তৃণমূল কাউন্সিলরের সৌজন্য স্বীকার করে কমল গুহর ছবি দেওয়া এই ফ্লেক্স ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক। দিনহাটায় মঙ্গলবার।ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব।
দিদির জায়গায় বাবা। আর তাতেই বিতর্কে পড়েছেন দাদা।
কোচবিহারের দিনহাটায় উদয়ন গুহ ও দলনেত্রী তথা ‘দিদি’ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি নিয়ে বড় বড় ফ্লেক্স পড়েছে। তাতে লেখা ‘আমরা সবাই দাদার সাথে আছি’। ‘দাদা’ অর্থাৎ উদয়নবাবুর তা নিয়ে কোনও সমস্যা নেই। কিন্তু ওই শহরেই উদয়নবাবুর বাবা প্রয়াত কমল গুহর ছবি দিয়েও ফ্লেক্স পড়েছে। আর তা নিয়েই তৃণমূলের নিচু তলা থেকে উপরের তলায় ক্ষোভ ছড়িয়েছে। এলাকার তৃণমূল কর্মীদের বক্তব্য, দলনেত্রীকেই সামনে রেখে প্রচার করা দলের অঘোষিত নিয়ম। উদয়নবাবুর ক্ষেত্রে তার ব্যতিক্রম হবে কেন? তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কানেও খবর পৌঁছেছে। মঙ্গলবার তিনি বলেন, ‘‘উদয়নবাবু কী করেছেন জানি না। তবে কমল গুহ তো তৃণমূলের নেতা ছিলেন না যে তাঁকে নিয়ে প্রচার করতে হবে। উদয়নবাবুর সঙ্গে আমি কথা বলব।’’
এমনিতেই ফরওয়ার্ড ব্লক থেকে তৃণমূলে যোগ দিয়ে বারবার রীতিমতো বিড়ম্বনার মুখে পড়েছেন উদয়নবাবু। দিনহাটায় তাঁর অনুগামীদের সঙ্গে তৃণমূলের সাবেক গোষ্ঠীর বেশ কয়েক বার সংঘর্ষও হয়ে গিয়েছে। জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক ‘মধুর’ নয় বলেই তৃণমূলের অন্দরের খবর। ভোটের মুখে রবীন্দ্রনাথবাবু অবশ্য নিরীহ ভাবেই এই ঘটনায় প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন, ‘‘কেউ কারও বাবার নাম করে প্রচার করতেই পারেন।’’ কিন্তু সাবেক তৃণমূল কর্মীরা অনেকেই সরাসরি ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন। তাঁদের বক্তব্য, এই ভাবে প্রচার করায় মানুষ বিভ্রান্ত হচ্ছেন, তৃণমূলের ভাবমূর্তিও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
উদয়নবাবুর অবশ্য বক্তব্য, ‘‘কমল গুহের প্রতি দিনহাটার মানুষের একটা আবেগ রয়েছে। তাই তাঁরা নিজেদের মতো করে প্রচার করছে।’’ প্রচার করা হচ্ছে যে ফ্লেক্স লাগিয়ে, তাতে দিনহাটার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জয়দীপ ঘোষের সৌজন্য স্বীকার করা হয়েছে। ফ্লেক্সটিতে তৃণমূলের চিহ্ন বা নাম পর্যন্ত নেই। এটি কোন দলের প্রচার, তা বোঝার একমাত্র সূত্র জয়দীপবাবুর নাম। জয়দীপবাবু উদয়নবাবুর সঙ্গেই ফরওয়ার্ড ব্লক ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। সেই জয়দীপবাবুর বক্তব্য, ‘‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই আমাদের নেত্রী। তাঁকে শ্রদ্ধা করি। কিন্তু কমলবাবুই প্রথম আন্দোলনের পাঠ দিয়েছিলেন। বামফ্রন্টের বিরুদ্ধেও আন্দোলন করতে তিনিই শিখিয়েছিলেন। তাই তাঁর ছবি দিয়ে প্রচার করছি।’’
কিন্তু উদয়নবাবুকে ফব-ও ছেড়ে কথা বলেনি। দলের জেলা সভাপতি পরেশ অধিকারী বলেন, “আসলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আর আস্থা রাখতে পারছেন না উদয়নবাবু। তাই কমল গুহকে নিয়ে রাজনীতি করার চেষ্টা করছেন। এটা মানুষ কিছুতেই মেনে নেবে না।”
তৃণমূলে যোগ দিয়েও বামফ্রন্টের অতীতকে ঝেড়ে ফেলতে পারছেন না বলেও উদয়নবাবুর প্রতি অভিযোগ রয়েছে শাসক দলের অন্দরে। দলের কর্মীদের বক্তব্য, ‘‘উদয়নবাবুর হাঁসজারুর মতো অবস্থা।’’ উদয়ন নিজে অবশ্য বিতর্ক পাকতে দেখে পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, ‘‘তৃণমূলেই আছি। উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ভাবে আমাকে সমস্যায় ফেলা হচ্ছে। ওই ফ্লেক্সগুলো দরকারে খুলে ফেলতে বলব।’’
তাতেও নিস্তার নেই। তৃণমূলেরই কর্মীদের বক্তব্য, কমল গুহ ছাড়া উদয়নবাবুর রাজনৈতিক পুঁজি তো শূন্য। বাবার ছবি ছাড়া আর কী বা তাঁকে ভোট বৈতরণী পার করাবে?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy