Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

আক্ষেপ, এমন রায় কেন আগেই হলো না!

নুর এখন ৪৬। তিনি যখন কুড়ি বছরের বধূ, আড়াই বছর এবং তিন মাসের দুই শিশুর মা, তখন থেকেই স্বামী পরিত্যক্তা। একাই বড় করছিলেন দুই ছেলেকে। ছেলেদের জন্য খরচ চেয়েও স্বামীর সাহায্য পাননি। উল্টে হঠাৎই হাতে পেলেন স্বামীর পাঠানো ‘তালাক তালাক তালাক’ লেখা চিঠি।

নুর সাবা ও ববি খাতুন

নুর সাবা ও ববি খাতুন

দেবারতি সিংহ চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ অগস্ট ২০১৭ ০৩:৫১
Share: Save:

বিচার না পেয়ে হাল ছেড়েছিলেন নুর সাবা। দু’বছরের ছেলেকে নিয়ে দিনমজুর বাবার সংসারে একাই লড়াই চালাচ্ছেন ২৪ বছরের ববি খাতুন। মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের রায় তাঁদের মুখে হাসি ফুটিয়েছে।
তাঁরা মনে করছেন, তাঁদের মতো মহিলাদের জীবনের অন্ধকার এ বার নিশ্চয়ই কাটবে।

নুর এখন ৪৬। তিনি যখন কুড়ি বছরের বধূ, আড়াই বছর এবং তিন মাসের দুই শিশুর মা, তখন থেকেই স্বামী পরিত্যক্তা। একাই বড় করছিলেন দুই ছেলেকে। ছেলেদের জন্য খরচ চেয়েও স্বামীর সাহায্য পাননি। উল্টে হঠাৎই হাতে পেলেন স্বামীর পাঠানো ‘তালাক তালাক তালাক’ লেখা চিঠি।

আরও পড়ুন: তালাক-রায় নিয়েই প্রশ্ন সিদ্দিকুল্লাদের

কেন তালাক, জানতে পারেননি আজও বুঝতে পারেননি দশম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করা নুর। সেই থেকে তাঁর লড়াই শুরু। জামাকাপড় সেলাই করে সংসার চালিয়েছেন। দু’ছেলেকে ইংরেজি মাধ্যমে পড়িয়েছেন। জন্মের কয়েক মাস পরেই ছোট ছেলের ওপেন হার্ট সার্জারি করিয়েছেন। কমার্সে স্নাতক হয়ে হোটেল ম্যানেজমেন্ট পাশ করে বড় ছেলে এখন বেঙ্গালুরুর হোটেলে কর্মরত। ছোট ছেলেও কলকাতায় এক রেস্তোরাঁয় কাজ করে।

মোমিনপুরের বস্তিতে বেড়ে ওঠা ববি স্নাতক হওয়ার পরেই বিয়ে করেছিলেন গ্রাফিক ডিজাইনার পাত্রকে। কিন্তু একমাস পর থেকেই সন্তানসম্ভবা ববিকে পণের জন্য সহ্য করতে হয়েছে স্বামী, দেওর, শ্বশুর, শাশুড়ির নির্যাতন। বাচ্চাকে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে ববি বললেন, ‘‘ওষুধ খাইয়ে পেটের সন্তানকে মেরে ফেলারও চেষ্টা করেছে ওরা।’’ শেষে ডাক্তারের পরামর্শে শ্বশুরবাড়ির বিরুদ্ধে থানায় এফআইআর করতেই তালাক দিলেন স্বামী।

দিনমজুর বাবার কাছেই দু’বছরের ছেলেকে নিয়ে স্বামীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে লড়াই চালাচ্ছেন ববি। উজেরকে আজও দেখতে আসেননি তার বাবা। ববি বলছিলেন, ‘‘হোয়াট্সঅ্যাপে তালাক লিখে পাঠিয়েছিল। আমি ওর বিরুদ্ধে ৪৯৮-এ মামলা করেছি পুলিশ কোর্টে। দু’বছর হয়ে গেল, কিছুই হলো না!’’ মঙ্গলবারের রায়ের পরে ববির এখন একটাই আশা, স্বামীর শাস্তি হোক। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেকে শেখাব, কী ভাবে মেয়েদের সম্মান দিতে হয়।’’ আর নুর বলছিলেন, ‘‘খোরপোশের জন্য ১০ বছর মামলা চালিয়েছি। এক পয়সাও পাইনি। দু’টো ছেলেকে কত কষ্টে একা বড় করেছি। তখন যদি এমন রায় থাকত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE