Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

গুলিতে খুন কুরবান, ভার কার হাতে, সংশয়ে শাসক দল

২০০৭ সালে রাজনীতিতে হাতে খড়ি কুরবানের। সে সময় বছর কুড়ির কুরবানের দাপটে মাইশোরায় সিপিএম কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সুনজরে পড়ে যান কুরবান।

এই অফিস ঘরেই খুন হন কুরবান। নিজস্ব চিত্র

এই অফিস ঘরেই খুন হন কুরবান। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
পাঁশকুড়া শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:০৮
Share: Save:

২০০৯ সালে পাঁশকুড়ার শিমুলহাণ্ডায় রাজনৈতিক সংঘর্ষে খুন হন সিপিএম নেতা গোবিন্দ সামন্ত। ২০১১-র পালা বদলের পর থেকে বড়সড় কোনও রাজনৈতিক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি এখানে। নবমীর রাতে তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক কার্যকরী সভাপতি কুরবান শা’কে খুনের ঘটনা ফের উস্কে দিল বছর দশেক আগের রাজনৈতিক খুনের স্মৃতি। কুরবানের মৃত্যুর পর পাঁশকুড়ার নতুন রাজনৈতিক সমীকরণ কী হবে তা নিয়ে তৈরি হয়েছে জল্পনা। কুরবানের পর পাঁশকুড়ায় শাসক দল তৃণমূলের মুখ কে? প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে।

২০০৭ সালে রাজনীতিতে হাতে খড়ি কুরবানের। সে সময় বছর কুড়ির কুরবানের দাপটে মাইশোরায় সিপিএম কার্যত কোণঠাসা হয়ে পড়ে। তৃণমূল নেতা শুভেন্দু অধিকারীর সুনজরে পড়ে যান কুরবান। ২০০৬ সালে দলের যুব সংগঠন থেকে আনিসুর রহমানকে বহিষ্কার করে সিপিএম। আনিসুর যোগ দেন তৃণমূলে। নন্দীগ্রাম আন্দোলনে সিপিএমের বাধা টপকে মমতাকে বাইকে চাপিয়ে পাঁশকুড়া থেকে তমলুক পৌঁছে দিয়েছিলেন আনিসুর। আর পিছনে তাকাতে হয়নি আনিসুরকে। ক্রমে তৎকালীন তৃণমূল নেতা মুকুল রায়ের ঘনিষ্ঠ হয়ে ওঠেন আনিসুর। পান তৃণমূলের জেলা সভাপতির পদ। তবে অধিকারী পরিবারের সঙ্গে কখনওই আনিসুরের সুসম্পর্ক ছিল না। ২০১৬-র বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে সেই বিরোধ চরমে ওঠে। আনিসুরকে কোণঠাসা করতে কুরবানকে দলের কার্যকরী সভাপতি করা হয়। ২০১৭ সালে পাঁশকুড়া পুরসভায় তৃণমূল একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা পেলেও পুরপ্রধান নির্বাচন নিয়ে আনিসুররের সঙ্গে দলের বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। দলীয় হুইপ না মানায় আনিসুরকে দল থেকে বহিষ্কার করে তৃণমূল। সবং উপ নির্বাচনের প্রাক্কালে বিজেপিতে যোগ দেন আনিসুর।

আনিসুরের বিকল্প হিসেবে কুরবান শা’কে নেতা করে একাধিক দলীয় দায়িত্ব দেন শুভেন্দু। সাফল্যের সঙ্গে সমস্ত দায়িত্ব পালন করে কুরবান আস্থাভাজন হয়ে উঠেছিলেন অধিকারী পরিবারের। ২০১৮-র পঞ্চায়েত নির্বাচনে কুরবানের নিজের এলাকা মাইশোরা বিরোধী শূন্য হয়। মাইশোরার প্রধান হন কুরবানের স্ত্রী সাইদা সাবানা বানু খাতুন। কুরবান হন পাঁশকুড়া ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি। গত লোকসভা নির্বাচনে পাঁশকুড়ায় দলের হয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন কুরবান। দলের মধ্যে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামাল দিয়ে সব পক্ষকে নিয়ে একজোট হয়ে ভোটের কাজ করেন। পাঁশকুড়ায় শুভেন্দু অধিকারীর কার্যত ‘ডানহাত’ হয়ে উঠেছিলেন তিনি।

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর তিনবার গ্রেফতার হন আনিসুর। তাঁর বিরুদ্ধে একাধিক মামলা দায়ের হয়। যার মধ্যে কুরবানকে দু’বার মারধরের ঘটনার মামলাও ছিল। বিজেপিতে যোগ দিলেও বিজেপি নেতা সিন্টু সেনাপতির সঙ্গে বারবার বিরোধে জড়িয়েছেন আনিসুর। পাননি দলীয় পদ। কুরবানের খুনের ঘটনার দিনই জেলা ছাড়েন আনিসুর। তাঁর দুটি মোবাইল নম্বরই বন্ধ। কুরবান খুনের ঘটনায় মূল চক্রী হিসেবে এফআইআর-এ তাঁর নাম রয়েছে।

তবে কুরবান খুনের পর পাঁশকুড়ায় দলের হাল কে ধরবেন সেটাই এখন ভাবাচ্ছে জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে। কুরবানের না থাকাটা যেমন তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়িয়েছে। তেমনই আনিসুরের অনুপস্থিতিকে স্থানীয় পুরনো বিজেপি কর্মীরা কার্যত ‘খুশি’। এই পরিস্থিতিতে পাঁশকুড়ায় রাজনৈতিক পট পরিবর্তন নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার কুরবানের দেহে মালা দিয়ে এক প্রবীণ তৃণমূল নেতা বলেই ফেললেন, ‘‘যে ধরনের খুনের রাজনীতি শুরু হল তাতে আমরা আতঙ্কিত।’’ পাঁশকুড়ায় কুরবান শা’র মতো ডাকাবুকো নেতার যে সত্যিই অভাব রয়েছে তা মানছেন জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। প্রায় পাঁচ বছর ধরে আনিসুরের সঙ্গে অধিকারী পরিবারের যে ঠাণ্ডা লড়াই চলছিল তার মধ্যভাগে ছিলেন কুরবান। তাঁর অনুপস্থিতিতে প্রতিপক্ষের চোখে চোখ রেখে লড়াই করার মতো নেতার খোঁজেই এখন ব্যস্ত তৃণমূল নেতৃত্ব।

কুরবানের মৃত্যু নিয়ে তৃণমূলের পাঁশকুড়া ব্লক সভাপতি দীপ্তি জানা বলেন, ‘‘কুরবানের মতো তরতাজা নেতা চলে যাওয়া দলের কাছে সত্যিই ক্ষতির। তবে দলে নেতার অভাব নেই। কুরবানের ফাঁকা জায়গা ঠিকই ভরাট হবে।’’ এখন দেখার বিধানসভা নির্বাচনের আগে পাঁশকুড়ায় তৃণমূল কাকে দায়িত্ব দেয়।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Crime Murder TMC Suvendu Adhikari
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE