Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
প্রোমোটার পেটানোয় অভিযুক্ত

নেতা নাকের ডগায়, তবু অধরা

দাবি অনুযায়ী তোলা দিতে না-চাওয়ায় রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছিল এক প্রোমোটারকে। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতা। মার খেয়ে নারায়ণ সাহা নামে ওই প্রোমোটার গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেও শাসক দলের সেই নেতাকে গ্রেফতার করেনি পাটুলি থানা। পুলিশের একাংশই বলছে, ওই প্রোমোটারের হাত-পা এবং পাঁজরের হাড় ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও পাটুলি থানার অফিসারেরা খুনের চেষ্টার কোনও মামলা রুজু করেননি।

প্রহৃত নারায়ণ সাহা। বৃহস্পতিবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।

প্রহৃত নারায়ণ সাহা। বৃহস্পতিবার সুদীপ আচার্যের তোলা ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ অক্টোবর ২০১৫ ০৩:২৮
Share: Save:

দাবি অনুযায়ী তোলা দিতে না-চাওয়ায় রাস্তায় ফেলে পেটানো হয়েছিল এক প্রোমোটারকে। সেই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এক তৃণমূল নেতা। মার খেয়ে নারায়ণ সাহা নামে ওই প্রোমোটার গুরুতর আহত অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরেও শাসক দলের সেই নেতাকে গ্রেফতার করেনি পাটুলি থানা। পুলিশের একাংশই বলছে, ওই প্রোমোটারের হাত-পা এবং পাঁজরের হাড় ভেঙে টুকরো হয়ে যাওয়া সত্ত্বেও পাটুলি থানার অফিসারেরা খুনের চেষ্টার কোনও মামলা রুজু করেননি।

পুলিশি সূত্রের খবর, নারায়ণবাবুর কাছে তিন লক্ষ টাকা তোলা চেয়েছিলেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা বিশ্বজিৎ সরকার ও তাঁর অনুগামীরা। কিন্তু নারায়ণবাবু অত টাকা দিতে রাজি হননি। তার জেরে ২ অক্টোবর রাতে রবীন্দ্রপল্লির কাছে ওই প্রোমেটারকে রাস্তায় ফেলে লোহার রড ও বাঁশ দিয়ে বেদম পেটানো হয়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে স্থানীয় একটি নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়েছিল। পাঁচ দিন হাসপাতালে কাটানোর পরে বুধবার সেখান থেকে ছাড়া পেয়েছেন নারায়ণবাবু।

বৃহস্পতিবার হাত-পা ও বুকে প্লাস্টার নিয়ে সে-দিনের হামলার বিবরণ দিচ্ছিলেন নারায়ণবাবু। তিনি জানান, টাকা না-দেওয়ায় তাঁকে বেশ কয়েক বার হুমকি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তিনি তাতে আমল দেননি। ২ অক্টোবর রাতে তিনি রবীন্দ্রপল্লিতে আড্ডা দিচ্ছিলেন। তখনই বিশ্বজিৎ এবং তাঁর দলবল এসে হামলা শুরু করেন। প্রথমে তাঁকে থাপ্পড় মারা হয়। তার পরে মাটিতে ফেলে লোহার রড ও বাঁশ দিয়ে বেধড়ক মার। খোদ নেতার ওই হামলা দেখে আশপাশের লোকজন পালিয়ে যায়। মারধর করে হামলাকারীরা চলে যাওয়ার পরে এলাকার কিছু যুবকই তাঁকে নার্সিংহোমে নিয়ে যান। সেই ঘটনার পরে প্রোমোটার পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছিলেন। কিন্তু সঙ্গে সঙ্গে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা নেয়নি।

তবে পুলিশের দাবি, নারায়ণবাবুর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা রুজু করে ১০১ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল সম্পাদক বিশ্বজিৎ সরকারের অনুগামী পিকেন্দু পাল ও বিকাশ দে-কে গ্রেফতার করা হয়েছিল। কিন্তু বিশ্বজিৎ এবং সুমিত দত্তের মতো অন্য অভিযুক্তেরা ফেরার। অনেক খুঁজেও তাঁদের হদিস মেলেনি।

বাসিন্দাদের অভিজ্ঞতা অন্য রকম। তাঁদের বক্তব্য, পুলিশ দেখা না-পেলেও বিশ্বজিৎ-সুমিতদের নিয়মিত দেখা যায় এলাকায়। বৃহস্পতিবারেও দাপিয়ে বেড়াতে দেখা গিয়েছে তাঁদের। পাটুলি থানার আশেপাশেও ঘোরেন তাঁরা।

বাসিন্দাদের এই বক্তব্য জানিয়ে পুলিশকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, অভিযুক্ত নেতাকে গ্রেফতার করা হচ্ছে না কেন? জবাব এড়িয়ে পাটুলি থানার এক কর্তা বলেন, ‘‘নারায়ণবাবু লোকটাও কিন্তু সুবিধের নয়।’’ বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ানো সত্ত্বেও শাসক দলের নেতাকে কেন ধরা হচ্ছে না, তার জবাব তো মেলেইনি। উপরন্তু নারায়ণবাবু কেন ‘সুবিধে’র লোক নন, তার কোনও ব্যাখ্যাও দিতে পারেননি ওই পুলিশ অফিসার।

এলাকাবাসীরা জানান, বিশ্বজিৎ-সুমিতদের বিরুদ্ধে আগেও বহু অভিযোগ উঠেছে। থানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। থানার একাংশের সঙ্গে শাসক দলের ঘনিষ্ঠতার অভিযোগও উঠছে। এক বাসিন্দা বললেন, ‘‘এই মাখামাখির জন্যই শাসক দলের নেতা-কর্মীরা অভিযুক্ত হলেও পুলিশ চোখ বুজে থাকে।’’ পুলিশকর্তারা এই সব অভিযোগ মানতে রাজি নন। পাটুলি থানার অফিসারেরা পরিষ্কার জানাচ্ছেন, বিশ্বজিৎদের বিরুদ্ধে তাঁরা আগে কোনও অভিযোগ পাননি।

পুলিশেরই একাংশের বক্তব্য, বিশ্বজিতেরা স্থানীয় কাউন্সিলর বাপ্পাদিত্য দাশগুপ্তের ঘনিষ্ঠ। বাপ্পাদিত্য আবার তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা ও প্রভাবশালী মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ। তাই অভিযুক্তেরা পার পেয়ে যাচ্ছে।

বাপ্পাদিত্যবাবু অবশ্য বিশ্বজিৎদের সঙ্গে নিজের ঘনিষ্ঠতার কথা অস্বীকার করেননি। তিনি বলেননি, ‘‘ওদের বিরুদ্ধে সব অভিযোগ মিথ্যা। আমি শুনেছি, ওখানে জুয়ার ঠেক ভাঙাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় কিছু লোকের মধ্যে বচসা হয়েছিল। আমাদের দলের কেউ ওই গলমালে জড়িত নয়।’’ তাঁর সংযোজন, ‘‘আমাকে ও দলকে হেয় করতেই এই ধরনের অভিযোগ করা হয়েছে।’’ কিন্তু অভিযোগকারী জানিয়ে দিয়েছেন, তিনি কোনও রাজনৈতিক দলের লোক নন।

প্রশ্ন উঠেছে, জুয়ার ঠেক ভাঙা নিয়ে গোলমাল বাধলে মাত্র এক জনই মার খেলেন কেন? কেনই বা পুলিশের বদলে এলাকার লোকজন আইন হাতে তুলে নিল? পুলিশ সেটা হতে দিলই বা কেন? তা হলে কি পুলিশ পাটুলি এলাকার অপরাধ দমন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ব্যর্থ?

বাপ্পাদিত্যবাবুর বক্তব্য, জুয়ার ঠেকে অনেকে ছিল। তারা পালিয়ে যাওয়ায় শুধু এক জনই মার খেয়েছে। পাটুলি থানাকে পরোক্ষে বিঁধেছেন তিনি। বলেছেন, ‘‘আমি বলব না, পুলিশ ব্যর্থ। কিন্তু থানা বারবার তল্লাশি করেও জুয়ার ঠেক খুঁজে পায় না।’’ পুলিশ খুঁজে না-পাওয়াতেই জনতা ক্ষুব্ধ হয়ে জুয়ার ঠেক ভাঙতে গিয়েছিল বলে কাউন্সিলরের দাবি। যদিও ওই এলাকার পুলিশের দাবি, কাউন্সিলরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE