বহরমপুর পোস্ট অফিসে বস্তাবন্দি হয়ে পড়ে রয়েছে আয়ুষ্মান ভারতের কার্ড। —নিজস্ব চিত্র
প্রথমে উঠেছিল একাধিক কেন্দ্রীয় প্রকল্পের নাম বদলে দেওয়ার অভিযোগ। এ বার সামনে এল হুমকি দিয়ে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্প আটকে দেওয়ার খবর। ‘আয়ুষ্মান ভারত’ প্রকল্পের আওতায় দারিদ্র সীমার নীচে (বিপিএল) থাকা পরিবারগুলির জন্য স্বাস্থ্যবিমার কার্ড পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। তৃণমূলের বাধায় সেই কার্ড পৌঁছে দেওয়া যাচ্ছে না বিপিএল পরিবারগুলির হাতে। অভিযোগ বিজেপির। তৃণমূল অবশ্য সব অভিযোগ নস্যাৎ করছে।
২০১৮-১৯ সালের বাজেট পেশ করার সময়েই কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছিল সরকার। বিপিএল তালিকাভুক্তদের জন্য পরিবারপিছু বছরে ৫ লক্ষ টাকার স্বাস্থ্যবিমার ব্যবস্থা করা হবে বলে জানানো হয়েছিল। আয়ুষ্মান ভারত নামে এই স্বাস্থ্যবিমাকে ‘বিশ্বের বৃহত্তম স্বাস্থ্যবিমা’ প্রকল্প হিসেবেও দাবি করেছিল সরকার তথা বিজেপি।
সেই স্বাস্থ্যবিমা প্রকল্পের কার্ড এ বার রাজ্যে রাজ্যে পৌঁছতে শুরু করেছে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে কার্ড বিলিও শুরু হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন রাজ্যে। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গে এই কার্ড বিলি করতে দেওয়া হচ্ছে না বলে বিজেপির দাবি। সোমবার রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ দলের রাজ্য দফতরে একটি সাংবাদিক সম্মেলন করেন। আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের রূপায়ণ এ রাজ্যে আটকে দেওয়া হচ্ছে বলে সেই সাংবাদিক সম্মেলনেই দাবি করেন দিলীপ ঘোষ।
আরও পড়ুন: দেশভক্তির প্রমাণ চাই স্কুলেও, হাজিরা দিতে ইয়েস স্যর নয়, বলতে হবে ‘জয় হিন্দ’
আয়ুষ্মান ভারত কার্ড যে সব পরিবারের কাছে থাকবে, সেই সব পরিবার বছরে ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত চিকিৎসা নিখরচায় পাবেন। সরকারের তালিকায় যে সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থাকছে, সেই সব হাসপাতালে ভর্তি হলেই (সেকেন্ডারি অ্যান্ড টার্শিয়ারি কেয়ার হসপিটালাইজেশন) ওই সুবিধা মিলবে। বিজেপি সূত্রে জানানো হয়েছে যে, এ রাজ্যে প্রায় ১ কোটি ১২ লক্ষ কার্ড পাঠানো হয়েছে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে বিপিএল পরিবারগুলির কাছে সেই কার্ড পৌঁছে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তৃণমূল নেতাদের হুমকির মুখে পড়ে সেই সব কার্ড পোস্টম্যানরা বিলি করতে পারছেন না বলে বিজেপির অভিযোগ।
কেন্দ্রীয় সরকারের পাঠানো এই স্বাস্থ্য বিমার কার্ড ভোটের আগে বিলি করতে চায় না তৃণমূল। এমনই অভিযোগ বিজেপির। —নিজস্ব চিত্র
রাজ্য বিজেপির সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোমবার দাবি করেন, ‘‘অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের মাধ্যমে আয়ুষ্মান ভারত কার্ড প্রাপকদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে বলে ভাবা হয়েছিল। কিন্তু রাজ্য সরকার জানায়, অঙ্গনওয়াড়ি কর্মীদের উপরে অনেক কাজের চাপ রয়েছে। তাঁরা নতুন করে আর কোনও কাজের দায়িত্ব নিতে পারবেন না। তাই পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আয়ুষ্মান ভারত কার্ড বিপিএল তালিকাভুক্তদের বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করতে হয়েছে।’’ কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকারের সেই পরিকল্পনাও তৃণমূল আটকে দিচ্ছে বলে বিজেপি এ বার অভিযোগ করছে।
আরও পড়ুন: প্রধানমন্ত্রীর সভায় পরা যাবে না কালো পোশাক! নির্দেশ ঘিরে বিতর্ক
পোস্ট অফিস তো কেন্দ্রীয় সরকারের নিয়ন্ত্রণে। পোস্ট অফিসের মাধ্যমে আয়ুষ্মান ভারত কার্ড বিলি কী ভাবে আটকাচ্ছে রাজ্যের শাসক দল? রাজ্য বিজেপির নেতারা বলছেন, শাসানির সুরে কার্ড বিলি করতে বারণ করছেন তৃণমূলের নেতারা। কারও বাড়িতে এখন কার্ড পৌঁছে দেওয়ার দরকার নেই, কার্ড পোস্ট অফিসেই পড়ে থাক— কোথাও পোস্টম্যানকে, কোথাও পোস্টমাস্টারকে এই রকম শাসানি দেওয়া হচ্ছে বলে বিজেপির অভিযোগ। কোথাও পঞ্চায়েত সদস্য, কোথাও পঞ্চায়েত প্রধান, কোথাও জেলা পরিষদের সদস্য, কোথাও আবার তৃণমূলের ব্লক সভাপতিরা গিয়ে আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পের কার্ড বিলির উপরে অলিখিত নিষেধাজ্ঞা জারি করে আসছেন বলে বিজেপি নেতারা জানাচ্ছেন।
বীরভূমের নওয়াপাড়া পঞ্চায়েত এলাকা থেকে ডাক বিভাগের এক কর্মী বিজেপি দফতরে চিঠি দিয়ে এই ‘নিষেধাজ্ঞা’র কথা জানিয়েছেন বলেও খবর। আয়ুষ্মান ভারত কার্ড যেন এখন বিলি না করা হয়— স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের কাছ থেকে তিনি এমনই নির্দেশ পেয়েছেন বলে ডাক বিভাগের ওই কর্মী জানিয়েছেন। উত্তর ২৪ পরগনার বিভিন্ন এলাকাতেও কার্ড বিলি আটকে দেওয়া হয়েছে বলে বিজেপির দাবি।
কিন্তু কোনও এক জন ডাককর্মী বিজেপি দফতরে চিঠি দিলেন কেন? তাঁর কাজে যে বাধা দেওয়া হচ্ছে, তা তিনি নিজের বিভাগের কর্তাদের জানালেন না কেন? বিজেপি সূত্রের খবর, ডাক বিভাগের কর্তাদের কাছেও ওই ডাককর্মী অভিযোগ জমা দিয়েছেন। সঙ্গে বিজেপি-কেও চিঠি দিয়েছেন।
তৃণমূল কিন্তু আয়ুষ্মান ভারত প্রকল্পে বাধা দেওয়ার যাবতীয় অভিযোগ নস্যাৎ করছে। উত্তর ২৪ পরগনায় ডাক বিভাগের কর্মীদের শাসানি দেওয়া হচ্ছে বলে যে দাবি বিজেপি নেতারা করেছেন, তা ‘সম্পূর্ণ মিথ্যা’ বলে দাবি উত্তর ২৪ পরগনা জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের। তাঁর কথায়, ‘‘এ রকম কোনও খবর আমি শুনিনি। বিজেপির কাজই হচ্ছে মিথ্যা বলা আর অপপ্রচার করা। সম্পূর্ণ মিথ্যা বলছে।’’ রাজ্যের খাদ্যমন্ত্রীর আরও অভিযোগ, ‘‘এ রাজ্যকে কেন্দ্র কিছুই দিচ্ছে না। অনেকগুলো প্রকল্পের জন্য টাকা দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে। অন্য রাজ্যে সে সব প্রকল্প চলছে। কিন্তু বাংলায় বন্ধ করে দিয়েছে।’’ জ্যোতিপ্রিয়র কথায়, ‘‘এ দেশের কাঠামোটা যুক্তরাষ্ট্রীয়। এই কাঠামোয় কেন্দ্র যা-ই করুক, রাজ্যের মাধ্যমে করা উচিত। কিন্তু কেন্দ্রে বর্তমানে যে সরকার রয়েছে, তারা কোনও কাজেই রাজ্য সরকারকে সঙ্গে নিতে চায় না। সব কাজ নিজেরা সরাসরি করার চেষ্টা করে। এটা চলতে পারে না।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy