Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

চোলাই কারবারে মদত দিচ্ছেন তৃণমূলের উপপ্রধান, অভিযোগ আবগারি দফতরের

মহকুমার দু’টি পঞ্চায়েত এলাকায় চোলাইয়ের রমরমা কারবার চলার খবর পেয়ে হানা দিয়েছিল আবগারি দফতর। আর তাতেই এলাকার একটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে চোলাইয়ের কারবারে মদত দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সোরগোল পড়ে গিয়েছে।

নুরুল আবসার
উলুবেড়িয়া শেষ আপডেট: ০৭ জুলাই ২০১৫ ০২:২২
Share: Save:

মহকুমার দু’টি পঞ্চায়েত এলাকায় চোলাইয়ের রমরমা কারবার চলার খবর পেয়ে হানা দিয়েছিল আবগারি দফতর। আর তাতেই এলাকার একটি পঞ্চায়েতের উপপ্রধান ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে চোলাইয়ের কারবারে মদত দেওয়ার অভিযোগকে কেন্দ্র করে সোরগোল পড়ে গিয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে উলুবেড়িয়া ১ ব্লকের ধুলাসিমলা ও হীরাপুর পঞ্চায়েতে। তৃণমূল শাসিত ধুলাসিমলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান ও তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে চোলাইয়ের কারবারে মদত দেওয়ার অভিযোগ জানিয়েছে খোদ আবগারি দফতর। ওই দু’জনের বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছে বলে আবগারি দফতর সূত্রের খবর। দলীয় পঞ্চায়েত উপ প্রধান ও তাঁর ছেলে তথা স্থানীয় নেতার বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ ওঠায় স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্ব স্পষ্টতই অস্বস্তিতে।

স্থানীয় সূত্রে খবর, ধুলাসিমলা এবং হীরাপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে চোলাই মদের কারবার চলছে। মাস দুয়েক আগে আবগারি দফতরের উলুবেড়িয়া রেঞ্জের পক্ষ থেকে তা বন্ধ করতে অভিযান চালানো হয়। অভিযোগ ধুলাসিমলা গ্রাম পঞ্চায়েতের উপ-প্রধান গোপী বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর ছেলে উলুবেড়িয়া দক্ষিণ যুব তৃণমূল সভাপতি দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায় আবগারি দফতরের আধিকারিকদের বাধা দেন। বাধা পেয়ে ফিরে এসে তাঁরা বিষয়টি লিখিতভাবে উলুবেড়িয়া থানায় জানান।। কিন্তু তাতে কোনও কাজ হয়নি বলে আবগারি দফতরের অভিযোগ। এই অবস্থায় চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান কার্যত বন্ধই করে দিয়েছেন দফতরের আধিকারিকেরা।

বাধা দানের ঘটনাটি ঘটে গত ১০ মে রাত সাড়ে ১২টা নাগাদ। গোপন সূত্রে খবর পেয়ে আবগারি দফতরের উলুবেড়িয়া রেঞ্জের ডেপুটি এক্সাইজ কালেক্টর সৈয়দ মালেকুজ্জামান দু’জন আধিকারিককে নিয়ে মোটরবাইকে যান ধুলাসিমলায়। সেখানে গিয়ে তাঁরা দেখেন, একটি বড় ট্রাক থেকে চিটেগুড় নামানো হচ্ছে। এই চিটেগুড় চোলাই তৈরির কাজে লাগে। প্রসঙ্গত, হীরাপুর এবং ধুলাসিমলা পঞ্চায়েতের মদাই, শাখাভাঙা প্রভৃতি জায়গা চোলাইয়ের আঁতুড়ঘর। চিটেগুড় ধুলাসিমলায় নামিয়ে তা নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল ওই সব গ্রামে। আবগারি দফতরের আধিকারিকেরা চিটেগুড় ভর্তি ট্রাকটি আটক করেন। ট্রাকে ৩৬৪ ড্রাম চিটেগুড় ছিল। অভিযোগ, একটু পরেই শ’খানেক লোক নিয়ে সেখানে হাজির হন দেবাশিসবাবু। তিনি প্রথমে ড্রামগুলি বাজেয়াপ্ত করার কাগজপত্র তাঁকে দিয়ে দেওয়ার জন্য আবগারি দফতরের আধিকারিকদের অনুরোধ করেন। রাজি না হওয়ায় তাঁদের হাত থেকে সব কাগজপত্র কেড়ে নিয়ে ছিড়ে দেওয়া হয় বলে ওই আধিকারিকদের অভিযোগ। তাঁদের হুমকি ও গালাগালি করার অভিযোগও উঠেছে। শুধু দেবাশিসবাবুই নন, মোবাইল ফোনে বাড়ি থেকে গোপীবাবুও তাঁদের হুমকি দেন বলে আধিকারিকদের অভিযোগ।

চারজন পুলিশকর্মী থাকলেও এত লোকের ভিড়ে তাঁরা গোলমাল থামাতে কোনও ভূমিকা নেননি বলেও আবগারি দফতরের আধিকারিকদের অভিযোগ। এই অবস্থায় তাঁরা আরও পুলিশ চেয়ে উলুবেড়িয়া থানায় ফোন করলেও তা আসেনি। অভিযানে থাকা আবগারি দফতরের এক আধিকারিক জানান, থানা থেকে বলা হয় বাড়তি পুলিশ যেতে দেরি হবে। এই অবস্থায় বাধ্য হয়ে চিটেগুড়ের সমস্ত ড্রাম চোলাই কারবারিদের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরদিনই গোপীবাবু এবং দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে এফআইআর করেন আবগারি দফতরের আধিকারিকেরা।

গোপীবাবু অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘‘ওই রাতে কয়েক জন গরিবমানুষ আমার বাড়িতে এসে জানায় তাদের হেনস্থা করছে আবগারি দফতরের লোকেরা। আমি তখন ডেপুটি কালেক্টরকে টেলিফোনে বলি, ‘এইসব চিটেগুড় তো বড়বাজার থেকে আসছে। সেখানে গিয়ে এই ব্যবসা বন্ধ করুন না। গরিব মানুষদের উপরে অত্যাচার করছেন কেন।’ আমি এ কথা বলার পরই তিনি ফোন কেটে দেন। তাঁকে কোনও হুমকি দিইনি বা গালিগালাজ করিনি। অথচ আমার বিরুদ্ধে এফআইআর হল।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘চোলাইকে প্রশ্রয় দেওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। কোনও সভ্য মানুষ এটা করে নাকি?’’

অন্যদিকে দেবাশিসবাবুর বক্তব্য, ‘‘মদাই, শাঁখাভাঙায় দীর্ঘদিন ধরে চোলাইয়ের কারবার চলে। আবগারি দফতরেরর লোকেরাই ঘুষ খেয়ে এ সব চালান। স্থানীয় ক্লাবের ছেলেরা সব জানে। যেহেতু আমি ওই ক্লাবের সম্পাদক তাই, সেদিন রাতে ঘটনাস্থলে না থাকা সত্ত্বেও আবগারি দফতর আমার বিরুদ্ধে পুলিশের কাছে মিথ্যা অভিযোগ করেছে।’’

পুরো বিষয়টি নিয়ে অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি মালেকুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘‘যা জানানোর আমার উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। সাংবাদিকদের কাছে কোনও মন্তব্য করব না।’’ এ দিকে গোপীবাবু এবং দেবাশিসবাবুর বিরুদ্ধে পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নেওয়ায় ওইসব এলাকায় চোলাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো যাচ্ছে না বলে আবগারি দফতর সূত্রের খবর। পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE