Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

‘মা পক্ষাঘাতগ্রস্ত, একটা চাকরি পেয়েছিলাম, কিন্তু আর ভাবতে পারছি না’

যে দাড়িভিট হাইস্কুলের গুলি-বোমা কাণ্ডে দু’জনের মৃত্যুকে ঘিরে রাজ্য তোলপাড়, তার প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডুর চার রাত ধরে কোনও হদিস নেই। শিলিগুড়িতে হাকিমপাড়ায় রাজা রামমোহন রায়ের গা ঘেঁষে সৈয়দ মুজতবা আলি লেনের বাড়িতেও নেই তিনি।

তৌরাঙ্গ মল্লিক

তৌরাঙ্গ মল্লিক

নিজস্ব সংবাদদাতা
শিলিগুড়ি ও কোচবিহার শেষ আপডেট: ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৩:২১
Share: Save:

এক জনকে ঘিরে রেখেছেন পড়শিরা। আর এক জনের খোঁজ নেই দেখে প্রতিবেশীরা অবাক।

যে দাড়িভিট হাইস্কুলের গুলি-বোমা কাণ্ডে দু’জনের মৃত্যুকে ঘিরে রাজ্য তোলপাড়, তার প্রধান শিক্ষক অভিজিৎ কুণ্ডুর চার রাত ধরে কোনও হদিস নেই। শিলিগুড়িতে হাকিমপাড়ায় রাজা রামমোহন রায়ের গা ঘেঁষে সৈয়দ মুজতবা আলি লেনের বাড়িতেও নেই তিনি। ‘হেডস্যর’ কোথায় গেলেন তা নিয়ে পড়শিদেরও মধ্যেও চলছে আলোচনা। সোমবার সকালে ও সন্ধ্যায় দু’বার হাকিমপাড়ার বাড়িতে গেলেও প্রধান শিক্ষকের মা বলেন, ‘‘আমরাই খোঁজ পাচ্ছি না। ওর মোবাইলও তো বন্ধ। স্কুলে সেই ঘটনার পর থেকেই ওর গতিবিধি জানতে পারছি না। কী করে বলব!’’

আর রবিবার কোচবিহারের বড়রাংরসের শালমারি গ্রামে নিজের বাড়িতে বসে এখনও বৃহস্পতিবারের কথা ভেবে শিউরে উঠেছেন তৌরাঙ্গ মল্লিক। ইসলামপুরের দাড়িভিট হাইস্কুলে সংস্কৃতের শিক্ষক হিসেবে যোগ দিতে গিয়েছিলেন তিনি। তৌরাঙ্গবাবু জানান ওই দিন বেলা ১টা নাগাদ স্কুলে যান। বলেন, ‘‘প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে ঘরে গিয়ে সমস্ত নিয়ম শেষ করি। এই সময় আচমকা বাইরে চিৎকার শুরু হয়ে যায়। তখন একটি ঘরের ভিতরে নিয়ে গিয়ে রাখেন সহ-শিক্ষকেরা।’’ তিনি জানান, প্রায় চার ঘণ্টা একটি ঘরের ভিতরে বসে থাকেন তাঁরা। পরে পুলিশের একটি দল তাঁদের সেখান থেকে বার করে নিয়ে যায়। তৌরাঙ্গবাবু বলেন, “আমাদের বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দেওয়া হয়। পরে বাড়ি চলে আসি।”

কোচবিহার শহর থেকে প্রায় পঁচিশ কিলোমিটার দূরে গ্রামের ভিতরে তৌরাঙ্গবাবুর বাড়ি। তাঁর বাবা গৌরাঙ্গবাবু বাজারে আনাজ বিক্রি করে সংসার চালান। মা ভক্তিদেবী পক্ষাঘাতে আক্রান্ত। তাঁর এক ভাই দু’বছর আগে দুর্ঘটনায় মারা গিয়েছেন। এই অবস্থায় দিন-রাত এক করে পড়াশোনা করে গিয়েছেন তিনি। চাকরি হওয়ার পরে খুশি হয়েছিলেন গোটা গ্রামের মানুষ। বাসিন্দাদের কয়েক জন বলেন, “তৌরাঙ্গ খুব ভাল ছেলে। এমন ঘটবে কেউ ভাবিনি।”

আরও পড়ুন: কাঁটার আসনে বসেছি, ফিরে বলছেন সোমেন

আর অভিজিৎবাবুর প্রতিবেশীদের কথায়, তাঁর সঙ্গে তৃণমূলের সম্পর্ক ভালই। এক শিক্ষক জানান, এলাকার বড় মাপের কারও চাপ ছাড়া একজন প্রধান শিক্ষকের পক্ষে পুলিশ দিয়ে কারও নিয়োগের চেষ্টা করা কখনও সম্ভব নয়। অনেকের ধারণা, আইনি পরামর্শ মেনেই পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত না হওয়া অবধি অভিজিৎবাবুকে কেউ গা ঢাকা দিয়ে থাকার পরামর্শ দিয়েছেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE