Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ছাত্রের অপমৃত্যুতে রহস্য, কাঠগড়ায় সেই মানসিক চাপ

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ উত্তরপাড়া ও হিন্দমোটর স্টেশনের মাঝে আপ তিন নম্বর লাইনের ধার থেকে মাথা কাটা যুবকের দেহ উদ্ধার করেছিল বেলুড় জিআরপি। শনিবার সকালে মর্গে গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন হৃষীকের বাবা।

হৃষীক কোলে

হৃষীক কোলে

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ অগস্ট ২০১৯ ০৩:২২
Share: Save:

ময়না-তদন্তের প্রাথমিক রিপোর্টেও সেন্ট জেভিয়ার্স কলেজের প্রথম বর্ষের ছাত্র হৃষীক কোলের মৃত্যুর কারণ হিসেবে আত্মহত্যার দিকেই ইঙ্গিত করা হয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, এই ঘটনার পিছনে মানসিক চাপ অনেকটাই দায়ী। ওই ছাত্রের পকেটে একটি সুইসাইড নোট মিলেছিল। তা পড়ে পুলিশের ধারণা, শহুরে আদবকায়দা এবং ইংরেজি ভাল না-জানায় কলেজে ও হস্টেলে অন্য পড়ুয়াদের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারছিলেন না হৃষীক। তাতে মানসিক চাপ বেড়েছিল। তবে শুধু এই কারণ নাকি অন্য কোনও বিষয় নিয়েও হৃষীক মানসিক উদ্বেগে ভুগছিলেন, তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ উত্তরপাড়া ও হিন্দমোটর স্টেশনের মাঝে আপ তিন নম্বর লাইনের ধার থেকে মাথা কাটা যুবকের দেহ উদ্ধার করেছিল বেলুড় জিআরপি। শনিবার সকালে মর্গে গিয়ে দেহটি শনাক্ত করেন হৃষীকের বাবা।

রেল পুলিশ সূত্রের খবর, লাইন থেকে প্রায় পাঁচ ফুট দূরে পড়ে ছিল হৃষীকের আলাদা হয়ে যাওয়া মাথা ও শরীর। সাধারণত ট্রেনের ধাক্কায় মৃত্যু হলে দেহ ছিন্নভিন্ন হয়, কিংবা শরীরে একাধিক আঘাতের চিহ্ন থাকে। কিন্তু হৃষীকের তার কিছুই ছিল না। হাওড়া-আরামবাগ লোকাল ট্রেনের চালক উত্তরপাড়া ও হিন্দমোটরের স্টেশন মাস্টারকে মেমো দিয়ে জানিয়েছিলেন এক যুবক ‘রান ওভার’ (কাটা পড়েছেন) হয়েছেন। বৃহস্পতিবার ওই দুই স্টেশনের মাঝে কাঁঠালবাগান এলাকায় রেল লাইনের ধারে হৃষীককে ঘোরাঘুরি করতে দেখেছিলেন স্থানীয়েরা। যুবকের পকেট থেকে সিঙ্গুরের টিকিট মেলায় পুলিশের অনুমান, ওই দুই স্টেশনের কোথাও একটা নেমে তিনি রেল লাইন ধরে হেঁটে নির্জন জায়গায় পৌঁছেছিলেন।

সূত্রের খবর, হৃষীকের সুইসাইড নোটের সারমর্ম হচ্ছে— কলেজে শিক্ষকদের ইংরেজিতে পড়ানোটা তিনি ভাল ভাবে বুঝতে পারছিলেন না। কম্পিউটার ক্লাসেও সমস্যা হচ্ছিল। ওই কলেজে পড়াশোনা খুব উচ্চমানের। এত টাকা খরচ করে নিজের ইচ্ছায় ওই কলেজে ভর্তি হয়ে তিনি ভুল করেছিলেন। কলেজ ছেড়ে দিলে বাবা বকবেন। তাই আত্মহত্যার পথ বেছে নিলেন। উচ্চমাধ্যমিকে ৫০০ এর মধ্যে ৪৭২ নম্বর পাওয়া হৃষীক যে দিন কয়েক ধরে মানসিক চাপে ভুগছিলেন, তা বলেছেন তাঁর আত্মীয়-প্রতিবেশীরাও।

শনিবার হাওড়া মর্গে এসে প্রতিবেশী অসিতবরণ দাস বলেন, ‘‘ছেলেটি কলেজের পরিবেশের সঙ্গে তাল মেলাতে পারছিল না। ইংরেজি ও হিন্দি ভাষা বুঝতে সমস্যা হচ্ছে বলেও বাবাকেও জানিয়ে ছিল।’’ তিনি জানান, রতিকান্তবাবু ছেলেকে বলেছিলেন পরিবেশ মানিয়ে নিতে। তিন দিনের মধ্যে কলেজ ও হস্টেলের পরিবেশ নিয়ে কী ভাবে এতটা মানসিক চাপ তৈরি হল, যে তা থেকে হৃষীক আত্মহত্যার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললেন তা বুঝতে পারছেন না পরিজনেরা। একসঙ্গে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা বন্ধুরাও হৃষীকের আত্মহত্যার কথা মানতে পারছেন না। যে বাংলা মাধ্যম স্কুল থেকে হৃষীক উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেছিলেন সেখানকার প্রধান শিক্ষক আশিস সিংহ বলেন, ‘‘ছাত্রটি যে মানের তাতে ওঁর ইংরেজি নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়। আমার বিশ্বাস গভীর মানসিক কোনও সমস্যায় তাৎক্ষনিক সিদ্ধান্তে এমন ঘটনা ঘটিয়েছে।’’

সিঙ্গুর বিডিও অফিস লাগোয়া সাঁধুখা মাঠ এলাকার কোলে বাড়ি অবশ্য ঘটনার আকস্মিকতায় বোবা হয়ে গিয়েছে। প্রতিবেশীরা জানাচ্ছেন, রকিকান্তবাবু রাজ্য সরকারি কর্মী, হৃষীকের মা অনিমাদেবী স্থানীয় প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। ছোট থেকে পড়াশোনার আবহেই বড় হয়েছে হৃষীক। সেই মেধাবী ছাত্র কেন এমন করল, সেই উত্তরই খুঁজছে পরিজন থেকে প্রতিবেশীরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE