মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করার আগে। কালীঘাটে তোলা নিজস্ব চিত্র।
নদিয়ার সীমান্ত-ঘেঁষা গ্রামের বাড়ি থেকে শীত সকালে কালীঘাটে গিয়ে হত্যে দিয়েছিলেন ওঁরা দু’জনে। সোমবার দুপুর গড়িয়ে বাড়ির দরজায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে এক বার চোখের দেখাটুকু তাঁরা দেখতে পেলেন বটে, তবে কথা হল না।
চাপড়ার দীপালি টিকাদার ও তেহট্টের নমিতা সিকদারের হাতে তাঁদের নিখোঁজ স্বামীর ছবি। দীপালির স্বামী সমর টিকাদার ও নমিতার স্বামী খোকন সিকদারের হদিস নেই আজ দু’বছরের উপরে। ইরাকের মসুল শহরে বেসরকারি সংস্থায় কাঠের কাজ করতে গিয়ে বেমালুম উবে গিয়েছেন তাঁরা। দু’জনকেই আইএস-জঙ্গিরা অপহরণ করেছে বলে তাঁদের কাছে খবর। অপহৃত শ্রমিকদের মধ্যে বেশিরভাগই পঞ্জাবের। বাংলার শুধু দু’জন। পঞ্জাবের নিখোঁজদের পরিজনেরা ইতিমধ্যে বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজের কাছে দরবার করেছেন। দীপালি-নমিতাদের কাছে দিল্লি বহু দূর। বহু সাধ্যসাধনার পরে এত দিনে কলকাতায় মুখ্যমন্ত্রীর দেখাটুকু মিলল।
কৃষ্ণনগরে নদিয়ার জেলাশাসকের মাধ্যমে যোগাযোগ করে এ দিন বেলা ন’টায় মমতার বাড়িতে তাঁর সঙ্গে সাক্ষাতের সময় আদায় করেছিলেন দুই মহিলা। একেবারে বিএসএফের টহলরাস্তার পারে চাপড়ার মহাখোলা গ্রামে বাড়ি ২৯ বছরের দীপালির। ওঁর পক্ষে সকালে শ্বশুরবাড়ি থেকে বেরিয়ে কিছুতেই অত তাড়াতাড়ি কলকাতায় আসা সম্ভব ছিল না। রবিবার বিকেলের মধ্যে বেরিয়ে তাই বগুলায় বাপের বাড়ি চলে গিয়েছিলেন তিনি। এ দিন কাকভোরে সাড়ে চারটের লোকাল ধরে কলকাতায় এসেছেন। মধ্য তিরিশের নমিতা তেহট্টের ইলসামারি গ্রামের বাসিন্দা। আগের দিন বিকেলেই সল্টলেকের দত্তাবাদে এক আত্মীয়ের বাড়ি এসে মাথা গোঁজেন তিনি। ছোট ছেলেটাকে সঙ্গে নিয়ে সকালে সাত-তাড়াতাড়ি কালীঘাটে গিয়েছিলেন।
নামমাত্র দেখাটুকুই সার। মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে সরাসরি কোনও কথা হয়নি তাঁদের। মথুরাপুরে প্রশাসনিক সভার কাজে যাওয়ার আগে ব্যস্ত ভঙ্গিতে এক সচিবকে ‘কী ব্যাপার দেখুন তো’ বলতে বলতেই ঝড়ের গতিতে তিনি বেরিয়ে যান। স্বামীর খোঁজে হন্যে হয়ে গরিব ঘরের দুই মহিলা কালীঘাট-আগমন নিয়ে সংবাদমাধ্যমও ভিড় করেছিল। তাতেও মুখ্যমন্ত্রী বিরক্ত হয়েছেন। কিছুটা বকুনির সুরে ‘মিডিয়া সঙ্গে করে এনেছে কেন’, বলতে বলতেই মমতা বাড়ি থেকে বেরিয়ে গাড়িতে ওঠেন। দুই মহিলাকে পিছনের দরজা দিয়ে বার করে দেয় পুলিশ।
তবে মুখ্যমন্ত্রীর সচিবালয়ে নদিয়ার জেলাশাসকের লেখা একটি চিঠি ও দুই মহিলার দু’টি আবেদনপত্র জমা পড়েছে। এটুকুই যা সান্ত্বনা দীপালি-নমিতার। যদিও দিল্লিতে সুষমা স্বরাজ বা নবান্নে মমতার উদ্দেশে চিঠি-চাপাটি আগেও বিস্তর জমা দিয়েছেন দু’জনে। মুখ্যমন্ত্রী বেরোনর পরে কিছুটা হতভম্ব হয়ে পড়েছিলেন দু’জনে। পরে নমিতা বলেন, ‘‘আমাদের দিন কী ভাবে কাটছে তা ওঁকে বলতে পারলে, ভাল লাগত। আশা করছি, চিঠি পড়ে উনি আমাদের কষ্টটা বুঝবেন।’’
২০১৩-র জুলাইয়ে শেষবার স্বামীদের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয়েছিল ওঁদের। জঙ্গিরা তখন ওঁদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। দু’জনেই বলেছিলেন, সময়সুযোগ মতো ফোন করবেন। সেই ফোন আসেনি। মোবাইলও বন্ধ হয়ে গিয়েছে।
দীপালি ও নমিতার দু’জনেরই দু’টি করে ছেলেমেয়ে। নমিতার বৃদ্ধা শাশুড়িও ছেলের ফিরে আসার দিন গুনছেন। চেয়েচিন্তে কোনওমতে সংসার চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy