গড়িয়া হাটের বাজারে পুরনো ইলিশ। নিজস্ব চিত্র
ভরা শ্রাবণেও ইলিশ পাতে উঠল না বাঙালির। খুচখাচ দু’চার পিস পাঁচ-ছ’শো গ্রামের মাছ যে বাজারে একেবারে নেই, তা নয়। কিন্তু সেই স্বাদ কোথায়, আক্ষেপ মুখে মুখে। আর কেজিখানেক, কেজি দেড়েকের ইলিশ তো এই মরসুমে এখনও চোখেই পড়ল না বাজারে।
আবহাওয়ার খামখেয়ালি স্বভাবকেই ইলিশের আকালের জন্য মূলত দায়ী করছেন মৎস্যজীবীরা। বার কয়েক গভীর সমুদ্রে গিয়েও ইলিশের ঝাঁক সে ভাবে আটকায়নি জালে। ছোট সাইজের কিছু মাছ এলেও তার দাম প্রচুর। মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, বেশি মাছ বাজারে না উঠলে দাম কমবে আর কী করে!
তবে আশার কথা শোনাচ্ছেন কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা। কাকদ্বীপ ফিসারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘‘সোমবার প্রায় আড়াই হাজার ট্রলার ফের রওনা দিয়েছে গভীর সমুদ্রে। এখন পুবালি বাতাস বইছে। বাংলাদেশের দিক থেকে স্রোত আসছে এ দিকে। ঝির ঝির করে বৃষ্টিও পড়ছে। এই পরিস্থিতি ইলিশ ধরার পক্ষে অনুকূল। আশা করছি, দিন সাতেকের মধ্যে ভাল খবর আসবে।’’
আরও পড়ুন: হৃদরোগের সঙ্গে করোনা, ফল হতে পারে বিপজ্জনক, কেন জানেন?
গত সপ্তাহে বুধ এবং বৃহস্পতিবার মোট পাঁচ টন ইলিশ এসেছিল দিঘা মোহনার মাছ নিলাম কেন্দ্রে। তারপর সপ্তাহ প্রায় ঘুরতে চলল। জালে ইলিশ আর তেমন ওঠেনি বলেই জানিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। তবে দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক শ্যামসুন্দর দাস বলেন, ‘‘নিম্নচাপের সতর্কতার কারণে কয়েক দিন ধরে সব ট্রলার নিরাপদ আশ্রয়ে ছিল। ধীরে ধীরে এখন সেগুলি সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছে। দু’এক দিন বাদে ট্রলারগুলি ফের দিঘা মোহনায় এলে ইলিশের আমদানি হতে পারে বলেই আশা রাখছি।’’
কাকদ্বীপের মৎস্যজীবীরা জানাচ্ছেন, ১৫ জুন ইলিশ ধরার মরসুম শুরু হওয়ার পর থেকে গত দু’মাসে বর্ষার ঘাটতি ছিল। আবহাওয়াও অনুকূল ছিল না। হাওয়া অফিসের নিষেধ মেনে কয়েক দিন সমুদ্রে যেতে পারেননি মৎস্যজীবীরা। যত বার গিয়েছেন, অন্য মাছ জালে পড়লেও ইলিশ সে ভাবে ওঠেনি। মৎস্যজীবী প্রবীর মান্না, শঙ্কর মান্না, সুবীর দাসরা জানান, সমুদ্রে ৮-১০ দিন থেকে ট্রলার ভর্তি কুইন্টাল কুইন্টাল মাছ ওঠে অন্যান্য বছর। এখন ইলিশের দেখা মেলাই ভার। গত দু’মাসে একাধিক বার সমুদ্রে পাড়ি দিয়ে মেরেকেটে ২৫০-৩০০ টন মাছ মিলেছে। তার সামান্য অংশই ইলিশ। অন্য বছর এক-দু’দিন সমুদ্রে থেকে শুধু ৩০০ টন ইলিশই ওঠে জালে।
বার বার সমুদ্রে গিয়েও ইলিশ না মেলায় আর্থিক ক্ষতির মুখেও পড়ছেন বলে জানিয়েছেন ট্রলার মালিকেরা। ইলিশের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত আরও বহু মানুষ পড়েছেন সমস্যায়। আর সেই সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভরাবর্ষায় আমবাঙালির ইলিশের জন্য হা-হুতাশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy