আলোলিকা ও অর্কপ্রভ চক্রবর্তী।
বাড়িতে না জানিয়েই দুই বন্ধুর সঙ্গে মন্দারমণি বেড়াতে গিয়েছিলেন যমজ ভাইবোন। আর ফেরা হল না। রবিবার সমুদ্রে ডুবে মৃত্যু হল তাঁদের। আরেক বন্ধুকে উদ্ধার করেছেন নুলিয়ারা। অন্য এক জন অবশ্য জলে নামেননি। তিনি দাঁড়িয়ে ছিলেন পাড়ে।
পুলিশ সূত্রের খবর, মৃত অর্কপ্রভ চক্রবর্তী (২২) ও আলোলিকা চক্রবর্তী (২২) মালদহের ইংলিশবাজার থানার গভর্নমেন্ট কলোনির বাসিন্দা। রবিবার তাঁরা দুই বন্ধু পৌলোমী সিংহ এবং উদ্দালক ভট্টাচার্যের সঙ্গে মন্দারমণি পৌঁছন। বেলা ১১টা নাগাদ অর্কপ্রভ, আলোলিকা এবং উদ্দালক সমুদ্রে স্নান করতে নামেন। পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রের খবর, পৌলোমী পা়ড়ে দাঁড়িয়ে থাকলেও বাকি তিনজন গভীর সমুদ্রে চলে গিয়েছিলেন। আচমকা ঢেউয়ের ধাক্কায় টাল সামলাতে না পেরে তলিয়ে যান তাঁরা। ওয়াটার স্পোর্টসের কর্মী ও নুলিয়ারা তিন জনকে উদ্ধার করে আনেন। তাঁদের বড় রিংকুয়া ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে পাঠানো হলে চিকিৎসকেরা অর্ক এবং আলোলিকাকে মৃত ঘোষণা করেন। চিকিৎসার জন্য কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে পাঠানো হয় বারাসতের বাসিন্দা পেশায় একটি সংবাদমাধ্যমের কর্মী উদ্দালককে। পৌলোমীকেও পাঠানো হয় কাঁথি হাসপাতালে। বন্ধুদের পরিণতির কথা বিকেল পর্যন্ত জানতেন না তিনি। সব জানার পরে শুধু হাউহাউ করে কাঁদছেন। বহু অনুরোধে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে রাজি হননি পৌলোমী।
দিঘার তুলনায় মন্দারমণিতে সমুদ্রে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা কম। চলতি মাসে দিঘায় জলে নেমে মৃত্যু হয়েছে চার জনের। অন্য দিকে, এ বছরে মন্দারমণিতে জলে ডুবে মৃত্যুর ঘটনা এই প্রথম। পুলিশ জানিয়েছে, অধিকাংশ ক্ষেত্রে মত্ত অবস্থায় সমুদ্রে নামায় মৃত্যু হয় পর্যটকদের। মন্দিরমণির এই ঘটনাতেও তেমন কিছু হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। তবে পর্যটকদের একাংশের অভিযোগ, দিঘার তুলনায় মন্দারমণিতে নজরদারি কম থাকে।
আলোলিকা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা স্নাতকোত্তরের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। আর অর্কপ্রভ ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ছিলেন। পড়াশোনার জন্য ভাইবোন কলকাতায় থাকতেন। দু’জনে যে বন্ধুদের সঙ্গে মন্দারমণি বেড়াতে গিয়েছিলেন তা জানতেন না তাঁদের বাবা-মা। বাবা অলোক এবং মা নারায়ণী দু’জনেই আয়ুষ চিকিৎসক। আদতে বীরভূমের বাসিন্দা হলেও কর্মসূত্রে কয়েক বছর আগে মালদহে আসেন তাঁরা। ভাড়া নেন এক নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনিতে। এ দিন দুপুরে পুলিশের মারফত দুঃসংবাদ পান অলোক এবং নারায়ণী। এ দিন গভর্নমেন্ট কলোনিতে গিয়ে দেখা গেল, শোকস্তব্ধ গোটা পাড়া। আলোলিকাদের বা়ড়ি থেকে ভেসে আসছে কান্নার শব্দ। নাতি-নাতনির মৃত্যুতে ভেঙে পড়েছেন দাদু অজিত মুখোপাধ্যায়। তাঁর আক্ষেপ, ‘‘ওরা (অর্কপ্রভ, আলোলিকা) যে মন্দারমণি যাচ্ছে তা এক বার বলল না!’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy