Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বিদ্রোহে ইতি, ইস্তফা আনিসুরের

শুক্রবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনিক অফিসে এসে মহকুমা শাসকের দফতরে ইস্তফাপত্র জমা দেন আনিসুর। সঙ্গে ছিলেন তাঁর অনুগামী কাউন্সিলর শেখ সমিরুদ্দিন-সহ কয়েকজন।

পদত্যাগ পত্র জমা দিচ্ছেন আনিসুর। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

পদত্যাগ পত্র জমা দিচ্ছেন আনিসুর। ছবি: পার্থপ্রতিম দাস

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৭ ০২:১৩
Share: Save:

দলীয় নির্দেশ উড়িয়ে পাঁশকুড়া পুরসভার চেয়ারম্যান হয়েছিলেন তিনি। দল সাসপেন্ড করার পরেও পদ ছাড়েননি। শেষরক্ষা হল না। এক মাসের মধ্যেই পুর-চেয়ারম্যান পদে ইস্তফা দিলেন তৃণমূলের ‘বিদ্রোহী’ নেতা আনিসুর রহমান।

শুক্রবার দুপুরে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা প্রশাসনিক অফিসে এসে মহকুমা শাসকের দফতরে ইস্তফাপত্র জমা দেন আনিসুর। সঙ্গে ছিলেন তাঁর অনুগামী কাউন্সিলর শেখ সমিরুদ্দিন-সহ কয়েকজন। ইস্তফা দেওয়ার পরে সাংবাদিকদের সামনে আনিসুর বলেন, ‘‘আমি তৃণমূলের একজন অনুগত কর্মী। দলের নির্দেশ মেনেই পুরপ্রধানের পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছি।’’ তাহলে দলীয় নির্দেশ অমান্য করে পুরপ্রধান হয়েছিলেন কেন? আনিসুরের জবাব, ‘‘এ ক্ষেত্রে ধোঁয়াশা ছিল। তা ছাড়া, এটা দলের অভ্যন্তরীণ বিষয়। মন্তব্য করব না।’’ তবে উর্দু শায়েরি আওড়ে আনিসুরের তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, ‘‘মুঝে তো আপনো নেহি লুটা, গ্যায়রোঁ মে ক্যায়া দম থা/হামারি কস্তি উঁহা ডুবি, যাঁরা পানি কম থা।’’

এ বার পাঁশকুড়া পুরসভার নির্বাচনে ১৮টি ওয়ার্ডের মধ্যে ১৭টিতেই জেতে তৃণমূল। একটি আসন যায় বিজেপির ঝুলিতে। জয় নিরঙ্কুশ হলেও পুরবোর্ড গঠন পর্বে বেআব্রু হয়ে যায় তৃণমূলের গোষ্ঠী কোন্দল। তৃণমূলের তরফে নন্দকুমার মিশ্রকে চেয়ারম্যান বাছা হলেও তা মানেননি ১৫ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় জেতা কাউন্সিলর আনিসুর। গত ৬ সেপ্টেম্বর নন্দকুমার মিশ্রকে ১০-৮ ভোটে হারিয়ে চেয়ারম্যান হন আনিসুর। এরপরেই তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় তাঁকে ৬ বছরের জন্য দল থেকে সাসপেন্ডের কথা ঘোষণা করেন।

সাসপেন্ড হয়েও গোড়ায় দমেননি আনিসুর। জেলা তৃণমূলে ‘অধিকারী’দের একাধিপত্য নিয়ে প্রকাশ্যেই সরব হচ্ছিলেন। ক্রমে চাপের মুখে পড়েন তিনি। পেশায় প্রাথমিক স্কুল শিক্ষক আনিসুরের পাঁশকুড়া শহরে একটি নার্সিংহোম ও একটি বিএড কলেজ রয়েছে। তৃণমূল থেকে সাসপেন্ড হওয়ার পরেই তাঁর এই দুই সংস্থার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক তদন্তের তোড়জোড় শুরু হয়।

এই পরিস্থিতিতে চেয়ারম্যানের পদ থেকে ইস্তফা দেওয়া ছাড়া আনিসুরের সামনে অন্য রাস্তা ছিল না বলে মনে করছেন রাজনীতির পর্যবেক্ষকেরা। তৃণমূলের এক সূত্রে খবর, চাপের মুখে পিছু হটে আনিসুর দলের একাংশ রাজ্য নেতৃত্বের শরণাপন্ন হন। তাঁদের নির্দেশেই ইস্তফা দিয়েছেন তিনি। সিপিএমের ভারপ্রাপ্ত জেলা সম্পাদক প্রশান্ত প্রধানও বলেন, ‘‘নিজের অস্তিত্ব রক্ষা করতেই আনিসুর এই পদক্ষেপ করেছে। এতে পাঁশকুড়ার মানুষ ওদের চিনছেন।’’ আনিসুরের ইস্তফাকে অবশ্য গুরুত্ব দিচ্ছে না জেলা তৃণমূল। দলের জেলা সভাপতি শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘বহিষ্কৃত এই সব লোকের কোনও গুরুত্ব আমার কাছে নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE