Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪
নিজস্ব সংবাদদাতা

ফালুটে ট্রেকিংয়ে গিয়ে ফেরা হল না সল্টলেকের বিশ্বজিতের

ট্রেকিং ছিল তাঁর কাছে নেশার মতো। একাধিক বার ট্রেকিংয়ে গিয়েছেন। ফিরে এসে রোমহর্ষক গল্পও শুনিয়েছেন ছোট্ট ছেলেকে। সেই ট্রেকিং করতে গিয়েই মৃত্যু হল সল্টলেকের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ পোদ্দারের (৩৫)। সান্দাকফু থেকে ফালুটের দিকে পায়ে হেঁটে পৌঁছতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন তিনি।

দার্জিলিং থেকে কলকাতার পথে বিশ্বজিতের দেহ। ছবি: রবিন রাই।

দার্জিলিং থেকে কলকাতার পথে বিশ্বজিতের দেহ। ছবি: রবিন রাই।

কলকাতা ও শিলিগুড়ি
শেষ আপডেট: ২৪ মার্চ ২০১৬ ০২:০৩
Share: Save:

ট্রেকিং ছিল তাঁর কাছে নেশার মতো। একাধিক বার ট্রেকিংয়ে গিয়েছেন। ফিরে এসে রোমহর্ষক গল্পও শুনিয়েছেন ছোট্ট ছেলেকে। সেই ট্রেকিং করতে গিয়েই মৃত্যু হল সল্টলেকের বাসিন্দা বিশ্বজিৎ পোদ্দারের (৩৫)। সান্দাকফু থেকে ফালুটের দিকে পায়ে হেঁটে পৌঁছতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মারা গেলেন তিনি।

পুলিশ জানায়, পেশায় সেক্টর ফাইভ-এর একটি সংস্থার বিজনেস অ্যানালিস্ট বিশ্বজিৎ ও তাঁর চার বন্ধু মাঝেমধ্যেই ট্রেকিংয়ে যেতেন। এ বার তাঁদের সান্দাকফু থেকে ফালুট পর্যন্ত ট্রেক করার কথা ছিল। ১৮ মার্চ তাঁরা দার্জিলিঙের মানেভঞ্জন পৌঁছন।

পুলিশ জানিয়েছে, মানেভঞ্জন পৌঁছনোর পর দিন বিশ্বজিতেরা টংলু যান। তৃতীয় দিন কালিপোখরি হয় পর্যায়ক্রমে সান্দাকফু পৌঁছন। ২২ মার্চ, মঙ্গলবার তাঁরা সকালে ফালুটের উদ্দেশে রওনা হন। ৩ কিলোমিটার মতো যাওয়ার পরে পায়ের পেশিতে ব্যথা হচ্ছে বলে বিশ্বজিৎ জানান। কিন্তু, তিনি দার্জিলিঙে ফিরতে চাননি বলে পুলিশ জানতে পেরেছে। তখন তাঁকে ওই রুটের একটি জিপ থামিয়ে ফালুটের দিকে রওনা করিয়ে দেন বন্ধুরা। বিকেলে বন্ধুরা পৌঁছে দেখতে পান, শ্বাসকষ্টে কাহিল হয়ে পড়েছেন বিশ্বজিৎ। তাঁরা সশস্ত্র সীমা বল (এসএসবি)-এর কাছ থেকে অক্সিজেন জোগাড় করেন। তাতে সুস্থ হওয়ার লক্ষণ দেখা যায়নি বলে গাড়ি নিয়ে দার্জিলিঙের দিকে রওনা হয়েছিলেন তাঁর বন্ধুরা। কিন্তু, রাস্তায় সব শেষ হয়ে যায় বলে বিশ্বজিতের বন্ধুরা জানান।

প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, চার বন্ধুর সঙ্গে হেঁটেই সান্দাকফু পৌঁছন বিশ্বজিৎ। কিন্তু সেখান থেকে ফালুটের দিকে রওনা হওয়ার ঘণ্টাখানেক পরেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তাঁকে গাড়িতে করে ফালুটের দিকে রওনা করিয়ে দেন বন্ধুরা। কিন্তু, সেখানে গিয়ে তাঁর শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। তখন তাঁকে (এসএসবি)-র জওয়ানদের সহায়তায় দার্জিলিঙে পাঠানো হয়। কিন্তু হাসপাতালে পৌঁছনোর আগে পথেই বিশ্বজিতের মৃ্ত্যু হয় বলে চিকিৎসকদের অনুমান।

দার্জিলিঙের পুলিশ সুপার অমিত জাভালগি বলেন, ‘‘প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল শুনেছি। হার্ট অ্যাটাকের কারণে মৃত্যু হয়ে থাকতে পারে বলে চিকিৎসকেরা মনে করছেন। দেখা যাক ময়না-তদন্ত রিপোর্টে কী মেলে।’’

সল্টলেকের সিএল ব্লকে বাড়ি বিশ্বজিতের। তাঁর পরিবার সূত্রে খবর, মঙ্গলবার রাতেই তাঁরা মৃত্যুর খবর পেয়েছেন। বুধবার অবশ্য পরিবারের সদস্যেরা বিশেষ কথাবার্তা বলতে চাননি। তাঁর বন্ধু সুদীপ্ত চক্রবর্তী জানান, ট্রেকিং বিশ্বজিতের কাছে নেশার মতো ছিল। কর্মসূত্রে একাধিক বার বিদেশেও গিয়েছেন তিনি। তাঁর আকস্মিক মৃত্যুতে শোকস্তবদ্ধ তাঁর পরিবার ও প্রতিবেশীরা। ঘটনার কথা জানার পরে তাঁর মা অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। বিশ্বজিতের স্ত্রী ও চার বছর বয়সের একটি ছেলে রয়েছে। তাঁর মৃতদেহ আনতে বুধবার বিকেলের বিমানে শিলিগুড়ি পৌঁছন পরিজনেরা।

পুলিশ জানায়, ময়না-তদন্তের পরে বিশ্বজিতের দেহ বাড়ির লোকজনের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। রাতেই দেহটি শিলিগুড়ি এনে কলকাতায় রওনা করানোর চেষ্টা করছেন তাঁরা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

phalut trekking saltlake
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE