Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪
জেল বিজেপি কর্মীদের

হারার ভয়ে হামলা, মত দিলীপের

 বিজেপি-র জমায়েত দেখেই পঞ্চায়েত ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে তৃণমূল তাঁদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে বলে মন্তব্য করলেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রবিবার সন্ধ্যায় দিলীপবাবু ওন্দার রামসাগরের হামলা হওয়া দলীয় কার্যালয় পরিদর্শনে আসেন। সেখানেই তিনি ওই মন্তব্য করেন।

রামসাগরের পার্টি অফিসে দিলীপ ঘোষ। ছবি: শুভ্র মিত্র

রামসাগরের পার্টি অফিসে দিলীপ ঘোষ। ছবি: শুভ্র মিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
ওন্দা শেষ আপডেট: ২২ জানুয়ারি ২০১৮ ০১:২৫
Share: Save:

বিজেপি-র জমায়েত দেখেই পঞ্চায়েত ভোটে হেরে যাওয়ার ভয়ে তৃণমূল তাঁদের পার্টি অফিস ভাঙচুর করেছে বলে মন্তব্য করলেন দলের রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। রবিবার সন্ধ্যায় দিলীপবাবু ওন্দার রামসাগরের হামলা হওয়া দলীয় কার্যালয় পরিদর্শনে আসেন। সেখানেই তিনি ওই মন্তব্য করেন।

শুক্রবার ওই পার্টি অফিস লাগোয়া মাঠেই দিলীপবাবুরা সভা করে যান। শনিবার বিকেলে সেই মাঠেই পাল্টা সভা করে তৃণমূল। সভা চলাকালীনই বিজেপির পার্টি অফিসে হামলা হয়। অফিস লাগোয়া কিছু বাড়িতেও ইট-পাটকেল ছোড়া হয় এবং বাসিন্দাদের কয়েকজনকে সামনে পেয়ে মারধরের অভিযোগ ওঠে তৃণমূলের লোকজনের বিরুদ্ধে। তৃণমূলের পাল্টা অভিযোগ, তাদের এক কর্মীকে মারধর করে মাথা ফাটিয়ে দেয় বিজেপি কর্মীরা। সেই ঘটনায় শনিবার তেতে ওঠে রামসাগর।

ওই ঘটনায় রাতেই পুলিশ তৃণমূলের অভিযোগের ভিত্তিতে ওন্দা মণ্ডলের দুই সাধারণ সম্পাদক দেবনারায়ণ চক্রবর্তী, বিশ্বজিৎ শতপথী-সহ ১৩ জনকে গ্রেফতার করে। এ দিন তাঁদের বাঁকুড়া আদালতে তোলা হয়। ২৯ জানুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের জেল হাজত হয়েছে।

এ দিন রানিগঞ্জে সভা করে ফেরার পথে দিলীপবাবু রামসাগরের পার্টি অফিসে যান। এ দিনও অফিসের সামনে ভাঙচুর করা চেয়ারের টুকরো চারপাশে ছড়িয়ে ছিল। ঘুরে দেখে তিনি দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলেন। পাশের বাড়ি থেকে মহিলারা বেরিয়ে এসে দিলীপবাবুর কাছে অভিযোগ করেন, তাঁদের বাড়িতেও শনিবার বিকেলে হামলা হয়েছে। তাঁদেরও মারধর করা হয় বলে অভিযোগ তোলেন কয়েকজন মহিলা।

পরে দিলীপবাবু দাবি করেন, ‘‘সে দিনের আমাদের সমাবেশে ২০ হাজার লোকের জমায়েত দেখে তৃণমূল ভয় পেয়েছে। ভাবছে পঞ্চায়েতে সব পাল্টে যাবে, পরিবর্তন হয়ে যাবে। পার্টি অফিসের চেয়ার, টেবিল ভাঙচুর করল ওরা। মহিলাদেরও মারধর করা হল। আমরা যাতে পিছিয়ে যাই, সে জন্য ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টি করেছে ওরা। কিন্তু সাধারণ মানুষ এ সব দেখে ক্ষিপ্ত হয়ে যাচ্ছে।’’ পুলিশেরও সমালোচনা করেন তিনি। তিনি অভিযোগ তোলেন— ‘‘প্রশাসন নেই, পুলিশ নেই, কী ভাবে বাংলা চলবে? পুলিশ দর্শকের ভূমিকা নিচ্ছে। সাধারণ মানুষ এর প্রতিবাদ করবেন, পরিবর্তন করবেন, এটাই আমাদের আশা।’’

তাঁর দাবি, ‘‘যত দিন যাচ্ছে মানুষ তত ওদের বিপক্ষে চলে যাচ্ছে। ওরা বেপরোয়া হয়ে হিংসার কথা বলছে। এ ভাবে কেউ ক্ষমতায় থাকতে পারেনি, পারবেও না। পঞ্চায়েত ভোট যত এগোচ্ছে, তত ভয় দেখাচ্ছে, অত্যাচার করছে।’’

হামলার ঘটনায় ২৪ ঘণ্টা পরেও পুলিশ কেন কাউকে গ্রেফতার করল না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপি-র বিষ্ণুপুর সাংসঠনিক জেলার সহ-সভাপতি বংশী দে-র অভিযোগ, ‘‘ভাঙচুর করল তৃণমূল। কিন্তু গোলমালের মিথ্যা অভিযোগে পুলিশ আমাদেরই ১৩ জনকে গ্রেফতার করল!’’ তাঁর দাবি, ওন্দার আগরদা গ্রামে এ দিন দুপুরেও দুই বিজেপি কর্মীকে মারধর করেছে তৃণমূলের লোকেরা।

জেলা সভাধিপতি তথা জেলা তৃণমূল নেতা অরূপ চক্রবর্তী শনিবার মঞ্চ থেকেই উস্কানিমূলক মন্তব্য করার পরে হামলা হয় বলে অভিযোগ। তিনি কোনও তৃণমূল কর্মীকে গ্রেফতার করা যাবে না বলেও পুলিশকে মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারী দিয়েছিলেন। সেই প্রসঙ্গে টেনে জেলা বিজেপি নেতৃত্বের মন্তব্য, ‘‘তৃণমূল নেতার কথা অমান্য করার মতো বুকের পাটা পুলিশের আছে নাকি? সে জন্যই কেউ গ্রেফতার হচ্ছে না।’’

অরূপবাবুর পাল্টা দাবি, ‘‘বিজেপি নেতারাই তো বলছেন, পুলিশ সুপার নাকি তৃণমূল জেলা সভাপতি। তাহলে তাঁরা কী ভাবে আশা করেন, তৃণমূল কর্মী গ্রেফতার হবে? যারা গোলমাল পাকিয়েছিল, তারাই এখন জেলে।’’

বিজেপি-র বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলা কমিটির নেতা অমর শাখা দাবি করেন, ‘‘শনিবার অনেক রাত পর্যন্ত তৃণমূল কর্মীদের থানায় জমায়েতের জন্য আমরা অভিযোগ জানাতে যেতে পারিনি। তবে দলের জেলা নেতৃত্ব এ দিন বাঁকুড়া পুলিশের ওয়েসবাইটে অভিযোগ দায়ের করেছে।’’ বাঁকুড়া জেলা পুলিশ সুপার সুখেন্দু হীরা বলেন, ‘‘থানায় এ দিন পর্যন্ত বিজেপি-র তরফে লিখিত ভাবে কোনও অভিযোগ দায়ের করা হয়নি। জেলা পুলিশের ওয়েবসাইটে কোনও অভিযোগ ওঁরা করেছেন কি না, দেখছি।’’

শনিবার রাত থেকেই রামসাগর বাসস্ট্যান্ড এলাকা কার্যত সুনসান হয়ে গিয়েছে। এ দিনও এলাকার পরিস্থিতি ছিল থমথমে। দিনভর চলে পুলিশের টহল। স্থানীয় বিজেপি নেতৃত্বের অভিযোগ, তৃণমূলের অভিযোগে পুলিশ কখন কাকে ধরতে আসে, এই ভয়ে দলের অনেক কর্মী-সমর্থকই বাড়ি ছাড়া হয়ে রয়েছেন। কবে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে, তা নিয়ে সংশয়ে তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

BJP Party Office Vandalism Dilip Ghosh TMC
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE