Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

মনীষীদের পাশে তৃণমূলের নিহত নেতা নান্টুর মূর্তি! জোর বিতর্ক

ভগবানপুর ব্লকের মহম্মদপুর ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান নান্টু ছিলেন দাপুটে নেতা। সাধারণ কুয়োর মিস্ত্রি থেকে হয়ে উঠেছিলেন এলাকার শেষ কথা। অভিযোগের পাহাড় জমেছিল।সব কিছু ঠিকঠাক এগোলে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের পাশেই বসবে তৃণমূলের নিহত নেতা নান্টু প্রধানের মূর্তি।

মূর্তিমান: গড়া হচ্ছে নান্টু প্রধানের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

মূর্তিমান: গড়া হচ্ছে নান্টু প্রধানের মূর্তি। নিজস্ব চিত্র

গোপাল পাত্র
ভগবানপুর শেষ আপডেট: ১৫ জুলাই ২০১৮ ০৫:১৫
Share: Save:

ফিরছেন নান্টু। মূর্তি হয়ে।

সব কিছু ঠিকঠাক এগোলে সর্বপল্লী রাধাকৃষ্ণণের পাশেই বসবে তৃণমূলের নিহত নেতা নান্টু প্রধানের মূর্তি। পূর্ব মেদিনীপুরের ভগবানপুরে নান্টুর তৈরি বিএড কলেজ চত্বরেই মূর্তি বসবে। আশেপাশে রয়েছেন রবীন্দ্রনাথ, কাজী নজরুল, বিদ্যাসাগর, স্বামী বিবেকানন্দেরা।

ভগবানপুর ব্লকের মহম্মদপুর ১ পঞ্চায়েতের তৃণমূল উপপ্রধান নান্টু ছিলেন দাপুটে নেতা। সাধারণ কুয়োর মিস্ত্রি থেকে হয়ে উঠেছিলেন এলাকার শেষ কথা। অভিযোগের পাহাড় জমেছিল। গিয়েছিলেন শ্রীঘরে। পঞ্চায়েত ভোটের আগে নান্টু খুনের পরেও অভিযোগ উঠেছিল, জোর করে চিংড়ি চাষের ভেড়ি বানাতে গিয়েই মরতে হয়েছে তাঁকে।

সেই নান্টুর মূর্তি মনীষীদের পাশে! বিঁধতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। স্থানীয় বিজেপি নেতা দেবব্রত কর বলেন, ‘‘নান্টু এমন কিছু ভাল কাজ করেননি যে তাঁকে মানুষ মনে রাখবে। টাকা থাকলেই বড় মূর্তি বসানো যায়। কিন্তু মনীষী হওয়া যায় না।” তৃণমূলের স্থানীয় নেতাদের ব্যাখ্যা, এটা নান্টুর পরিবারের নিজস্ব বিষয়। কিন্তু নান্টু তো শাসক দলের নেতা ছিলেন? এ বার তৃণমূল নেতৃত্বের মুখে কুলুপ। দলের ব্লক সভাপতি মদনমোহন পাত্র শুধু বলছেন, ‘‘বিজেপির বক্তব্য প্রতিহিংসামূলক।’’

পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমূলের টিকিটে জিতেছেন নান্টুর বাবা চাঁদহরি প্রধান। তিনি জানালেন, ছেলের স্মৃতি আগলে রাখতেই মূর্তি বসানোর উদ্যোগ। একই সঙ্গে চাঁদহরির বক্তব্য, ‘‘যারা নান্টুর মূর্তি বসানোর সমালোচনা করছে, তারাই এক সময় নান্টুর থেকে সাহায্য নিয়েছে।’’ চাঁদহরির দাবি, ‘‘ভগবানপুরের মানুষের কাছে নান্টুর গুরুত্ব আগামী দিনেও থাকবে। মানুষের জন্য নান্টুর উপকার কেউ ভুলতে পারবে না।”

সত্যি কি তাই? এলাকায় ঘুরে দেখা গেল, কয়েক জন সহমর্মী থাকলেও অনেকেই দ্রুত ভুলতে চাইছেন নান্টু-পর্ব। গত ২৪ ফেব্রুয়ারি চিংড়ি চাষিদের সালিশি সভায় গিয়ে বাধা পান নান্টু। পালানোর চেষ্টা করেন। তবে কয়েক জন ধাওয়া করে লাঠি, ধারাল অস্ত্র দিয়ে খুন করে নান্টুকে। স্থানীয়দের অনেকেই বলছেন, ‘‘বেঁচে থাকতে যাঁকে কেউ শ্রদ্ধা করেনি, তাঁর মূর্তি বসিয়ে লাভ কী!’’ বিএড কলেজের পড়ুয়াদের একাংশও কলেজের প্রতিষ্ঠাতার মূর্তি সম্পর্কে উদাসীন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই প়ড়ুয়া বললেন, ‘‘মূর্তির কথা শুনেছি। তবে ঠিক কী হচ্ছে, বলতে পারব না।”

মূর্তির কাজ অবশ্য এগোচ্ছে। চাঁদহরি জানালেন, লোহার রড আর সিমেন্টে তৈরি সাড়ে পাঁচ ফুটের মূর্তি বসবে কলেজের সামনে, যেখানে নান্টুকে দাহ করা হয়েছিল সেখানে। এখন তার কাছেই রয়েছে রাধাকৃষ্ণণের মূর্তি। মূর্তি গড়ার বরাত পেয়েছেন শিউলিপুরের শিল্পী প্রাণকৃষ্ণ পয়ড়্যা। জুনে কাজ শুরু হয়েছে। জুলাইয়ের শেষ বা অগস্টের গোড়ায় ‘ডেলিভারি’ হবে। অনেকে নান্টুর মুখ ভুলতে চাইছেন। তবে প্রাণকৃষ্ণ ব্যস্ত নান্টুর মূর্তিতে প্রাণ ফোটাতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Statue Bhagabanpur Controversy TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE