Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
General Strike

দাবা-ক্রিকেট-আড্ডায় পথঅবরোধে পড়ুয়াদের গাঁধীগিরি! চড়ুইভাতি-গল্পে মশগুল কর্মচারীরা

রাস্তা নয়, এ যেন কোনও পিকনিক স্পট! কেউ বসে পড়েছেন দাবার বোর্ড নিয়ে। কেউ ব্যাট-বল হাতে ছক্কা হাঁকাচ্ছেন।

ধর্মঘটের দিন যানহীন রাস্তায় ক্রিকেট। নিজস্ব চিত্র

ধর্মঘটের দিন যানহীন রাস্তায় ক্রিকেট। নিজস্ব চিত্র

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জানুয়ারি ২০২০ ১৮:২৭
Share: Save:

একটা সময়ে বন্‌ধ বা ধর্মঘট মানেই এগুলো ছিল কলকাতা শহরের অতি চেনা দৃশ্য— ক্রিকেট খেলা, রাস্তার প্রায় মাঝখানে টেবিল পেতে আড্ডা-গুলতানি...

বহু বছর এমন দৃশ্য আর দেখা যাচ্ছিল শহরের বুকে। বুধবারের ধর্মঘট যেন সেই ছবিই ফের ফিরিয়ে আনল। রাস্তা নয়, এ যেন কোনও পিকনিক স্পট! কেউ বসে পড়েছেন দাবার বোর্ড নিয়ে। কেউ ব্যাট-বল হাতে ছক্কা হাঁকাচ্ছেন। কেউ আবার ব্যাটমিন্টন খেলতে ব্যস্ত। শুধু তাই নয়, মুড়ি-চানাচুর মেখে শীতের দুপুরে আড্ডায় মশগুলও রইলেন অনেকে।

না, দিঘা বা মন্দারমণি নয়। চিড়িয়াখানা, ভিক্টোরিয়া বা দার্জিলিঙের ম্যালও না। বুধবার সকালে কয়েক ঘণ্টার জন্যে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনের রাস্তাই যেন হয়ে উঠেছিল পিকনিক স্পট। সৌজন্যে কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়নগুলির ডাকা ধর্মঘট।

এ দিন বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর-সহ যাদবপুর এলাকায় কাঁধে লালঝান্ডা নিয়ে নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে স্লোগানের ঝড় তুলেছিলেন ছাত্রছাত্রীরা। তাঁরাই পরে পথ অবরুদ্ধ করতে রাস্তা আটকে খেলাধূলায় মেতে রইলেন! কিন্তু এমন প্রতিবাদ কেন? এক পড়ুয়ার জবাব, “কাজ নেই। দেশেও থাকতে দিচ্ছেন না মোদী-অমিত শাহ। পড়াশোনা করে চাকরি তো আর পাব না। এ ভাবেই তো গল্প-গুজব, খেলাধূলা করে বেঁচে থাকতে হবে। তাই আমরা রাস্তায় নেমে পড়লাম।”

দেখে নিন ধর্মঘটের সারা দিনের ছবি

আবার যাঁরা ধর্মঘট উপেক্ষা করে অফিস গিয়েছেন, তাঁরাও কিন্তু ছুটির আমেজেই দিন কাটালেন। খাদ্য দফতরে তো ‘চড়ুইভাতি’ও হয়ে গেল। গরম গরম খিচুড়ির সঙ্গে ডিম, তরকারি কয়েকশো কর্মী পাত পেড়ে খেলেন। তৃণমূল প্রভাবিত কর্মী সংগঠনের উদ্যোগে শীতের দুপুরে আয়োজন করা হয়েছিল এই ‘চড়ুইভাতি’। নবান্ন, মহাকরণের কর্মীদেরও কাজে ‘মন’ নেই। টেবিলে ফাইল, নথিপত্রের পাহাড় নিয়ে কর্মীদের বসে থাকতে দেখা গেলেও, আড্ডার মেজাজেই ছিলেন তাঁরা। মহাকরণের কৃষি বিভাগে কর্মরত এক কর্মী তো বলেই ফেললেন, “ফতোয়া জারি করেছে সরকার, আসতে তো হবে। আপনিই দেখুন না কাজ কেউ করছে?” ওই কর্মচারী সেই সঙ্গে সতর্কতাবার্তাও দিলেন, ‘‘আবার আমার নাম লিখবেন না যেন!’’

খাদ্য দফতরে পিকনিকের মুডে কর্মীরা। নিজস্ব চিত্র

যাদবপুরের ছবিটা বদলে গেল বেলা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে। সকালের দিকে যাদবপুর স্টেশনে রেল অবরোধ দিয়ে শুরু হয়েছিল। সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী-সহ আন্দোলনকারীদের গ্রেফতারের পর পুলিশের একাংশ মনে করেছিল, উত্তেজনা বাড়বে। কিন্তু, সেই আশঙ্কায় জল ঢেলে যাদবপুরের আন্দোলনকারীরা রাস্তা আটকে পিকনিকের মুডে মেতে রইলেন। ক্রিকেট খেলা শুরু হতে দেখা গেল উকেটকিপার এসএফআই-এর পতাকা নিয়ে কিপিং করছেন। রাস্তা টপকাতে পারলেই ছক্কা!

মাঝরাস্তায় তখন চলছে দাবা। নিজস্ব চিত্র

কোথা থেকে আবার চলে এলে দাবার বোর্ডও। ‘কিস্তি মাত’ করেও আন্দোলনকারীদের মুখে বার্তা, ‘‘মোদী জমানা এ বার শেষ।’’ এক জন আবার ছুট দিলেন খবরের কাগজ আনতে। দ্রুত জোগাড়ও হয়ে গেল। রাস্তার উপরে গোল করে বসে মুড়ি-চানাচুর মাখিয়ে শুরু হল দেদার আড্ডা। এই সব যখন চলছে, তখন ৮-বি এবং যাদবপুর থানার দিকে গাড়ির লম্বা লাইন। পুলিশও এই অভিনব প্রতিবাদ দেখতে দাঁড়িয়ে রইল বন্দুক-লাঠি হাতে। এই পড়ুয়াদেরই বুধবার লাঠিপেটা করে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ধমক খেয়ে ছিল পুলিশ। এ বার অবরোধ তোলা তো দূর, ক্রিকেট ম্যাচ দেখেই সময় কাটালেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

General Strike Trade Unions Kolkata Picnic
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE