বিয়ের মরশুমে বিয়ে নিয়ে অন্য ভাবনার হদিশ দিলেন মেঘ সায়ন্তনী আর সন্দীপন।
সায়ন্তন থেকে সায়ন্তনী হওয়ার রাস্তা ছিল ক্ষতবিক্ষত। সেই ভঙ্গুর পথ পেরিয়ে এখন রূপান্তরকামীদের মধ্যে প্রথম আইনজ্ঞ, মেঘ সায়ন্তনী। জীবনের আলো-পথে বন্ধু হিসেবে পেয়েছেন সন্দীপন দাসকে। গাঢ় বন্ধুতার জোরে গতকাল পাশে দাঁড়ালেন মঞ্জুলিকা আর সন্দীপ মণ্ডলের পাশে। ‘‘আমাদের যা অবস্থা, বিয়ে করার ইচ্ছে থাকলেও জাঁকজমক করে বিয়ের সামর্থ ছিল না। দেবশ্রীদি পাশে দাঁড়ালেন।’’ বললেন পশ্চিম মেদিনীপুরের গেঞ্জি তৈরি কারখানার কর্মী সন্দীপন।
আপ মার্ক ফ্যাশনের বাইরে এসে কেমন করে সাধারণ মানুষের কথা ভাবা যায়? সেই ভাবনাতেই মগ্ন ফ্যাশন ডিজাইনার দেবশ্রীর মনে হয়েছিল এই বিয়ের মরশুমে যদি সেই সব মানুষের পাশে থাকা যায় যাঁরা চাইলেও অর্থের অভাবে বিয়ে করতে পারছেন না?
সেই ভাবনা থেকেই কিছু মেঠো মানুষকে সাত পাকে বাঁধার অঙ্গীকারে আবদ্ধ হলেন দেবশ্রী। আর্থিক সহায়তা। বেনারসি, পঞ্জাবি, বিয়ের সাজ...
অন্য দিকে রূপান্তরকামী সান্তয়নী বললেন, ‘‘বিয়ে মানে দুটো মনের বন্ধুতা। যে আমার স্বামী হবে সে যদি বন্ধু না হয়, তাকে যদি মন খুলে সব বলতে না পারি, সে আমার স্বামী হবে কী করে?’’
আরও পড়ুন: গলায় দড়ি দিয়ে ঝুলছেন বাবা-মা, নীচে খেলছে ছেলেমেয়ে!
পরিষ্কার কথা বলেন সায়ন্তনী। তাঁকে প্রশ্ন করি, আইন তো এখনও রূপান্তরকামীদের বিয়েকে স্বীকৃতি দেয়নি। তা হলে? ‘‘৩৭৭ পেতেই আমাদের এত সময় লাগল। আমি আইনের লোক হয়ে কী বলি? কিন্তু কোনও সম্পর্কের নির্মাণে আইনের নির্দেশের জন্য অপেক্ষা করতে হবে? ভাবুন তো!’’
মেঘ সায়ন্তনী, সন্দীপন এবং অন্যান্যরা।
ভাবছেন সায়ন্তনী। সঙ্গে তাঁর বিশেষ বন্ধু সন্দীপন। ‘‘এক জন রূপান্তরকামী আর আর এক জন পুরুষ নিশ্চয়ই বন্ধু হতে পারে। আর বিয়ে মানে সেই বন্ধুতার গভীরতম প্রকাশ। সমাজকে এ বার এটা বুঝতে হবে। আমি আর সায়ন্তনী দেবশ্রীদির এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি যেখানে আমাদের সাহায্যে সমাজের কিছু মানুষের বিয়ে যদি সম্ভবপর হয়। শুধু আমরা কেন? সমাজের অন্য স্তরের মানুষরাও হাতটা বাড়িয়ে দিন,’’ সাফ জবাব সন্দীপনের।
অর্থের অভাবে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায় মঞ্জুলিকার। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরোয়। তাঁর ভালবাসা রূপ নিল সমাজের এই মানুষগুলোর সহায়তায়।
আরও পড়ুন: ইডির জেরা বৈশাখীকে, তাঁর ব্যাগ কোলে বাইরে ঠায় বসে শোভন
অনেক তো দেখছি আমরা দীপিকা পাডু়কোন, প্রিয়ঙ্কা চোপড়ার আকাশছোঁয়া হিরে-চুনি-পান্না ঘেরা বিয়ে। এ বার মাটির বুকের কাছে যে আলো মুখগুলো জ্বলছে তার দিকে বরং এ বার তাকাই।
আর সায়ন্তনী-সন্দীপন? অন্যের বিয়ে দিতে এগিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা। নিজের সংসার কি বাঁধবেন?
আমরা উত্তরের অপেক্ষায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy