জুলেখা
রোখা গেল না জুলেখাকে। কিন্তু দিনভর তাকে আটকে রাখল লালফিতের ফাঁস।
নিজের বিয়ে রুখে যে মেয়েটার আপন হয়েছে পর, একাই স্কুলের বায়োলজি ল্যাবে ঠাঁই নিয়ে যে তৈরি করেছিল নিজেকে, সে টপকে গেল মাধ্যমিকের বেড়া। তার এ বার আরও আরও এগিয়ে চলার পালা।
কিন্তু সে তো পরের কথা। শনিবার সব ছাত্রছাত্রী যখন স্কুলে ফল দেখে বাড়ি ফিরে গিয়েছে, জুলেখা সম্ভবত জানেই না যে পাশ করে গিয়েছে অগ্নিপরীক্ষায়। কেননা, ‘শিলায়ন’ নামে বহরমপুরের যে মেয়েদের হোমে জুলেখা এখন থাকে, শনি ও রবিবার তার অফিস বন্ধ। ফোন ধরার কেউ নেই, খবর দেওয়ারও না।
মুর্শিদাবাদের লালবাগে হাসনাবাদ টিকটিকিপাড়ায় বাড়ি জুলেখাদের। মামার বাড়িতে থেকে সে নবগ্রামের সিঙ্গার হাইস্কুলে পড়াশোনা করত। গত বছর এপ্রিলে তার বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন বাবা-মা। জুলেখা স্কুলে জানায়, প্রধান শিক্ষক খবর দেন বিডিও-কে। প্রশাসনের হস্তক্ষেপে সে বিয়ে তখনকার মতো ভেস্তে যায়। কিন্তু পরে গোপনে তার বিয়ে দেওয়া হবে, এই আশঙ্কায় বাড়ি ফিরতে চায়নি মেয়েটা। স্কুলেই তার থাকার ব্যবস্থা হয়।
আরও পড়ুন:বাঁধাধরা পড়ার ধাত নেই প্রথম বার প্রথম অন্বেষার
কিন্তু স্কুলেই তো আর সারা জীবন থাকা চলে না! মাধ্যমিকের পরে তাই জুলেখাকে বহরমপুরের হোমে পৌঁছে দিয়ে চোখের জল মুছে ফিরেছিলেন সিঙ্গার হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সঞ্জয় মণ্ডল। এ দিন তিনিই হোম সুপারের মোবাইলে ফোন করে জানান, ৩২১ পেয়েছে জুলেখা। তাকে খবর দিতে অনুরোধ করেন তিনি। জুলেখা খবর পেল কি না, যদি আদৌ পেয়ে থাকে তাতে সে কতটা খুশি, কিছুই জানা যায়নি। হোমে গিয়েও তার সঙ্গে দেখা করা যায়নি। গেটে থাকা কর্মী তাকে ডেকে দিতে রাজি হননি।
ক্লাস নাইনে স্কুল ছাড়িয়ে জুলেখার দিদির বিয়ে দিয়েছিলেন তাদের বাবা রফিকুল শেখ। এ দিন বিদ্রোহী ছোট মেয়ের মাধ্যমিক পাশের খবর শুনে তিনি বলেন, ‘‘কে জুলেখা? সে পাশ করল কি করল না, তাতে আমাদের কী আসে-যায়?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy