Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Mamata Banerjee

জলাধার চাই, দিদির দ্বারস্থ দলেরই বিধায়ক

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের তৃণমূল বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধানের সেই চিঠি ঘিরে আলোড়ন পড়েছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে এমন অজস্র চিঠি দেখেছি। এই প্রথম কোনও বিধায়কের চিঠি দেখলাম।’’

বিক্রমচন্দ্র প্রধান

বিক্রমচন্দ্র প্রধান

বরুণ দে
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:২৪
Share: Save:

চিঠিটা দেখে চমকে গিয়েছিলেন জেলা প্রশাসনের এক কর্তা। অভিযোগকারী যে খোদ শাসকদলের বিধায়ক!

জনপ্রতিনিধি হিসেবে জল-রাস্তা-নিকাশি সমস্যার সমাধানই যাঁর কাজ, তিনিই কিনা জলাধার-সহ জলপ্রকল্প গড়ে তোলার দাবিতে মুখ্যমন্ত্রীর দফতরে চিঠি লিখেছেন!

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাঁতনের তৃণমূল বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধানের সেই চিঠি ঘিরে আলোড়ন পড়েছে জেলা প্রশাসনের অন্দরে। জেলা প্রশাসনের এক কর্তা বলছিলেন, ‘‘গত কয়েক মাসে এমন অজস্র চিঠি দেখেছি। এই প্রথম কোনও বিধায়কের চিঠি দেখলাম।’’

রাজ্যবাসীর অভাব-অভিযোগের প্রতিকারে ‘দিদিকে বলো’ কর্মসূচি শুরু করেছে তৃণমূল। পাশাপাশি, মুখ্যমন্ত্রীর দফতরও (সিএমও) মানুষের মন বুঝছে। সিএমও-য় খোলা হয়েছে ‘গ্রিভান্স অ্যান্ড রিড্রেসাল সেল’। ইতিমধ্যে তার টোল ফ্রি ফোন নম্বর ও ই-মেল আইডি রাজ্য জুড়ে ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই সেলে আসা অভিযোগের নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া নিয়মিত নজরে রাখতে পুরো পদ্ধতিটাই অনলাইন করা হয়েছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, ওই সেলেই চিঠি দিয়েছেন তৃণমূল বিধায়ক বিক্রম। তাঁর আর্জি, পানীয় জলের সমস্যা মেটাতে দাঁতনের তররুইয়ের পালসন্দাপুরে জলাধার-সহ একটি জলপ্রকল্প গড়ে তোলা হোক। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষে এই প্রকল্পের ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়। তাই বিধায়কের দাবি, জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর উদ্যোগী হোক। সিএমও হয়ে ওই চিঠি জেলায় পৌঁছেছে। জেলা থেকে চিঠি গিয়েছে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরে। রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র পশ্চিম মেদিনীপুরেরই পিংলার বিধায়ক। সৌমেন বলেন, ‘‘ওখানে জলপ্রকল্প করা যায় কি না তা দফতরের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে দেখতে বলেছি। নিশ্চয়ই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।’’ দফতরের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার (মেদিনীপুর) স্বামীদীপ ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘দাঁতনের বিষয়টি দেখছি।’’

প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, জলাধার তৈরির খরচ কম নয়। পাঁচ লক্ষ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার তৈরিতে খরচ হতে পারে দেড়-দু’কোটি টাকা। ২০ লক্ষ লিটার ক্ষমতাসম্পন্ন জলাধার করতে খরচ হতে পারে আড়াই-তিন কোটি টাকা। একজন বিধায়ক বছরে তাঁর নিজস্ব তহবিলে ৬০ লক্ষ টাকা পান। তবে সাধারণত বিধায়ক তহবিলের টাকায় জলাধার তৈরির মতো কাজ হয় না। এমন প্রকল্প মূলত জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরই রূপায়ণ করে।

প্রশ্ন উঠেছে, বিধায়ক তো চাইলে সরাসরি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরেই বিষয়টি জানাতে পারতেন! তাহলে সেটা করলেন না কেন? বিক্রমের জবাব, ‘‘কাজটা যাতে তাড়াতাড়ি হয় সেই জন্যই ওই চিঠি দিয়েছি।’’

বিষয়টি নিয়ে বিঁধছে বিরোধীরা। বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশের কটাক্ষ, ‘‘যে রাজ্যে কাজের জন্য বিধায়ককে গ্রিভান্স সেলে যেতে হয়, সেখানে উন্নয়নের কী দশা মানুষ টের পাচ্ছেন।’’ দলের বিধায়কের এমন পদক্ষেপে অস্বস্তিতে জেলা তৃণমূলও। দলের জেলা সভাপতি অজিত মাইতি বলেন, ‘‘দাঁতনের বিষয়টি জানি না। খোঁজ নিচ্ছি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Mamata Banerjee Bikram Chandra Pradhan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE