Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

হোমে যৌন নির্যাতন ৪ প্রতিবন্ধী কিশোরীকে, গ্রেফতার ৩

হোমে থাকা মহিলা-কিশোরীরা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। সেই প্রশ্ন আরও একবার উঠল হাওড়ার জয়পুরের একটি হোমের চার প্রতিবন্ধী কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে। পুলিশ হোমের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

উলুবেড়িয়া আদালতের পথে ধৃতেরা। শনিবার। ছবি: সুব্রত জানা

উলুবেড়িয়া আদালতের পথে ধৃতেরা। শনিবার। ছবি: সুব্রত জানা

সুব্রত জানা ও নুরুল আবসার
জয়পুর শেষ আপডেট: ০২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৭
Share: Save:

হোমে থাকা মহিলা-কিশোরীরা কতটা নিরাপদ তা নিয়ে বারবার প্রশ্ন উঠেছে। সেই প্রশ্ন আরও একবার উঠল হাওড়ার জয়পুরের একটি হোমের চার প্রতিবন্ধী কিশোরীকে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ ঘিরে। পুলিশ হোমের তিন কর্মীকে গ্রেফতার করেছে।

কিছু দিন আগেই বিহারের ১৭টি ‘শেল্টার হোম’-এ যৌন অত্যাচারের বিষয় সামনে এসেছে। বছর ছয়েক আগে হুগলির গুড়াপের একটি হোমে মানসিক ভারসাম্যহীন আবাসিক যুবতীকে খুনের ঘটনাকে ঘিরে তোলপাড় হয়েছিল এ রাজ্যও। তার পরে সরকারি স্তরে পরিদর্শনে জোর দেওয়া হলেও নানা হোমের বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠা থামেনি। এ বার আলোচনায় জয়পুরের পারবাকসির ওই বেসরকারি হোম।

দিন কয়েক আগে হোমটি পরিদর্শনে যান জেলা শিশু সুরক্ষা আধিকারিক। আবাসিকদের কাছ থেকে তিনি যৌন নির্যাতনের কথা জানতে পারেন। তার পরেই পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়। পুলিশ জানায়, ধৃতেরা হল ওই হোমের কেয়ারটেকার ফণীমোহন বাগ, কর্মী প্রতাপ প্রামাণিক এবং গাড়ি চালক বাবলু ধাড়া। ধৃতদের বিরুদ্ধে ‘পকসো’ আইনের ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। ধৃতদের শনিবার উলুবেড়িয়া আদালতে হাজির করানো হয়। বিচারক তাদের পাঁচ দিন পুলিশি হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেন। আদালতে ওই কিশোরীদের গোপন জবানবন্দি নেওয়া হয়। ঘটনায় আর কেউ জড়িত কি না, তা দেখা হচ্ছে বলে জানান হাওড়া (গ্রামীণ) জেলা পুলিশ সুপার গৌরব শর্মা।

হোমটির সম্পাদক তথা কর্ণধার সুকুমার সাউ দাবি করেছেন, অভিযোগের কথা কিছুই জানতেন না। তিনি বলেন, ‘‘আমি মাঝেমধ্যে ওখানে যাই। মানসিক প্রতিবন্ধী মহিলাদের দেখভালের ক্ষেত্রে আমরা সরকারের সব রকম নিয়ম মেনে চলি। কী ভাবে যৌন নির্যাতনের অভিযোগ উঠল, বুঝতে পারছি না।’’ প্রায় একই দাবি হোমের সুপার সুকেশ দাসেরও।

আরও পড়ুন: এ রাজ্যে বাড়ছে নাবালিকা মায়ের সংখ্যা, বলছে সমীক্ষা

হোমটি বছর কুড়ি ধরে চলছে। বর্তমানে ১৯০ জন আবাসিক প্রতিবন্ধী কিশোরী থাকে। যে চার কিশোরী নির্যাতিত হয়েছে বলে অভিযোগ, তাদের মধ্যে তিন জন মানসিক প্রতিবন্ধী, এক জন শ্রবণ প্রতিবন্ধী। তারা বছর দুয়েক ধরে রয়েছে বলে হোম সূত্রের খবর। প্রায় দু’বছর আগে হোমটি পরিদর্শনের সময়েও আবাসিক কিশোরীদের নিরাপত্তার অভাব, নজরদারির ঘাটতি-সহ কিছু ত্রুটি মিলেছিল বলে পুলিশের দাবি। পুলিশের সঙ্গে সেই পরিদর্শনে ছিলেন আমতা-২ ব্লক প্রশাসনের কর্তারাও। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, তখনও হোমের কর্মী প্রতাপের বিরুদ্ধে আপত্তিকর আচরণের অভিযোগ জানিয়েছিল কিছু আবাসিক। প্রতাপের উপরে কিশোরীদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার অনেকটাই ছিল। যা থাকার কথা নয়। এ সংক্রান্ত পুরো রিপোর্ট রাজ্য সমাজকল্যাণ দফতরে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু ওই পরিদর্শনের পরেও কেন হোমে নিরাপত্তা বাড়ানো হল না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয়েরা। জেলাশাসক চৈতালি চক্রবর্তীর দাবি, ‘‘নিয়মিত পরিদর্শন চলে। পরিদর্শনের ফলেই পারবাকসির হোমের ঘটনা সামনে এসেছে। পরিদর্শন আরও বাড়ানো হবে।’’ ওই হোম কর্তৃপক্ষ অবশ্য কোনও ত্রুটির কথা মানেননি। সম্পাদকের দাবি, ‘‘প্রতাপ প্যারামেডিক্যাল প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বলে আবাসিকদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে তাকে সঙ্গে রাখা হত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Arrest Sexual Assault Specially abled girl Crime
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE