পদটিতে যিনি আছেন, অনিয়মের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে তাঁকে সাময়িক ভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে কয়েক মাস আগে। এ বার সেই ফিনান্স অফিসার বা অর্থ-অফিসারের পদটিই তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়। ফলে সাসপেনশনে থাকা অফিসারের চাকরিটাই বিপদের মুখে। তাঁর অবসর নিতে বাকি আছে মাত্র বছর তিনেক।
সাত বছর আগে যথারীতি বিজ্ঞাপন দিয়ে এবং বিধিমাফিক ইন্টারভিউ নিয়ে অর্থ-অফিসারের পদে হরিসাধন ঘোষকে নিয়োগ করেছিল কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট। আর বৃহস্পতিবার সেই সিন্ডিকেটের বৈঠকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হল, ফিনান্স অফিসারের পদটি বিলোপ করা হবে। এবং অচিরেই তা জানিয়ে দেওয়া হবে হরিসাধনবাবুকে। অবসরের বছর তিনেক আগে চাকরি নিয়ে টানাটানি শুরু হওয়ায় পরবর্তী পদক্ষেপের কথাও ভাবতে শুরু করেছেন বলে এ দিন জানান সাসপেনশনে থাকা ওই অফিসার।
দেশের প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়গুলির অন্যতম কলকাতায় হরিসাধনবাবুই প্রথম অর্থ-অফিসার। তাঁর আগে ওই পদে কেউ ছিলেন না। কারণ, পদটিরই কোনও অস্তিত্ব ছিল না! অবলুপ্তির সিদ্ধান্ত হয়ে যাওয়ায় ওই পদে শেষ অফিসারও হরিসাধনবাবু।
পদাধিকারী এবং পদ দু’ভাবে বিপন্ন। আর্থিক অনিয়মের অভিযোগে দীর্ঘদিন ধরে সাসপেন্ড হয়ে আছেন হরিসাধনবাবু। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, ওই অফিসারের বিরুদ্ধে মূলত নিয়ম ভেঙে স্থায়ী আমানত তৈরি এবং তার হিসেব দিতে না-পারার অভিযোগ উঠেছিল। তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের লিখিত জবাব চেয়ে চিঠিও পাঠায় বিশ্ববিদ্যালয়। গড়া হয় তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি। নিয়ম ভাঙার অভিযোগ প্রাথমিক ভাবে প্রমাণিত হয়েছে বলে জানানো হলেও কমিটির রিপোর্টে ঠিক কী আছে, সেই ব্যাপারে কর্তাদের কেউ মুখ খুলতে চাননি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের খবর, প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয়ের ভারপ্রাপ্ত যে-সব কমিটির সবুজ সঙ্কেত ছাড়া স্থায়ী আমানতের কাজে এগোনো যায় না, অনেক ফিক্সড ডিপোজিটের ক্ষেত্রেই তাদের অন্ধকারে রাখা হয়েছিল বলে তদন্তে জানা গিয়েছে।
পদাধিকারী হরিসাধনবাবুর বিরুদ্ধে এমন অভিযোগের পাশাপাশি আলাদা ভাবে সমস্যা রয়েছে ওই পদটিরই। কারণ, পদটির কোনও সরকারি অনুমোদন নেই বলে অভিযোগ ওঠে। বিহারীলাল কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম বিভাগ হিসেবে যুক্ত হয়ে যাওয়ার পরে সেখানকার অধ্যক্ষের পদটিকেই ফিনান্স অফিসারের পদে রূপান্তরিত করা হয়েছিল। তার পরে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞাপন, আবেদনপত্র গ্রহণ এবং ইন্টারভিউ বা সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে নিয়োগ করা হয় হরিসাধনবাবুকে। বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রের খবর, উচ্চশিক্ষা দফতর সেই সময় জানিয়েছিল, চিঠি লিখে পদটির অনুমোদন চাওয়া হোক। বিশ্ববিদ্যালয় চিঠি পাঠালেও শেষ পর্যন্ত পদটির অনুমোদন মেলেনি। সিন্ডিকেটের এ দিনের সিদ্ধান্তে পদ ও পদাধিকারীর ভাগ্য পরস্পরের সঙ্গে জড়িয়ে গেল।
এ ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু করার নেই বলে ইঙ্গিত দিয়েছেন উপাচার্য সুরঞ্জন দাস। তিনি এ দিন বলেন, ‘‘সরকার আগেই জানিয়েছিল যে, ফিনান্স অফিসারের পদটির অনুমোদন নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর কী করার আছে! পদটি অবলুপ্ত করার পাশাপাশি হরিসাধনবাবুকে সে-কথা জানিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।’’
আর হরিসাধনবাবু?
সাসপেন্ড হয়ে থাকা ওই অফিসার নিজে বরাবরই দাবি করে এসেছেন, তিনি নির্দোষ। এ দিনও তিনি বলেন, ‘‘আমার বিরুদ্ধে এক পয়সা তছরুপের অভিযোগও প্রমাণিত হয়নি। আর আমি তো নিজে নিজে ওই পদে গিয়ে বসে পড়িনি! আমাকে নিয়োগ করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কী জানায় দেখি। তার পরে পরিস্থিতি বুঝে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy