ছবি: সংগৃহীত
সুন্দরবনের পরিবেশ নিয়ে নিজের থেকে মামলা করেছে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চ। কলকাতায় বেঞ্চের এজলাসে সেই মামলাতেই পরের পরে উঠে এসেছে অজস্র অনিয়মের কথা। অনিয়মের সেই অভিযোগে কাঠগড়ায় সরকারি ও বেসরকারি সব পক্ষই। আর এই আইনি গেরোয় বিপন্ন এলাকার পর্যটন ব্যবসা।
উপকূলীয় মানচিত্র নিয়ে সর্বভারতীয় স্তরে জটিলতা রয়েছে। সেই মামলা চলছে দিল্লিতে জাতীয় পরিবেশ আদালতের পূর্বাঞ্চলীয় বেঞ্চে। ফলে কলকাতায় সুন্দরবনের মূল মামলার শুনানি আপাতত স্থগিত। তাতে সাময়িক ভাবে স্বস্তি পেলেও ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায় ভুগছেন সুন্দরবনের বহু মানুষই।
সুন্দরবন ইউনেস্কো-র চিহ্নিত ‘হেরিটেজ সাইট’। সুন্দরবন পৃথিবীর একমাত্রা বাদাবন, যেখানে বাঘের ডেরা রয়েছে। রয়েছে শুশুক, কুমির, কচ্ছপের মতো বিপন্ন প্রাণীরাও। আবার এই সুন্দরবনের ম্যানগ্রোভের পাঁচিলই সামুদ্রিক ঝড় থেকে বাঁচায় কলকাতাকে। এই জঙ্গল না-থাকলে ২০০৯ সালে ঘূর্ণিঝড় ‘আয়লা’-তেই লন্ডভন্ড হয়ে যেত মহানগরী।
পরিবেশবিদদের বক্তব্য, সুন্দরবন বলতে শুধু রয়্যাল বেঙ্গলের আবাস বাদাবন বা ম্যানগ্রোভের পাঁচিল বোঝায় না। সুন্দরবনের বিভিন্ন দ্বীপ এবং অসংখ্য গ্রামে ৪৫ লক্ষ মানুষের বসবাস। যাঁদের অনেকেরই জীবন ও জীবিকা সুন্দরবনের পর্যটন এবং প্রাকৃতিক সম্পদের উপরে নির্ভরশীল। সুন্দরবনের বিপদ হলে ওঁরাও মহাবিপদে পড়বেন। আবার ওঁরা জীবিকা হারালে ক্ষতিগ্রস্ত হবে সুন্দরবনও। এই পরিস্থিতিতে কী ভাবে পরিবেশ ও মানুষ দু’পক্ষকেই বাঁচানো যায়, সেই চেষ্টা করা উচিত বলে মনে করছেন পরিবেশবিদেরা।
কিছু পরিবেশকর্মীর অভিযোগ, রাজ্যে আলাদা সুন্দরবন উন্নয়ন দফতর হয়েছে বটে। কিন্তু তাতে কাজের কাজ কতটা হয়েছে, সেটা বড় প্রশ্ন। পেটের তাগিদে এবং পরিকাঠামোর অভাবে অনেক সময়েই অনিয়মের জালে জড়িয়েছেন বাসিন্দারা। এখন আইনের কোপ পড়লে এই মানুষগুলি দিশাহারা হয়ে পড়বে। যদিও সুন্দরবন উন্নয়ন মন্ত্রী মন্টুরাম পাখিরার দাবি, গত কয়েক বছরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ মেনে সুন্দরবনে বহু কাজ হয়েছে। পরিবেশ বাঁচাতেও তাঁরা যথেষ্টই সক্রিয়।
সরকার কতটা নিয়ম মানে, তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। গদখালিতে তো নিয়মভঙ্গের অভিযোগ উঠেছে সরকারি পর্যটন লজের বিরুদ্ধেই! এখন অবশ্য সেখানে লজের বদলে জল পরিশোধন কেন্দ্র গড়ার কথা জানিয়েছে সরকার।, গ্রামের ভিতরে হোম স্টে বা লজ তৈরির সময়ে প্রশাসন পরিবেশ বিধি মানতে বাধ্য করেনি বলেও অভিযোগ। রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের একটি সূত্র জানাচ্ছে, ছোট লজ বা হোম স্টে পরিদর্শনে গিয়ে দেখা গিয়েছে সেপটিক ট্যাঙ্ক নেই সেখানে! এর থেকে কী পরিমাণ দূষণ ছড়ায়, তা নিয়েও গ্রামে কোনও সচেতনতা নেই। গোসাবার এক হোম স্টে-মালিক বলছেন, ‘‘আমরা এ-সব নিয়ম জানতাম না। প্রশাসন থেকেও কিছু বলেনি। নিয়ম মেনেই ব্যবসা করতে চাই।’’ সুন্দরবনের হোটেল-মালিক সংগঠনের সহ-সভাপতি প্রবীর সিংহরায় বলছেন, ‘‘আমরা চাই, নিয়ম মেনেই ব্যবসা করা হোক। পরিবেশ ও মানুষ দুই-ই বাঁচুক।’’
সুন্দরবন মামলায় আদালত-বান্ধব হিসেবে নিযুক্ত পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত প্রশ্ন তুলেছেন কাটা তেলে (দূষিত ডিজেল) চলা ভুটভুটি নিয়ে। পরিবেশকর্মীদের একাংশ বলছেন, কাটা তেল থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে ঠিকই। কিন্তু কাছেপিঠে কোথাও জেটি নেই। ফলে দূর থেকে জ্বালানি আনতে হয়। ফেরি পারাপারের ভাড়াও সামান্য। এই পরিস্থিতিতে বিশুদ্ধ জ্বালানি দিয়ে নৌকা চালানো যাবে কী ভাবে?
‘‘গত কয়েক বছরে কাটা তেলের ব্যবহার অনেক কমানো গিয়েছে। চোরাগোপ্তা ব্যবহার রুখতে পুলিশ-প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে,’’ বলছেন মন্ত্রী মন্টুরামবাবু।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy