—ফাইন চিত্র।
স্রেফ শিল্পের জন্য সিঙ্গুর থেকে শালবনি পর্যন্ত হেঁটেছে বামেরা।
উন্নয়নের স্লোগানে পথে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে তৃণমূল।
গত সাত দিনে বিলকুল বদলে গিয়েছে বাঙালির হাঁটাহাঁটির দর্শনটাই!
ট্রামের ভাড়া বৃদ্ধি থেকে আইনশৃঙ্খলার অবনতি, পুস্তকপ্রেম থেকে রবীন্দ্রনাথ— স্বাধীনতার পর থেকে এমন বহুবিধ কারণে বাঙালি শত শত কিলোমিটার হেঁটেছে। কিন্তু শিল্প বা উন্নয়নের জন্য পায়ে পা মেলানো তার এই প্রথম। গত শনিবার সিঙ্গুর থেকে যার সূত্রপাত। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের উদ্বোধন করা ‘জাঠা’ ৪০০ কিলোমিটার পথ পেরিয়ে শুক্রবার পৌঁছেছে শালবনিতে। গোটা পথে আগাগোড়া একটাই স্লোগান ছিল মিছিলে। শিল্প চাই। সাত দিন ধরে মিছিলের যাত্রাপথের দু’ধারে দাঁড়িয়ে হাজারে হাজারে মানুষ উৎসাহ দিয়েছেন পদযাত্রীদের। বুঝিয়ে দিয়েছেন, মিছিলের ডাকের সঙ্গে একাত্মবোধ করছেন তাঁরা।
বামেদের জাঠার রেশ ফুরোতে না ফুরোতে শুক্রবারই পাল্টা মিছিলের ডাক দিয়েছে রাজ্যের শাসক দল। কিন্তু সেই মিছিলের লক্ষ্যও নিছক রাজনীতি নয়। চার দিনের ‘উন্নয়ন ও প্রগতি যাত্রা’য় সাড়ে তিন দশকের বাম ‘অপশাসন’ নিয়ে প্রচার চালাবেন না তৃণমূল কর্মীরা। সরব হবেন না রাজ্যের কাঁধে বামেদের চাপিয়ে যাওয়া ঋণের বোঝা শিথিল করার ব্যাপারে কেন্দ্রের অনীহা নিয়েও। বরং গত সাড়ে চার বছরে তাঁদের সরকার যে সব উন্নয়নমূলক কাজ করেছে, তার কথাই তৃণমূল কর্মীরা ছড়িয়ে দেবেন রাজ্যের ৩৪১টি ব্লকে।
আগামী ২৫ থেকে ২৮ জানুয়ারি এই পদযাত্রা হবে, এ দিন ঘোষণা করেছেন তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। পার্থবাবু বলেন, ‘‘আমাদের সাড়ে চার বছরের উন্নয়নমূলক কাজের ফিরিস্তি নিয়ে তৃণমূলের কর্মীরা মানুষের দরজায় দরজায় যাবেন।’’ পুরমন্ত্রী জানান, পদযাত্রার সময় তৃণমূল কর্মীদের বুকে সাড়ে চার বছরের উন্নয়নের প্ল্যাকার্ড থাকবে। থাকবে, যে জেলায় পদযাত্রা হচ্ছে সেখানকার উন্নয়নের কথাও। কোথায় কী ভাবে পদযাত্রা হবে, তা সময়মতো জেলার নেতাদের জানিয়ে দেওয়া হবে, বলেছেন পার্থবাবু।
শাসক আর বিরোধী দলের মিছিলের এই ভাষা বদলকে রাজ্যের পক্ষে রুপোলি রেখা হিসেবেই দেখছেন অনেকে। তাঁদের মতে, স্বাধীনতার পর থেকেই রাজনীতির অন্ধগলিতে আটকে থেকেছে পশ্চিমবঙ্গ। বন্ধ, ঘেরাও, হরতালের জেরে ক্রমে নাভিশ্বাস উঠেছে শিল্পের। রাজ্য থেকে একে একে বিদায় নিয়েছেন শিল্পপতিরা। কিন্তু তার প্রতিবাদ করতে পথে নেমে শিল্পায়নের হয়ে কথা বলেনি কেউই। রাজ্যে যে যখন বিরোধী দলে থেকেছে, সে তখন পাল্টা রাজনীতিই করেছে। পশ্চিমবঙ্গ যে ক্রমে শুকিয়ে আসছে, সে দিকে নজর করেনি কেউই।
কিন্তু নতুন বছরে আচমকাই যেন বদলাতে শুরু করেছে ছবিটা। নিছক রাজনীতির বহুচর্চিত ভাষণ সরিয়ে রেখে উন্নয়নের জন্য পথে নেমেছে শাসক-বিরোধী দুই পক্ষই। তাতে আখেরে কাজ কী হবে, সেটা পরের কথা। কিন্তু এই বদলটাই সুলক্ষণ, মানছে সংশ্লিষ্ট মহল।
বদল এসেছে রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়াতেও। যেমন, তৃণমূলের কর্মসূচির কথা শুনে তাকে ‘স্বাগত’ই জনিয়েছে সিপিএম। দলের পলিটব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিমের কথায়, ‘‘আমরা শিল্প নিয়ে এগোচ্ছি দেখে ওঁরা যদি উন্নয়ন নিয়ে পথে নামতে চান, স্বাগত জানাব।’’ তবে একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, ‘‘আমরা যখন প্রথম পর্যায়ের জাঠা করেছিলাম, তখন মমতা বলেছিলেন, ওঁরা শান্তি জাঠা করবেন। ক’টা জাঠা হয়েছে? এটুকু বলছি, সরকারি পরিকাঠামোয় কিছু প্রচার হবে। কিন্তু যা প্রচার, তার বেশির ভাগই ফাঁকা আওয়াজ।’’
তাঁদের পদযাত্রা কি বামেদের জাঠার পাল্টা? পার্থবাবুর জবাব, ‘‘ওরা (বামেরা) মানুষের দরজায় যাচ্ছে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য। ক্ষমতায় আসার জন্য। আমরা মানুষের কল্যাণের জন্য হাঁটব। বাংলাকে সর্বস্তরে সারা দেশে এক নম্বরে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে হাঁটব।’’
অভিযোগ বা দাবি যাই হোক, এক সুরে শিল্প ও উন্নয়নের কথা বলছে বাম এবং ডান— এ রাজ্যে কে, কবে দেখেছে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy