রেলমন্ত্রীর কাছে রাজ্যের জন্য বাজেট-বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানিয়ে এলেন তৃণমূলের সাংসদরা। তাঁদের দাবি খতিয়ে দেখার আশ্বাসও দিলেন রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভু। রাজনীতির অংশটুক বাদ দিলে এতে কাজের কাজ কতটুক এগোলো, তা নিয়ে অবশ্য ঘোর সংশয়ে রেল মন্ত্রক। সরাসরি রাজ্য সরকারের সদিচ্ছা নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন অনেক রেলকর্তা।
মন্ত্রকের অনেক কর্তা খোলাখুলিই বলছেন, রাজ্য সরকারের জমি না নেওয়ার গোঁ ও চরম অসহযোগিতার কারণে অনেক রেল প্রকল্পের রূপায়ণ আটকে রয়েছে পশ্চিমবঙ্গে। অথচ এ নিয়ে হেলদোল নেই তৃণমূল নেতৃত্ব বা সরকারের। তৃণমূলের সাংসদরা আজ রেলমন্ত্রীর কাছে মূলত ইস্ট-ওয়েস্ট প্রকল্প, ৫টি মেট্রো প্রকল্প ও ৫টি নির্মীয়মাণ রেল কারখানার বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি জানান। চলতি বাজেটে কার্যত নতুন কোনও প্রকল্পেরই ঘোষণা হয়নি। জোর দেওয়া হয়েছে পরিকাঠামো উন্নয়নে। বাজেট বরাদ্দের একটি বড় অংশ খরচ করার সিদ্ধান্ত হয়েছে লাভজনক প্রকল্পগুলির পিছনে। রেল-বাজেট নথি বলছে, আগামী অর্থবর্ষে রাজ্যের প্রকল্পগুলির পিছনে রেল খরচ করবে তিন হাজার কোটি টাকা। রেল মন্ত্রকের যুক্তি, যে রাজ্য যেমন খরচ করে, পরের বছর সেই অনুপাতে বাজেট বরাদ্দ হয়ে থাকে। যদিও তৃণমূল মুখপাত্র ডেরেক ও’ব্রায়েনের বক্তব্য, “ওই টাকা প্রয়োজনের তুলনায় খুব কম। তা ছাড়া দু’বছর আগে রাজ্যের জন্য রেলের বরাদ্দ ছিল ১০ হাজার কোটি, গত বছর তা কমে হয় ৬ হাজার কোটি। এ বার সেটা অর্ধেক হয়ে গিয়েছে। তাই বরাদ্দ বাড়ানোর দাবি নিয়ে আজ রেলমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেছি।”
কিন্তু সমস্যা হল, ইস্ট-ওয়েস্ট বা দমদম-বরানগর বা নোয়াপাড়া-বারাসত মেট্রো রাজ্যের অধিকাংশ বড় প্রকল্প দীর্ঘদিন আটকে রয়েছে জমি জটে। রেলের অভিযোগ, রাজ্য সরকার জমি অধিগ্রহণে মন্ত্রককে সাহায্য করতে নারাজ। আর রাজ্য সরকারের সাহায্য ছাড়া অধিগ্রহণ সম্ভব নয়। যত বার জট ছাড়ানোর চেষ্টা হয়, নতুন জটিলতা সৃষ্টি করে রাজ্য প্রশাসন। এই নেতিবাচক মনোভাবে আখেরে রাজ্যবাসীরই ক্ষতি হচ্ছে। তা না হলে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ইস্ট-ওয়েস্ট বা দমদম-বরানগর মেট্রোয় ট্রেন চলাচল শুরু হয়ে যেত বলে আক্ষেপ রেলকর্তাদের।
রেলের যুক্তি মানতে রাজি নন তৃণমূল সাংসদ কাকলি ঘোষ দস্তিদার। তাঁর দাবি, “নোয়াপাড়া-বারাসত লাইনের জন্য যথেষ্ট অর্থ দিলেই জমি অধিগ্রহণ সমস্যা হবে না। ২,১০০ কোটি টাকার প্রকল্পে এ বছরের বরাদ্দ মাত্র ১৪০ কোটি টাকা। এতে কোনও কাজই হওয়া সম্ভব নয়। দায় এড়াতে রেল বিভ্রান্তিকর যুক্তি দিচ্ছে। ”
রেলকর্তারা কিন্তু বলছেন, দিল্লি-বেঙ্গালুরুর মতো শহরে মেট্রো প্রকল্পের কাজ সময়েই শেষ হয়। কলকাতায় হয় না। নানা রকম আপত্তি তুলে কেন্দ্রের সঙ্গে কাজিয়াতেই ব্যস্ত থাকে রাজ্য সরকার। মন্ত্রকের প্রশ্ন, এ রকম রাজ্যে রেল কেন প্রকল্প রূপায়ণে অর্থ বরাদ্দ করতে উৎসাহ দেখাবে, তা কি রাজ্যের সাংসদেরা ভেবে দেখেছেন?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy