Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
বিপন্ন পুলিশ/২

মোটরবাইক রুখতেই মাথায় বোতলের বাড়ি

ফের আক্রান্ত পুলিশ। এ বার রেলশহরে। রবিবার সকালে খড়্গপুর টাউন থানার পুরাতনবাজার মোড়ে ট্রাফিক আইন ভাঙায় মোটর বাইক আরোহী তিন যুবককে আটকেছিলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী জ্যোতিন্দ্রনাথ মাহাতো।

জখম পুলিশকর্মী জ্যোতিন্দ্রনাথ মাহাতো। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

জখম পুলিশকর্মী জ্যোতিন্দ্রনাথ মাহাতো। ছবি: রামপ্রসাদ সাউ

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৯ জুন ২০১৫ ০৩:২৩
Share: Save:

ফের আক্রান্ত পুলিশ। এ বার রেলশহরে।

রবিবার সকালে খড়্গপুর টাউন থানার পুরাতনবাজার মোড়ে ট্রাফিক আইন ভাঙায় মোটর বাইক আরোহী তিন যুবককে আটকেছিলেন কর্তব্যরত পুলিশকর্মী জ্যোতিন্দ্রনাথ মাহাতো। অভিযোগ, এ নিয়ে বচসা চলাকালীন এক যুবক ওই পুলিশকর্মীর মাথায় মদের বোতল দিয়ে আঘাত করে। তার পরে চম্পট দেয় তারা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় জ্যোতিন্দ্রনাথকে ভর্তি করানো হয় খড়্গপুর মহকুমা হাসপাতালে। ঘটনার পরে দুই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মোটরবাইকটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ বলেন, ‘‘দু’জন গ্রেফতার হয়েছে। অন্য জনের খোঁজ চলছে।’’

এই ঘটনাতেও জড়িয়েছে তৃণমূলের নাম। ধৃত দুই যুবক কৌশল্যার গাড্ডাবস্তির উমাশঙ্কর নায়েক এবং অভিষেক আচার্যের মধ্যে উমাশঙ্করকে স্থানীয় তৃণমূল কার্যালয়ে হামেশাই দেখা যায় বলে এলাকাবাসী জানিয়েছেন। দলের মিটিং-মিছিলেও উমাশঙ্কর চেনা মুখ। এমনকী, শনিবার শহরের টাউন হলে তৃণমূলের রক্তদান শিবিরেও ছিলেন তিনি। গ্রেফতারের পরে এ দিন থানায় নিয়ে যাওয়ার সময় উমাশঙ্কর নিজেও বলেন, ‘‘আমি তৃণমূল সমর্থক। প্রাক্তন কাউন্সিলর লতা আচার্যের পার্টি অফিসেও যাতায়াত রয়েছে।’’ লতাদেবীর অবশ্য দাবি, ‘‘ওই যুবক আমাদের সাধারণ সমর্থক। এই ঘটনায় ও জড়িত নয়।’’ তবে তৃণমূলের জেলা কার্যকরী সভাপতি অজিত মাইতির বক্তব্য, ‘‘দলে প্রচুর সমর্থক রয়েছে। ওই নামে কাউকে চিনি না। আর অন্যায় করলে কেউ ছাড় পাবে না।’’

বাঁকুড়া সদর থানায় হামলা, কলকাতার আলিপুর থেকে জেলায় চাঁপদানির পুলিশ ফাঁড়িতে তাণ্ডব— গত কয়েক মাসে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে পুলিশের উপরে হামলার তালিকা ক্রমেই দীর্ঘায়িত হচ্ছে। হামেশা হেনস্থার শিকার হতে হচ্ছে ট্রাফিক পুলিশকেও। খাস কলকাতায় কর্তব্যরত ট্রাফিক পুলিশকে হেনস্থার অভিযোগ উঠেছিল মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায়ের ভাইঝির বিরুদ্ধে। সম্প্রতিই ট্রাফিক আইন ভাঙায় তৃণমূল সাংসদ দোলা সেনের গাড়ি আটকে বিপাকে পড়েছিলেন আর এক গ্রিন পুলিশ। পরিস্থিতি এমন যে রাজ্যপাল কেশরীনাথ ত্রিপাঠী বলেছেন, “পুলিশ আক্রান্ত হলে প্রশাসনের কড়া ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”

বিরোধীদের মতে, পুলিশের উপরে একের পর এক হামলায় শাসক দলের লোকজন জড়িয়ে পড়ছেন। কোনও ক্ষেত্রেই কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এই পরিস্থিতিতে উর্দির প্রতি সম্ভ্রম হারাচ্ছে। সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য সুজন চক্রবর্তী, বিজেপি বিধায়ক শমীক ভট্টাচার্য বা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার কংগ্রেস বিধায়ক মানস ভুঁইয়ার অভিযোগ, আইনের শাসন বলে কিছু আর এ রাজ্যে অবশিষ্ট নেই। যদিও বিরোধীদের বক্তব্য নস্যাৎ করে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের দাবি, ‘‘বিক্ষিপ্ত ভাবে কিছু ঘটনা ঘটছে। এমন ঘটনা কড়া হাতে মোকাবিলা করার জন্য সরকার যা করণীয়, করবে। আর আমাদের দলের পতাকা দুষ্কৃতী বা নৈরাজ্যকারীদের হাতে তুলে দেওয়া হয়নি, হবেও না!’’

খড়্গপুরের পুরাতনবাজার মোড়ে এ দিন সকাল ১০টা নাগাদ মোটর বাইকে তিন যুবক কৌশল্যার দিক থেকে এসে ট্রাফিক আইন না মেনে ইন্দার দিকে যেতে গেলে পথ আটকান কর্তব্যরত জ্যোতিন্দ্রনাথ। বচসার পরে প্রথমে ওই যুবকেরা চলে গেলেও কিছুক্ষণের মধ্যেই ফিরে এসে তাদের এক জন জ্যোতিন্দ্রের মাথায় আঘাত করে বলে অভিযোগ। হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে ওই পুলিশকর্মী বলেন, “বছর কুড়ির ওই যুবকের হাতে বিয়ারের বোতল ছিল। সেটা দিয়েই মাথায় মারে। আমার সহকর্মী গৌতম জানা আমাকে সামলাচ্ছিল। সেই ফাঁকে ওরা পালিয়ে যায়।”

পুলিশের উপরে একের পর হামলার প্রেক্ষিতে ক’দিন আগেই রাজ্য পুলিশের আইজি (আইন-শৃঙ্খলা) অনুজ শর্মা নবান্নে বলেছিলেন, ‘পুলিশের মনোবল এতটুকু তলানিতে ঠেকেনি’। তবে এ দিনের ঘটনার পরে সন্ত্রস্ত জ্যোতিন্দ্র বলছেন, “অনেক সময় রাতেও ডিউটি থাকে। এ বার থেকে কাজ করতে গেলে ভয় থাকবে!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE