Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
Citizenship Amendment Act

বিচ্ছিন্ন উত্তরবঙ্গ! লাইন উপড়ে রেলের শিরদাঁড়াই ভেঙে দিয়েছেন বিক্ষোভকারীরা

রেল এবং সড়ক পথে এই তাণ্ডবের জেরে যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, তেমনই এই পরিস্থিতিতে‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন ব্যবসায়ীরাও।

 রাজ্যের একাধিক জায়গায় ট্রেনে আগুন ধরানো হয়েছে।। —ফাইল চিত্র।

রাজ্যের একাধিক জায়গায় ট্রেনে আগুন ধরানো হয়েছে।। —ফাইল চিত্র।

সোমনাথ মণ্ডল
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ ডিসেম্বর ২০১৯ ১৯:২৩
Share: Save:

সংশোধিত নাগরিকত্ব আইনের প্রতিবাদে টানা চারদিন ধরে বিক্ষোভ, ভাঙচুর এবং অবরোধের জেরে অশান্ত রাজ্য। বিক্ষোভকারীদের মূল লক্ষ্যই যেন গণপরিবহণ ব্যবস্থা। সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে রেল। রাজ্যের উত্তর এবং দক্ষিণ অংশের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় রেল পরিষেবার শিরদাঁড়াই যেন ভেঙে গিয়েছে।

টিকিট কাউন্টার থেকে শুরু করে একাধিক স্টেশন চত্বরে চলছে অবাধে ভাঙচুর। ট্রেনের আস্ত কামরা পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, মালদহের পর থেকে ভালুক রোড-হরিশচন্দ্রপুরের পর জায়গায় জায়গায় রেল লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে। কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে গোটা উত্তরবঙ্গ।

সড়ক পথেও চলছে ‘তাণ্ডব’। সরকারি-বেসরকারি বাসে ভাঙচুর হচ্ছে। তার পর আগুনও লাগিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাসে। রেল এবং সড়ক পথে এই তাণ্ডবের জেরে যাত্রীরা যেমন ভোগান্তিতে পড়ছেন, তেমনই এই পরিস্থিতিতে‘সিঁদুরে মেঘ’ দেখছেন ব্যবসায়ীরাও। লরি-ট্রেন আটকে যাওয়ায় শাক-সব্জি-মাছ-মাংস-ডিমের দাম চড়তে পারে বলে তাঁদের আশঙ্কা।

রাজ্যে রেল পরিষেবার কী হাল?

রেল কর্তারা জানাচ্ছেন, এই আন্দোলনের জেরে উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণবঙ্গ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আজিমগঞ্জ-নিউ ফরাক্কা, কৃষ্ণনগর-লালগোলা, নলহাটি-আজিমগঞ্জ, শিয়ালদহ-বজবজ, শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার লাইনে ট্রেন চলাচল মুখ থুবড়ে পড়েছে। কবে থেকে স্বাভাবিক ভাবে ট্রেন চালানো যাবে, তা নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না রেল কর্তৃপক্ষ।

ভালুকা এবং হরিশচন্দ্রপুরের পর বিভিন্ন জায়গায় রেলের ‘ফিস প্লেট’, ‘প্যান্ড্রোল ক্লিপ’খুলে রেললাইন উপড়ে ফেলেছেন আন্দোলনকারীরা। বিভিন্ন জায়গায় রেলের প্যানেল বোর্ড ভাঙচুর করা হয়েছে। যার ফলে সিগন্যালিং ব্যবস্থা ভীষণ ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।ফলে মালদহের পর আর উত্তরবঙ্গে ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না। সোমবারও দার্জিলিং মেল, পদাতিক এক্সপ্রেস-সহ উত্তরবঙ্গগামী ২০টি ট্রেন বাতিল ঘোষণা করা হয়েছে। পূর্ব রেলের তরফে জানানো হয়েছে, লাইনের কোথায় কী অবস্থা রয়েছে, তা খতিয়ে না দেখে, ট্রেন চালানো সম্ভব হবে নয়।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিউ জলপাইগুড়ির পর থেকে মালদহ পর্যন্ত লাইনে কোথায় কী সমস্যা রয়েছে, তা খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে। চূড়ান্ত ছাড়পত্র পাওয়ার পরে তবেই উত্তরবঙ্গগামী ট্রেন চালানো হবে।পূর্ব রেলের মুখ্যজনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তী এ দিন বলেন, “রামপুরহাট-পাকুড় এবং আজিমগঞ্জ নিউ ফরাক্কা হয়ে হাওড়া-শিয়ালদহের সঙ্গে উত্তরবঙ্গে ট্রেন চালাচল করে। ওই পথে মালদহ পর্যন্ত যদিও ট্রেন যেতে পারে। কিন্তু তার পর আর ট্রেন চালানো সম্ভব হচ্ছে না।”

রেল সূত্রে খবর, লাইন উপড়ে ফেলা হয়েছে বহু জায়গায়। ফলে ট্রেন চালাতে গিয়ে যদি বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটে যায়, তার দায় এসে পড়বে রেলের উপরেই। সে কারণেই ট্রেন চালানো হচ্ছে না।ওই সূত্রটির দাবি, শুধুমাত্র কৃষ্ণপুর এবং লালগোলা স্টেশনেদূরপাল্লা, ইএমইউ এবং প্যাসেঞ্জার মিলিয়ে একাধিক ট্রেনের মোট ৫২টি কোচে আগুন লাগানো হয়েছে।

সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আজিমগঞ্জ-নিউ ফরাক্কা শাখা। ওই শাখার নিমতিতা, সুজনিপাড়া, ধুলিয়ান গঙ্গা, নওয়াপাড়া, বাসুদেবপুর, মণিগ্রাম স্টেশনে ভাঙচুর ও আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। উপড়ে ফেলা হয়েছে সাতটি লেভেল ক্রসিং গেট। কৃষ্ণনগর-লালগোলা শাখার লালগোলা, কৃষ্ণপুর, বেলডাঙা, সারগাছি, রেজিনগর স্টেশনও ক্ষতিগ্রস্ত। নলহাটি-আজিমগঞ্জ শাখার বারালা স্টেশনেও ভাঙচুরচলে। শিয়ালদহ-বজবজ শাখার আক্রা স্টেশন মাস দুয়েক আগে সাজানো হয়েছিল। রবিবারের তাণ্ডবের জেরে সব গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। শিয়ালদহ-ডায়মন্ড হারবার শাখার দেউলা স্টেশনেও চলেছে ভাঙচুর।

সব ট্রেন বাতিলের জেরে শুধু উত্তরবঙ্গের মানুষই বিপদে পড়েছেন এমন নয়। অসম, সিকিম, ত্রিপুরার-সহ উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গেও পশ্চিমবঙ্গের যোগাযোগ কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বাতিলের তালিকায় রয়েছে গুয়াহাটি এক্সপ্রেসের মতো বহু ট্রেনও।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE