Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

আবার দুই আলুচাষির মৃত্যু

রাজ্য সরকার যতই ন্যায্যমূল্যে আলু কেনার আশ্বাস দিক, চাষিদের আত্মহত্যার তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে। বর্ধমানে ফের দুই চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন। এবং তার জন্য আলুর দর না পাওয়াকেই দায়ী করছেন তাঁদের বাড়ির লোকজন। আলুর দর না পেয়ে এই নিয়ে রাজ্যে অন্তত আট জন চাষি আত্মহত্যা করলেন বলে অভিযোগ।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত চাষি প্রসাদ লেটের পরিবারের সদস্যেরা। বর্ধমান মেডিক্যাল চত্বরে উদিত সিংহের তোলা ছবি।

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন মৃত চাষি প্রসাদ লেটের পরিবারের সদস্যেরা। বর্ধমান মেডিক্যাল চত্বরে উদিত সিংহের তোলা ছবি।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৫ ০৩:০০
Share: Save:

রাজ্য সরকার যতই ন্যায্যমূল্যে আলু কেনার আশ্বাস দিক, চাষিদের আত্মহত্যার তালিকা ক্রমশ দীর্ঘ হচ্ছে।

বর্ধমানে ফের দুই চাষি আত্মঘাতী হয়েছেন। এবং তার জন্য আলুর দর না পাওয়াকেই দায়ী করছেন তাঁদের বাড়ির লোকজন। আলুর দর না পেয়ে এই নিয়ে রাজ্যে অন্তত আট জন চাষি আত্মহত্যা করলেন বলে অভিযোগ।

উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গে আলুর দর চেয়ে বিক্ষোভ-অবরোধও যথারীতি চলছে। শনিবার সকালেই ধূপগুড়ি ও মল্লারপুরে জাতীয় সড়ক অবরোধ করা হয়। যদিও প্রশাসন যথারীতি সব বিপর্যয়ের দায় এড়াতে ব্যস্ত।

যে দুই চাষির মৃত্যু হয়েছে, তাঁদের এক জনের বাড়ি জামালপুরে, অন্য জন কালনার বাসিন্দা। দু’জনেই ঋণ নিয়ে পাঁচ বিঘা করে জমিতে আলুচাষ করেছিলেন। প্রথমে নাবিধসা রোগে ফলনের ব্যাপক ক্ষতি হয়। মোটা টাকা খরচ করে যেটুকু বাঁচানো গিয়েছিল, বাজারে দর পড়ে যাওয়ায় তারও দাম মেলেনি। ঋণও শোধ করা যায়নি। দুই চাষিই শুক্রবার কীটনাশক খান। জামালপুরের চাষির নাম প্রসাদ ওরফে অতুল লেট (৪০)। তাঁর বাড়ি বিষ্ণুবাটি গ্রামে। শুক্রবার সকালে চাষের জমির পাশে তাঁকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। আত্মীয়রা তাঁকে চকডিহি গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখান থেকে জামালপুর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে, দুপুরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আনা হয় তাঁকে। এ দিন সকালে সেখানেই তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃতের স্ত্রী পার্বতী লেটের বক্তব্য, “আমার স্বামী ভাগচাষ করেন। ধার করে চাষ করেছিলেন। ভেবেছিলেন, আলু বিক্রি করে ঋণ শোধ করবেন। কিন্তু নাবিধসার কারণে ফলন প্রায় ১০০ বস্তা কম হয়। তার পরে দাম পাওয়া যায়নি। সেই হতাশাতেই উনি আত্মহত্যা করেছেন।” স্থানীয় একটি সমবায় সমিতির ম্যানেজার গৌরাঙ্গ মুখোপাধ্যায় বলেন, “একটি স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর সদস্য হিসেবে ২০১০ সালে পার্বতীদেবীও আমাদের সমবায় থেকে ঋণ নিয়েছিলেন। কিছু টাকা শোধ হলেও ৬০ হাজার টাকা বাকি।”

জামালপুর থানা অবশ্য দাবি করেছে, পারিবারিক বিবাদের জেরেই এই ঘটনা। জামালপুরের তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল প্রামাণিকের বক্তব্য, “ওই ব্যক্তি তো আগে শাড়ি ফেরি করতেন। জামালপুরে এ বার আলুর ফলন ভাল হয়েছে। চাষে লোকসানের জন্য আত্মহত্যার সম্ভাবনা খুব কম। ”

শুক্রবার রাতে কালনা ২ ব্লকের বড়ধামাস পঞ্চায়েতের শিবরামপুর গ্রামেও বিজয় হাঁসদা (৩৮) নামে এক আলুচাষির মৃত্যু হয়। তাঁর ভাই সঞ্জয় হাঁসদার দাবি, “গত বার আলুতে ভাল লাভ হওয়ায় এ বার অনেক মহাজন চাষের জন্য টাকা ধার দিয়েছিলেন। আলু ওঠার পরে পাওনাদাররা বাড়িতে এসে তাগাদা দিচ্ছিল।”

গ্রামবাসী জানান, এ বার এলাকায় নাবিধসায় বড় ক্ষতি হয়েছে। যা-ও বা বেঁচেছিল, শেষ দিকে বস্তা পিছু ১০০ টাকাও পাওয়া যায়নি। কালনার মহকুমাশাসক সব্যসাচী ঘোষ জানান, সংশ্লিষ্ট বিডিও-কে রিপোর্ট দিতে বলা হয়েছে।

ন্যায্যমূল্যে আলু কেনা ও চাষিদের ঋণ মকুবের দাবিতে এ দিন বীরভূমের মল্লারপুরে বাহিনা মোড়ে রানিগঞ্জ-মোরগ্রাম ৬০ নম্বর জাতীয় সড়ক ঘণ্টাখানেক অবরোধ করা হয়। চাষিরা জানান, ব্যাঙ্ক থেকে ঋণ নিয়ে আলু চাষ করে তাঁরা বিপাকে পড়েছেন। পরে বিডিও-র আশ্বাসে অবরোধ ওঠে। জলপাইগুড়ি জেলায় ইতিমধ্যে সাড়ে ৫ টাকা সহায়ক মূল্যে আলু কেনা শুরু হয়েছে। তার বদলে ১০ টাকা কেজি দরে আলু কেনার দাবিতে ধূপগুড়িতে বেলা ১১টা থেকে টানা এক ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে এসইউসি। পরে পুলিশ গিয়ে অবরোধ তোলে।

চাষিদের বক্তব্য, খেতের সব আলু এখনও ওঠেনি। সেগুলি উঠলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাবে। হিমঘরগুলিতে আলু মজুতের জন্য বন্ড চাইতে গিয়ে ফিরে আসতে হচ্ছে। জায়গা মিলছে না। উত্তরবঙ্গ হিমঘর মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ প্রসাদ বলেন, “পর্যাপ্ত জায়গা আছে। মজুতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।” উত্তরবঙ্গ আলু ব্যবসায়ী সমিতির সহকারী সম্পাদক শিবু চক্রবর্তী বলেন, “রেল ও সড়ক পথে উত্তর পূর্বাঞ্চলে আলু পাঠানো শুরু হয়েছে। চাপ কিছুটা কমবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE