প্রতীকী ছবি
ধর্মতলার শপিং মল থেকে টি-শার্ট কেনার দিন চারেক পরে সেই পোশাকে খুঁত দেখতে পান ক্রেতা। ত়ড়িঘড়ি সংশ্লিষ্ট দোকানে টি-শার্ট পাল্টাতে গিয়ে কোনও লাভ হয়নি উল্টোডাঙার বাসিন্দা রমেন পালের। হয়রানিই সার। মলের সেই দোকানের তরফে তখন তাঁকে সটান বলে দেওয়া হয়েছিল, রসিদেই তো লেখা আছে, এক বার জিনিস কেনার পরে তা আর ফেরত বা পাল্টানো হয় না!
উল্টোডাঙার রমেনবাবু একা হয়রান হননি। সারা রাজ্যে বিক্রেতাদের ইচ্ছেমতো শর্ত লেখা দেওয়া এই ধরনের রসিদ নিয়ে হাজার হাজার ক্রেতা হয়রানির শিকার হয়ে চলেছেন। অথচ পণ্য বিক্রির রসিদে এই ধরনের ঘোষণা বেআইনি। এমন বেআইনি রসিদ দেওয়া ঠেকাতে কেন্দ্র বারবার চিঠি লিখে সতর্ক করেছে রাজ্য সরকারকে। এটা যে প্রতারণা, তা-ও জানানো হয়েছে। ক্রেতা সুরক্ষা দফতর সূত্রের খবর, এই ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে অন্যান্য রাজ্য সদর্থক ব্যবস্থা নিলেও অনেকটাই পিছিয়ে আছে পশ্চিমবঙ্গ।
ক্রেতা সুরক্ষা দফতর জানাচ্ছে, কোনও পণ্য কেনার পরে বিক্রেতা ক্রেতাকে যে-রসিদ দেন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তাতে লেখা থাকে, ‘এক বার সামগ্রী কেনার পরে তা আর বদল বা ফেরত হবে না। টাকাও ফেরত পাবেন না।’ অথচ ১৯৮৬ সালের ক্রেতা সুরক্ষা আইনের ১৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী রসিদে বিক্রেতার তরফে এই ধরনের শর্ত বা ঘোষণা পুরোপুরি বেআইনি। ১৯৯৯ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী শান্তা কুমার রসিদে এমন কথা লেখা বন্ধ করতে সব রাজ্য সরকারকেই চিঠি লিখে বিশেষ ভাবে সতর্ক করে দিয়েছিলেন। তার পরেও এ রাজ্যে আশানুরূপ ফল না-মেলায় ২০১১ সালে তৎকালীন কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা সচিব রাজ্যকে চিঠি লিখে ফের সতর্ক করে দেন। কিন্তু এ রাজ্যের বিক্রেতাদের একাংশ রসিদে ওই আইনি ধারা লঙ্ঘন করেই চলেছেন।
কেন্দ্রের নোটিস কেরল, গুজরাত, কর্নাটক, বিহার, অন্ধ্রে বেশ কার্যকর ভূমিকা নিয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রের খবর, ১৮ বছর আগে নোটিস পেয়ে ওই সব রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতর ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে বিভিন্ন ভাবে প্রচার চালিয়েছিল। আইন ভাঙলে লাইসেন্স বাতিল করা হবে বলেও সতর্ক করা হয় বিক্রেতাদের। তাতে উল্লেখযোগ্য ফলও মিলেছে।
কেন্দ্রীয় ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রক বারবার সতর্ক করা সত্ত্বেও পশ্চিমবঙ্গ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে না কেন?
রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের অধিকর্তা শেখর রায় বলেন, ‘‘ব্যবসায়ীদের সচেতন করতে আমাদের প্রচারে ঘাটতি থাকলেও আমরা হাত গুটিয়ে বসে নেই। জেলা জুড়ে বিক্রেতাদের নিয়ে বৈঠক করেছি। কলকাতার একটি মোবাইল ও ঘড়ি বিক্রয়কারী সংস্থাকে নোটিস পাঠানো হয়েছে। ওই সংস্থা রসিদও বদলে ফেলেছে।’’ আইন ভঙ্গকারী বিক্রেতাদের বিরুদ্ধে দফতর কি স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে ব্যবস্থা নিতে পারে না? অধিকর্তার কথায়, ‘‘জেলে ঢোকানোর সংস্থান আমাদের নেই। ক্রেতারা সংশ্লিষ্ট বিক্রেতার বিরুদ্ধে আমাদের দফতরে অভিযোগ করলে আমরা সেই সব বিক্রেতার নোটিস দিয়ে সতর্ক করে দিতে পারি।’’
রাজ্যের ক্রেতা সুরক্ষা মন্ত্রী সাধন পাণ্ডে জানাচ্ছেন, বিক্রেতাদের এই ধরনের প্রতারণা ঠেকাতে বিক্রয়কর নেওয়ার সময় অর্থ দফতরের সঙ্গে ক্রেতা সুরক্ষা দফতরের অফিসারেরা যাতে যৌথ অভিযানে শামিল হতে পারেন, তার বন্দোবস্ত করার জন্য রাজ্যের অর্থমন্ত্রীকে চিঠি লিখে আর্জি জানানো হবে। ‘‘অভিযানের সময় যদি দেখা যায় যে, বিক্রেতাদের রসিদে ক্রেতা সুরক্ষা আইনের পরিপন্থী কোনও শর্তের কথা লেখা আছে, তা সঙ্গে সঙ্গেই বাতিল করতে বলা হবে,’’ বললেন সাধনবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy