Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
ধস-বন্যায় বিধ্বস্ত পাহাড়, সমতল

দিনভর চলল গাড়ি ভাড়ার কালোবাজারি

একাধিক জায়গায় ধসে রাস্তা আটকে যেতেই মিরিক, কার্শিয়াং, কালিম্পং, সিকিমে যাতাযাত ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাহাড়ে যাতায়াতের সরকারি বেসরকারি অধিকাংশ গাড়িই বুধবার চলেনি।

পাহাড়ে যাওয়ার গাড়ির আশায় বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

পাহাড়ে যাওয়ার গাড়ির আশায় বাসিন্দারা। —নিজস্ব চিত্র।

সৌমিত্র কুণ্ডু
শিলিগুড়ি শেষ আপডেট: ০২ জুলাই ২০১৫ ০১:৫৬
Share: Save:

একাধিক জায়গায় ধসে রাস্তা আটকে যেতেই মিরিক, কার্শিয়াং, কালিম্পং, সিকিমে যাতাযাত ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। পাহাড়ে যাতায়াতের সরকারি বেসরকারি অধিকাংশ গাড়িই বুধবার চলেনি। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে শিলিগুড়ি থেকে পাহাড়ে যেতে এবং পাহাড় থেকে নেমে আসার ক্ষেত্রে বেসরকারি ছোট গাড়িগুলির একাংশ কালোবাজারি শুরু করেছে বলে অভিযোগ। তাতে পর্যটক থেকে সাধারণ বাসিন্দা সকলকেই হেনস্থা হতে হয়েছে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং যাওয়ার ভাড়া যেখানে ১৩০ টাকা সেখানে এ দিন ১৯০, ২০০ টাকা যাঁর থেকে যা পেরেছে তাই ভাড়া নেওয়া হয়েছে। মিরিকে যেতে ৯০ টাকার ভাড়া ১৫০টাকাও দিতে হয়েছে অনেককে। এখানেই শেষ নয়। মাঝপথে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ফের ভাড়া নিয়ে এক শ্রেণির চালকেরা দর কষাকষি করে দার্জিলিং যেতে ২৫০ টাকা ভাড়াও নিয়েছেন বলে অভিযোগ। গ্যাংটক যেতে এ দিন ২০০ টাকার ভাড়া যাত্রীদের কাছ থেকে ৩০০/৪০০ বা তারও বেশি দিতে হয়েছে বলে অভিযোগ। শিলিগুড়ি মহকুমার পরিবহণ আধিকারিক সোনম ভুটিয়া বলেন, ‘‘কালোবাজারির বিষয়টি খোঁজ নিয়ে গুরুত্ব দিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

বর্ষার মরসুমে পর্যটকদের যাতায়াত কম থাকলেও পাহাড়ে প্রতিদিনই প্রচুর বাসিন্দা য়াতায়াত করেন। রাতে ধসে মিরিক-সহ পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় মৃতের সংখ্যা ৩০ হয়েছে খবর পেয়েই বাসিন্দাদের মধ্যে উৎকণ্ঠা ছড়ায়। মিরিক, কার্শিয়াং, দার্জিলিঙের মতো বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দারা যাঁরা এলাকা ছেড়ে শিলিগুড়ি বা অন্যত্র কাজে রয়েছেন তাঁরা পরিবারের কাছে ফিরে যেতে এ দিন তোড়জোড় শুরু করেন। কিন্তু গাড়ি না থাকায় বিপাকে পড়েন। প্রশাসনের তরফে ওই সমস্ত বাসিন্দাদের পৌঁছে দেওয়ার কোনও উদ্যোগ এ দিন নেওয়া হয়নি। তাতেই এক শ্রেণির গাড়ির চালক এবং মালিকেরা ঘুরপথে নিয়ে যেতে হবে বলে ইচ্ছে মতো ভাড়া নিয়েছেন বলে অভিযোগ। এমনকী পণ্য পরিবহণের ক্ষেত্রেও সমস্যা তৈরি হয়। শিলিগুড়ি নিয়ন্ত্রিত বাজার থেকে প্রতি দিনই প্রচুর জিনিস পাহাড়ে যায়। এ দিন সেই তুলনায় অনেক কম জিনিস সরবরাহ হয়েছে। কয়েকদিন এমন পরিস্থিতি চললে জিনিসের দাম বাড়বে বলে আশঙ্কা করছেন ব্যবসায়ীরা।

এ দিন গাড়ির অভাবে পাহাড়ে যেতে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছে বহু বাসিন্দাকে। ডুয়ার্সে থাকেন রূপক রাই। তাঁর স্ত্রী ছেলেকে নিয়ে মিরিকে নিংগালে থাকেন। স্ত্রী স্কুলের শিক্ষিকা। কিন্তু বাড়ির কাছে ধসে অনেকে মারা গিয়েছেন জানিয়ে স্ত্রী দ্রুত তাঁকে মিরিকে আসার জন্য তাগাদা দিচ্ছেন। এ দিন বেলা সাড়ে ১০ টা থেকে ২ টা পর্যন্ত গাড়ির জন্য দাড়িয়ে থেকেছেন তিনি। রমেশ তামাং, স্ত্রী রিতাদেবীকে নিয়ে শিলিগুড়ি থেকে ছোট গাড়িতে দার্জিলিং গিয়েছেন। তাদের ১৯০ টাকা করে ভাড়া দিতে হয়েছে বলে জানান। রাস্তায় পানিঘাটার কাছে গাড়ি দাঁড় করিয়ে কয়েক জন যাত্রীর কাছ থেকে আরও বেশি টাকা নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। রমেশবাবু বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে প্রশাসনের তরফে আমাদের মতো যাত্রীদের যাতায়াতের জন্য উপযুক্ত ভাড়ায় ব্যবস্থা করা উচিত ছিল।’’ গাড়ি না পেয়ে আটকে পড়েন সাগর রাই, প্রকাশ থাপার মতো ব্যক্তিরাও। প্রকাশবাবু জলপাইগুড়িতে থাকেন মিরিকের পথে ৮ মাইলে তাঁর ছেলে রিচার্ড থাকেন। তিনি সেখানে যাবেন। মিলিং খুং চা বাগানের কাছে থাকেন দেবেন্দ্র রাই। গাড়ি না পেয়ে তিনিও অনেকক্ষণ অপেক্ষা করে ফিরে যান।

উত্তরবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ সংস্থার ৮ টি গাড়ি শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিঙে যায়। এ দিন ভোর ৬ টা এবং ৭ টায় দুটি গাড়ি রওনা হলেও ধসে বিভিন্ন জায়গায় রাস্তা বন্ধ খবর পেয়ে একটি রোহিনী থেকে এবং অপরটি সুকনা থেকে ডিপোতে ফিরে এসেছে। ৬.৩০ টা নাগাদ একটি গাড়ি কালিম্পঙের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও সেটি ফিরে আসে। এর পর আর কোনও গাড়ি তারা পাহাড়ে চালায়নি। কালিম্পঙে ৫টি, মিরিকে তিনটি, সিকিমে ১টি এনবিএসটিসি’র গাড়ি শিলিগুড়ির তেনজিং নোরগে বাস টার্মিনাস থেকে ছাড়ে। এ দিন একটিও গাড়ি চলেনি। সিকিম ন্যাশনাল ট্রান্সপোর্ট শিলিগুড়ি ডিপো থেকেও এ দিন কোনও গাড়ি সিকিমে যাতায়াত করেনি। সরকারি গাড়ি চলাচল বন্ধ থাকায় যাতায়াতের ক্ষেত্রে ভরসা হয়ে দাঁড়ায় বেসরকারি গাড়ি। ওই পরিষেবাও এ দিন কার্যত বন্ধ ছিল। দার্জিলিং, কার্শিয়াং, মিরিকের বাস পরিষেবা ৩ বছরের বেশি সময় ধরে বন্ধ। কালিম্পং এবং গ্যাটকে ১৪টি গাড়ি চলে। এ দিন একটিও চলেনি।

একটি বেসরকারি পরিবহণ সংস্থার মালিক মনোহর রাই জানান, তাদের তরফে দিনে ৩৩টি গাড়ি মিরিক, কার্শিয়াঙে যায়। এ দিন দুই একটি চলেছে। তাও ঘুরপথে যেতে হচ্ছে বলে চালদের দাবি মেনে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি নিতে হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘মিরিকের ১২ কিলোমিটার আগে পলধুরায় ধসে রাস্তা আটকে গিয়েছে। আবার শিলিগুড়ি থেকে যেতে গাড়িধুরায় সেতু ভেঙে পয়েছে। তাই দুধিয়া, খাপরাইল হয়ে ঘুরপথে দুই একটি গাড়ি চলছে।’’

বেসরকারি প্রিপেইড গাড়ির বুথের তরফে গাড়ির মালিক অনুপ সাহা বলেন, ‘‘ধসের কারণে এ দিন গাড়ি চলেনি। বিভিন্ন ভাবে কয়েকজন গাড়ি চালিয়েছেন। তবে ঘুর পথে যেতে হচ্ছে বলে গ্যাংটকে যেতে ১০০ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছে।’’ তিনি জানান, সেবক হয়ে সিকিমগামী জাতীয় সড়কে একাধিক জায়গা ধসে আটকে থাকায় কার্শিয়াং হয়ে কিছু গাড়ি চলছে। কার্শিয়াং থেকে জোরবাংলো, নাপচু, পেশক, তিস্তা বাজার হয়ে তারা ঘুরপথে যাচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE