প্রতীকী ছবি।
সময় মেনে ট্রেন চালাতে ব্যর্থতার জন্য হাজারো সমালোচনার মধ্যেই লাইনের সিগন্যাল পয়েন্ট বদলানোর জন্য ঠিক ১০ ঘণ্টা সময় চেয়েছিল রেল। ঠিক হয়েছিল, শনিবার রাত ১০টা থেকে রবিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রেখে নৈহাটির কাছে ওই সিগন্যাল পরিবর্তনের কাজটা সেরে ফেলা হবে। কিন্তু কথা রাখতে পারল না রেল। নির্দিষ্ট সময়ে কাজটা শেষ করতে পারেনি তাদের শিয়ালদহ ডিভিশন।
সকাল ৮টা নাগাদ সিগন্যাল বদলানোর কাজ সাঙ্গ হলেও শেষরক্ষা হয়নি। কেননা ওই পরিবর্তনের পরে যন্ত্র চালু করতেই সেগুলি পরপর খারাপ হয়ে যাওয়ায় ট্রেন চলাচল ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। চূড়ান্ত দুর্ভোগে পড়েন শিয়ালদহ মেন লাইনের যাত্রীরা। বিকেল পর্যন্ত মেন লাইনে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়নি। ছুটির দিনে বেড়াতে বা কাজে বেরোনো মানুষজন আতান্তরে পড়েন।
রেল সূত্রের খবর, শনিবার রাত ১০টা থেকে ‘ব্লক’ (কাজের জন্য সাময়িক ভাবে ট্রেন চলাচল নিয়ন্ত্রণ) নিয়ে ট্রেন বন্ধ রেখে সিগন্যাল পয়েন্ট বদলানোর কাজ শুরু করা হয়েছিল। কিন্তু সকাল ৮টা নাগাদ যন্ত্র চালু করা হতেই সেগুলি ফের খারাপ হয়ে যাওয়ায় আটকে যায় সব ক্রসিং। ফলে দীর্ঘ ক্ষণ বন্ধ রাখার পরেও ট্রেন ফের চালু করা যায়নি। কর্মীরা মেরামতির জন্য আবার ‘ব্লক’ চান। তবে যাত্রীদের ভোগান্তির কথা মাথায় রেখেই ওই সময়ে আর পুরোপুরি ব্লক দেওয়া হয়নি। কোনও মতে একটি লাইন চালু করে সেটি দিয়ে আপ ও ডাউন ট্রেন চালানোর ব্যবস্থা করা হয়। তাতেই দেরি হতে থাকে।
মেন লাইনে নিত্যই যাত্রী-সংখ্যা বাড়ছে। সব সময়েই ট্রেনগুলিতে বাদুড়ঝোলা ভিড়। তা সত্ত্বেও রবিবার ছুটির দিন বলে প্রচুর ট্রেন বাতিল করে দিচ্ছেন রেল-কর্তৃপক্ষ। ফলে ভোর থেকে ট্রেন না-চললে পরিস্থিতি যে কী ভয়ানক হয়ে ওঠে, এ দিন সেটা হাড়ে হাড়ে টের পেয়েছেন যাত্রীরা। ওই সময়ে বেশির ভাগ যাত্রীকেই সড়কপথ ধরতে হয়।
এই ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ডিভিশনের ইঞ্জিনিয়ারিং দফতরের কর্মীদেরই দুষছেন রেলকর্মীদের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, রেললাইন থেকে শুরু করে সিগন্যাল ব্যবস্থা, বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মের উচ্চতা, স্টেশনের প্ল্যাটফর্ম শেড, আন্ডারপাস, ফুটওভার ব্রিজ, এমনকী সাধারণ প্ল্যাটফর্মের আলো— সব কিছু নিয়েই অভিযোগ উঠছে। অথচ রেলকর্তারা তার সুরাহা করছেন না।
রেল সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি শিয়ালদহের বিসি রায় ইনস্টিটিউটে এক আলোচনাসভায় খোদ জেনারেল ম্যানেজারও এই ডিভিশনের কাজকর্ম নিয়ে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। অভিযোগ, মেরামতিতে খাতে ৭০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা সত্ত্বেও এই ডিভিশনে যথাযথ মানের যন্ত্রপাতি কেনা হচ্ছে না। কাজে খামতি থেকে যাচ্ছে। কিন্তু তাতেও এই ডিভিশনের কর্তাদের কোনও হেলদোল নেই। কাজ চলছে গয়ংগচ্ছ ভাবেই।
এ দিন মেন লাইনের পাশাপাশি লাইন ভেঙে ট্রেন বন্ধ হয়ে যায় শিয়ালদহ দক্ষিণেও। রেলের খবর, বালিগঞ্জ-সোনারপুর শাখার গড়িয়া স্টেশনের কাছে ডাউন লাইনে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ ফাটল ধরা পড়ে। ফাটল দেখে স্টেশনমাস্টারকে খবর দেন স্থানীয় লোকজন। বারবার বলার পরে রেলকর্মীরা ঘটনাস্থলে গিয়ে মেরামতি শুরু করেন। এই বিপত্তির জেরে এ দিন দক্ষিণ শাখাতেও ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে দীর্ঘ ক্ষণ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy