পুরস্কার হাতে আদ্রার হোমের মেয়েরা। ছবি: সঙ্গীত নাগ
রাত জেগে টিভিতে কী দেখে মেয়েরা— সময়ে না ঘুমোলে অসুস্থ হয়ে পড়বে যে! বকুনি দেবেন, ঠিক করেই সন্তর্পণে হোমে গিয়েছিলেন বেসরকারি হোমের পরিচালন কমিটির সম্পাদক নবকুমার দাস। কিন্তু টিভির পর্দায় চোখ যেতে তাঁর রাগ গলে জল।
টিভিতে জুভেন্তাসের হয়ে জাদু দেখাচ্ছেন ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো। আর তা প্রায় গিলছে মৌসুমি, নমিতা, প্রীতিরা। এই মেয়েরা ফুটবল-পাগল।
বছর চোদ্দো-ষোলোর আবাসিকদের ‘ফুটবল-উন্মাদনা’ দেখে তাদের নিয়ে ফুটবল দল গড়েন নবকুমার। ব্যবস্থা করেন প্রশিক্ষণের। দলের নাম দেন ‘জাগৃতি’। পুরুলিয়া জেলা পুলিশ আয়োজিত ‘সৈকত কাপ’ ফুটবল প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সেই জাগৃতি-ই।
আদ্রার অদূরে মনিপুর গ্রামে ‘কুষ্ঠ পুনর্বাসন কেন্দ্র’ পরিচালিত ‘অরুণোদয় শিশু নিকেতন’ হোমটিই ‘জাগৃতি’র ফুটবলারদের ঠিকানা। ওদের কেউ অনাথ, বাড়িতে কুষ্ঠ রোগী থাকায় কারও ঠাঁই হয়েছে হোমে। সেখানকার টিভিতেই স্পেনের ‘লা লিগা’, ইতালির ‘সেরি-আ’, ‘ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ’ দেখে মৌসুমি মাহাতো, নমিতা হেমব্রম, প্রীতি সাউয়ের মতো আবাসিকেরা। তারা জানাল, মাস ছ’য়েক আগে আবাসিকদের জন্য একটি ফুটবল ম্যাচের ব্যবস্থা করেছিলেন হোম কর্তৃপক্ষ। সে খেলাই যেন রক্তের স্বাদ দিয়েছিল নমিতা, মৌসুমিদের। ওরা বলল, ‘‘টিভিতে রোনাল্ডো, মেসিদের খেলা দেখায়। তার প্রায় সবই রাতে। সে জন্য রাত জেগে টিভি দেখতাম।’’
নবকুমারবাবু জানান, হোমে ছেলে-মেয়ে মিলিয়ে আবাসিক ১৯৪। তাদের মধ্যেই বাছা হয় ১৫ জন মেয়েকে। দেওয়া হয় জার্সি, জুতো, বল। হোমের কর্মী শিবচরণ কালিন্দী হন ‘কোচ’। শিবচরণের কথায়, ‘‘ওরা ফুটবলের নানা কৌশল শিখেছে নিয়মিত খেটে।’’ মাস চারেকের হাড়ভাঙা অনুশীলনের পরে ‘জাগৃতি’ নাম দেয় সৈকত কাপে। ফাইনালে জয় টাইব্রেকারে ৩-১ গোলে।
টুর্নামেন্টের ‘সেরা’ প্লেয়ার নমিতার বিশ্বাস, ‘‘ফুটবল পায়ে যত দূর পারি, যাব আমরা।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy