Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
TMC

অধীর-বধের লক্ষ্যেই পুরনো ‘সেনারা’ পদে

কংগ্রেস-ত্যাগের পরে সেই অশোক দাস এখন মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র। সঙ্গে জুটল নতুন পালক, জেলা কো-অর্ডিনেটর।

অধীররঞ্জন চৌধুরী

অধীররঞ্জন চৌধুরী

সুজাউদ্দিন বিশ্বাস
ডোমকল শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২০ ০৩:০৪
Share: Save:

কংগ্রেসে ফিরে মাস কয়েকের মধ্যেই অধীর চৌধুরীর প্রায় দক্ষিণ হস্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। নির্বাচনী কৌশল থেকে ‘দাদ’র মেজাজ কিসে বিগড়ে যায়, খুঁটিনাটি সবই জানা হয়ে গিয়েছিল তাঁর। কংগ্রেস-ত্যাগের পরে সেই অশোক দাস এখন মুর্শিদাবাদ জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র। সঙ্গে জুটল নতুন পালক, জেলা কো-অর্ডিনেটর।
তালিকায় দ্বিতীয় জন অধীরের একদা শ্যালক, প্রয়াত স্ত্রী অর্পিতার ভাই, অরিত মজুমদার। জামাইবাবুর সঙ্গে মন কষাকষির পরে তৃণমূলে পা বাড়ানো অরিত বহরমপুর শহর কংগ্রেসের পদাধিকারী হলেও দলের দাপুটে নেতা বলতে যা বোঝায় তা ছিলেন না। তবে দলের অন্দরের খবর, কো-অর্ডিনেটরের পদ পাওয়ার ক্ষেত্রে তাঁর প্লাস পয়েন্ট অবশ্য আলাদা। অধীরে নাড়ি-নক্ষত্র, ভোট-স্ট্র্যাটেজি নখদর্পণে অরিতের।
মান্নান-পুত্র সৌমিক যুব কংগ্রেসের নেতা থাকার সময়েই তৃণমূলে পা বাড়ালেও রাজনৈতিক পরিবারে বড় হওযার দরুন কংগ্রেস তথা অধীরের ঘোঁতঘাঁত অনেকটাই তাঁর জানা। দলের জেলা পর্যবেক্ষক হয়ে শুভেন্দু অধিকারী মুর্শিদাবাদের দায়িত্ব পাওয়ার পরে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন ঘোষিত অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়-পন্থী সৌমিক। কো-অর্ডিনেটর করে দলে তাঁকে পুনপ্রতিষ্ঠা দেওয়ার পিছনে একই সঙ্গে দু’টো কারণ দেখছেন তৃণমূলের পোড় খাওয়া ভোট-কুশলীরা। তাঁদেরই এক জনের কথায়, ‘‘সৌমিককে ফিরিয়ে আনা মানে, একই সঙ্গে শুভেন্দুকে বার্তা দিয়ে অভিষেকের হারানো মর্যাদা ফিরিয়ে আনা এবং কংগ্রেসের পুরনো বোলচাল সম্পর্কে সৌমিকের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগানো।’’
বিধানসভা নির্বাচন বছর খানেকের দূরত্বে। এই অবস্থায় এই তিন নেতার হাতে একদা কংগ্রেসের গড় বলে পরিচিত মুর্শিদাবাদকে তুলে দেওয়ার পিছনে কংগ্রেসই যে এই জেলায় মূল প্রতিপক্ষ তা বুঝিয়ে দিলেন দলনেত্রী, এমনই দাবি বিরোধীদের। সেই সঙ্গে কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার প্রশ্নে ঘোর মমতা-বিরোধী বলে পরিচিত অধীরকে আগাম চ্যালেঞ্জও জানিয়ে রাখলেন তিনি। জেলা তৃণমূল সভাপতি আবু তাহের খান অবশ্য বিরোধীদের এ সব তত্ত্বে, আমল দিচ্ছেন না। বছর দুয়েক আগেও অধীর-ঘনিষ্ঠ আবু তাহের বলছেন, ‘‘"দিদি আরও অনেক বেশি জনকে দায়িত্ব দিয়েছেন, এক সঙ্গে মিলেমিশে কাজ করতে হবে।’’
জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস অবশ্য এই নয়া পদ দেখে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না, ‘‘এখন দেখার এই জমিদারিটা তুলে দেয় কিনা তৃণমূল! মনে রাখবেন, এমন আরও অনেক নতুন পদ তৈরি করতে হবে তৃণমূলে, কিন্তু কাজের কাজ হবে না।’’
জেলা তৃণমূল নেতারা অবশ্য মানছেন না, অধীর এবং কংগ্রেসকে প্রতিপক্ষ করেই এই নয়া ভোট-কৌশল। অশোক দাস বলেছেন, ‘‘অধীর আর কোনও ফ্যাক্টর নয়, জেলার দু’টো লোকসভা আসন আমাদের দখলে। বহরমপুরও লড়াই হয়েছে সেয়ানে সেয়ানে। আমাদের লক্ষ্য এখন জেলার ২২টি বিধানসভা বিরোধী-শূন্য করা।’’ সৌমিক তাঁর চেনা সুরে ফের আওড়েছেন, ‘‘আমার নেতা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নেত্রী মমতা ব্যানার্জি। ওঁরা আমার উপরে ভরসা রেখেছেন, তাঁদের ভরসার যোগ্য মর্যাদা দেব আমি।’’ তুলনায় সুর কিছু নীচু রেখেই অরিত মজুমদার বলেন, ‘‘শহর থেকে ব্লক, নতুন করে সাজিয়ে তোলা হবে সংগঠন। স্বচ্ছতাই আমাদের লক্ষ্য।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

TMC Adhir Ranjan Chowdhury
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE