Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

তৃণমূল নেতার খুনে ব্যান্ডেলে আতঙ্ক, অবরোধ

শনিবার সকালে ব্যান্ডেল স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের একপ্রান্তে রেললাইনে এলাকার তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়তেই আশপাশে থাকা লোকজন চিৎকার করে ওঠেন।

দিলীপ রাম। নিহত তৃণমূল নেতা।

দিলীপ রাম। নিহত তৃণমূল নেতা।

প্রকাশ পাল ও তাপস ঘোষ
শেষ আপডেট: ৩০ জুন ২০১৯ ০২:৩০
Share: Save:

স্টেশনের নানা আওয়াজ, ট্রেন ধরার তাড়ায় যাত্রীরা প্রথমে খেয়াল করেননি। কিন্তু হঠাৎ হইচই শুনে সকলের সংবিত ফেরে।

শনিবার সকালে ব্যান্ডেল স্টেশনের ৫ নম্বর প্ল্যাটফর্মের একপ্রান্তে রেললাইনে এলাকার তৃণমূল নেতা দিলীপ রাম গুলিবিদ্ধ হয়ে লুটিয়ে পড়তেই আশপাশে থাকা লোকজন চিৎকার করে ওঠেন। তাতেই যাত্রীরা অফিসের ব্যস্ত সময়ে প্রকাশ্যে খুনের কথা জানতে পারেন। মুহূর্তে আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়। বন্ধ হয়ে যায় স্টেশন রোডের দোকানপাট।

পাঁচ দিন আগে ব্যান্ডেলের নেতাজি পার্কে জিটি রোডের ধারে পড়ে থাকা কৌটোবোমা ফেটে হাত উড়ে গিয়েছিল আনাজ বিক্রেতা এক মহিলার। গত ২২ জুন চুঁচুড়ার বড়বাজারে গুলিতে খুন হয় এক দুষ্কতী। এ বার ব্যান্ডেল স্টেশনে খুন। অনেকেরই অভিযোগ, ব্যান্ডেল-চুঁচুড়া এলাকা কার্যত দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল হয়ে উঠেছে। ভোটের সময়ে কিছু দিন দৌরাত্ম্য বন্ধ থাকলেও ফের দুষ্কৃতীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। না-হলে ব্যস্ত স্টেশন এলাকায় প্রকাশ্যে গুলি করে কী করে পালায় দুষ্কৃতীরা!

ঘটনার এক প্রত্যক্ষদর্শীর কথায়, ‘‘ট্রেন ধরার জন্য পাঁচ নম্বর প্ল্যাটফর্মে দাঁড়িয়েছি‌লাম। হঠাৎ দেখলাম, দু’টো ছেলে এক জনকে গুলি করল। লোকটা মুখ থুবড়ে রেললাইনে পড়ল। দুষ্কৃতীরা হেঁটে প্ল্যাটফর্মের শেষ প্রান্তে অর্থাৎ ব্যান্ডেল ফাঁড়ির কাছে রাস্তায় নেমে গেল। সকাল সওয়া ন’টায় ব্যস্ত এই স্টেশনে এই ঘটনা ভাবা যায়!’’ পুলিশের অনুমান, ‘অপারেশন’ সেরে দুষ্কৃতীরা মোটরবাইকে চেপে ব্যান্ডে‌ল ফাঁড়ির পাশের রাস্তা ধরে রেলের কমিউনিটি সেন্টারের সামনে দিয়ে পালায়।

স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব এবং নিহত দিলীপের পরিবারের লোকজন এই ঘটনায় বিজেপির বিরুদ্ধেই অভিযোগ তুলেছেন। নিহতের স্ত্রী রিতা সিংহ বলেন, ‘‘আট-দশ দিন আগে বিজেপির লোকেরা ওকে খুনের হুমকি দিয়েছিল।’’ এমনকি, পাঁচ দিন আগে নেতাজি পার্কে কৌটোবোমা বিস্ফোরণেও দিলীপকে খুনের চক্রান্তই দেখছেন পরিবারের লোকেরা। নেতাজি পার্কের একটি আবাসনেই দিলীপ থাকতেন। বোমাটি সেই আবাসনের পাশেই রাখা ছিল। অভিযোগ, দিলীপের উপরে হামলার জন্যই ওই বোমা রাখা হয়ে থাকতে পারে। কিন্তু পুলিশ সতর্ক হয়নি। স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক অসিত মজুমদারের অভিযোগ, ‘‘দুষ্কৃতীরা দিলীপকে আগেও মারার চেষ্টা করেছিল। পুলিশকে জানিয়েছিলাম। কিন্তু পুলিশ ওদের ধরেনি।’’

বিজেপি দিলীপকে খুনের অভিযোগ মানেনি। দলের হুগলি কেন্দ্রের সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায় এর পিছনে তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বকে দুষেছেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘দুষ্কৃতী যে দলেরই হোক, পুলিশ গ্রেফতার করুক।’’ চন্দননগর কমিশনারেটের কর্তারা জানিয়েছেন, দুষ্কৃতীদের ধরার এবং অস্ত্র উদ্ধারের চেষ্টা চলছে। ময়না-তদন্তের পরে এ দিন বিকেলে ব্যান্ডেল মোড়ে নিহত দিলীপের দেহ রেখে প্রায় ৪৫ মিনিট জিটি রোড অবরোধ করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC leader Bandel Murder
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE