সভাগুলিতে কত লোক হবে, কোনও ধর্মীয় কর্মসূচি ওই যাত্রায় আছে কি না এবং দিনক্ষণ পরিবর্তন করতে নেতারা রাজি আছেন কি না। প্রশাসনিক কর্তারা আরও বলেন, গঙ্গাসাগর মেলার সময় সেখানে পুলিশের একটা বড় বাহিনীকে ব্যস্ত থাকতে হবে। বিজেপি নেতারা জানান, যাত্রাপথে কোনও পরিবর্তন সম্ভব নয়। তিনটি যাত্রাই উদ্বোধন করবেন শাহ। তবে দিনক্ষণ অবশ্যই প্রশাসনের সুযোগ-সুবিধা বিবেচনা করে ঠিক করা হবে। প্রশাসনের বক্তব্য জানার পরে তাঁরা শাহ ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সভার নির্ঘণ্ট জেনে সরকারকে জানাবেন।
আরও পড়ুন: সোমেন-অধীর ঐক্যের ছবি, কানায় কানায় জমায়েত, মমতাকে তীব্র কটাক্ষ কংগ্রেসের
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব অবশ্য এ দিনই দিল্লিতে পদাধিকারী বৈঠকে রাজ্য নেতাদের জানান, জানুয়ারির মধ্যে পশ্চিমবঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর তিনটি সভা করার চেষ্টা হচ্ছে। প্রথম সভাটি হতে পারে ২৪ ডিসেম্বর। শাহও বাংলায় আসতে পারেন ২২ ডিসেম্বর ও ৫ জানুয়ারি। তবে শাহ ও মোদীর প্রস্তাবিত প্রথম দুই সভার মধ্যে মাত্র দু’দিনের ফাঁক থাকায় প্রস্তুতি নিতে অসুবিধা হবে, এই যুক্তিতে সূচি কিছুটা অদলবদল করানোর চেষ্টা করছেন বিজেপির রাজ্য নেতৃত্ব। কর্মসূচি এখনও চূড়ান্ত নয় বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণাও হয়নি।
বাংলায় প্রধানমন্ত্রীর সফর নিয়ে প্রশ্ন করা হলে বিজেপি নেতা ভূপেন্দ্র যাদব বলেন, ‘‘ওই রাজ্যে বিষয়টি এখনও বিচারাধীন। আদালতের ছাড়পত্র পেলেই সফর হবে। প্রধানমন্ত্রী ও বিজেপি সভাপতি, দু’জনেই বাংলায় যাবেন।’’ রাজ্য নেতৃত্বের সঙ্গে কথা বলে প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীর সভা এমন জায়গাতেই করা হবে, যেখানে দল দুর্বল।
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছেন, পাঁচ রাজ্যে হারের পর লোকসভায় দলের আসন বাড়ানোর জন্য তাকাতে হবে বাংলার মতো পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির দিকেই। কারণ বিজেপির মতে, বাংলায় কংগ্রেস এবং সিপিএমের এখনও যা অবস্থা, তাতে মূল লড়াই তৃণমূলের সঙ্গে বিজেপির। সেই কারণেই লোকসভার কথা মাথায় রেখে ডিসেম্বর থেকে ভোট-প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন মোদী-শাহ।
তৃণমূল অবশ্য বিজেপির এই ‘কাল্পনিক’ তত্ত্ব উড়িয়ে দিয়েছে। দলের এক শীর্ষ নেতার মন্তব্য, ‘‘স্বপ্ন দেখতে ক্ষতি কী?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy