কোথাও শ্রমিক অসন্তোষ, কোথাও বরাত না মেলা, কোথাও কাঁচামালের অভাব— নানা সমস্যায় জর্জরিত এ রাজ্যের চটশিল্পকে বাঁচানোর জন্য শনিবারই হুগলিতে এসে সংসদে ‘আওয়াজ’ তোলার আশ্বাস দিয়ে গিয়েছেন রাহুল গাঁধী। তার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রবিবার, একই দিনে কাজ বন্ধের বিজ্ঞপ্তি জারি হল হুগলির নর্থব্রুক, ইন্ডিয়া এবং হেস্টিংস— তিন চটকলে। বিপাকে পড়লেন প্রায় ১২ হাজার শ্রমিক। এই নিয়ে মে দিবসের পর থেকে শুধু হুগলিতেই পাঁচটি চটকলে কাজ বন্ধ হল।
ঠিক এক বছর আগে শ্রমিক অসন্তোষের জেরে খুন হন ভদ্রেশ্বরের নর্থব্রুক চটকলের তৎকালীন সিইও হরিকিষান মহেশ্বরী। চটকলের মধ্যেই তাঁকে পিটিয়ে মারা হয়। তার পরে প্রায় এক মাস বন্ধ ছিল চটকলটি। খোলার পরে বরাত না থাকা এবং কাঁচামালের অভাবের কারণে শ্রমিকদের কাজের সময় ৮ ঘণ্টা থেকে কমিয়ে ৫ ঘণ্টা করে দিয়েছিলেন কর্তৃপক্ষ। এই এক বছরে কাজ বন্ধ হয়নি। রবিবার কিন্তু বিজ্ঞপ্তি জারির পিছনে বরাত না থাকা ছাড়াও ছাড়াও উৎপাদন কম হওয়াকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
নর্থব্রুকে বর্তমানে প্রায় সাড়ে তিন হাজার শ্রমিক কাজ করেন। এ দিন সকালে ওই বিজ্ঞপ্তি জারি হওয়ায় গোলমালের আশঙ্কায় প্রচুর পুলিশ মোতায়েন করা হয়। কিন্তু শ্রমিকেরা এসে বিজ্ঞপ্তি দেখে ক্ষোভ-বিক্ষোভ দেখাননি। হতাশ হয়ে ফিরে যান। চন্দননগরের উপ-শ্রম কমিশনার তীর্থঙ্কর সেনগুপ্ত বলেন, ‘‘চটকল কর্তৃপক্ষ আমাদের কিছু না জানিয়েই ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন। চেষ্টা করব সব পক্ষকে নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে যাতে শীঘ্র চটকল চালু হয়।’’ চটকলের ভাইস প্রেসিডেন্ট রামশঙ্কর উপাধ্যায় অবশ্য দাবি করেন, ‘‘সেলাই-ঘর বিভাগের উৎপাদন কমে যাওয়ায় শ্রমিক পক্ষকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। কিন্তু শ্রমিক পক্ষ আলোচনায় বসতে চায়নি। বাধ্য হয়ে ওই বিজ্ঞপ্তি ঝোলাতে হয়েছি।’’
চটকলের শ্রমিক সংগঠনগুলি কর্তৃপক্ষের তরফে কোনও আলোচনার প্রস্তাবের কথা মানেনি। আইএনটিইউসি সমর্থিক শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ আসলাম পাল্টা দাবি করেন, ‘‘কর্তৃপক্ষ মিথ্যা কথা বলছেন। কোনও অজুহাত দেখিয়ে চটকল বন্ধ করতে হবে, সেটাই করলেন।’’ সিটু সমর্থিক শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ ইসমাইল খান বলেন, ‘‘উৎপাদন কম হওয়া কোনও যুক্তি নয়। কাজের সময় কমালে উৎপাদ তো কম হবেই। কর্তৃপক্ষ স্বৈরাচারী আচরণ করছেন। উৎপাদনের ক্ষেত্রে শ্রমিকরা যা চিন্তাভাবনা করতেন, কর্তৃপক্ষ সেটুকুও করতেন না।’’
এ দিন অন্য যে দু’টি চটকলে কাজ বন্ধ হয়েছে, তার একটি রিষড়ায়, অন্যটি শ্রীরামপুরে। শনিবার রিষড়ারই ওয়েলিংটন চটকলে এসে কংগ্রেসের সহ-সভাপতি রাহুল গাঁধী শ্রমিকদের দুর্দশা দেখেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলার পরে সংসদে তাঁদের হতে ‘আওয়াজ’ তোলার আশ্বাস দেন। রবিবার সেই রিষড়ারই হেস্টিংস চটকলে কাজ বন্ধের পিছনে কর্তৃপক্ষ শ্রমিক অসন্তোষকে কারণ হিসেবে দেখিয়েছেন।
কয়েক মাস আগে ওই চটকলে কাজের সময় কমানোর আশঙ্কাকে ঘিরে শ্রমিক বিক্ষোভ হয়। ভাঙচুর চলে। তার জেরে ২২ জনের বিরুদ্ধে এফআইআর করেন কর্তৃপক্ষ। কিছুদিন পরে চটকল খুললেও ত্রিপাক্ষিক বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, ওই ২২ জনকে কাজে ফেরানো নিয়ে পরে সিদ্ধান্ত হবে। কিন্তু এত দিনেও কোনও সিদ্ধান্ত না হওয়ায় শ্রমিকেরা আন্দোলন শুরু করেন কয়েক দিন আগে। কাজ বন্ধ করে দেন তাঁরা। ফলে, অচলাবস্থা তৈরি হয়। শেষ পর্যন্ত এ দিন ওই বিজ্ঞপ্তি। ফলে, সমস্যায় পড়লেন চটকলের হাজার পাঁচেক শ্রমিক। অন্য দিকে, ইন্ডিয়া চটকলে মূলত কাঁচামালের অভাবের কারণেই এ দিন ওই বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয় বলে কর্তৃপক্ষ জানান।
রাজ্যের চটশিল্পের এই পরিস্থিতির জন্য শনিবার কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছিলেন রাহুল গাঁধী। এক ভাবে দুই সরকারকে দুষে এ দিন ভাটপাড়ার মাদ্রালে দলের এক কর্মিসভায় কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে চটকল খোলা নিয়ে দরবার করা হবে। সাত দিনের মধ্যে বন্ধ চটকল খোলা না হলে অনশনে বসব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy