হতবাক: অভিভাবকদের কথা শুনছেন শশী পাঁজা। মেদিনীপুরের অঙ্গনওয়াড়িতে। —নিজস্ব চিত্র।
মাঝেমধ্যেই পাতে সেদ্ধ ডিম পড়ে না। বাড়ি ফেরার সময় প্রসূতি ও শিশুদের হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয় কাঁচা ডিম। মেদিনীপুরে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র পরিদর্শনে এসে এমন নালিশই শুনলেন নারী, শিশু ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। আর তা শুনে ক্ষুব্ধ মন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “আমি কাঁচা ডিম দেওয়ার কথা এই প্রথম শুনলাম। এটা চলতে পারে না।” পাশে ছিলেন পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ডিপিও অসিত মণ্ডল। তাঁকে ধমকে শশী বলেন, “সুপারভাইজার কী করেন? কোনও কিছু কাঁচা দেওয়া যাবে না। রান্না এখানেই করতে হবে।”
বৃহস্পতিবার পশ্চিম মেদিনীপুরের সবংয়ে অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী-সহায়িকাদের সভায় গিয়েও নানা নালিশ শুনেছিলেন মন্ত্রী। তারপর শুক্রবার সকালে মেদিনীপুর ছাড়ার আগে তিনি আচমকা ঢুঁ মারেন দু’টি অঙ্গনওয়াড়িতে। মন্ত্রী আসার কথা জানতেন না সংশ্লিষ্ট এলাকার বিধায়ক, বিডিও, পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা। ফলে, কিছু গোছানোর সুযোগ মেলেনি। তাই অঙ্গনওয়াড়ির হাঁড়ির হাল স্বচক্ষে দেখেন মন্ত্রী।
শালবনির মেটালের একটি অঙ্গনওয়াড়ি ঘুরে সকালে মেদিনীপুর সদর ব্লকের মুন্সিপাটনা অঙ্গনওয়াড়িতে পৌঁছন শশী। বাচ্চারা তখন খেতে বসেছে। এই কেন্দ্রে ১৪১ জন শিশুর নাম নথিভুক্ত রয়েছে। এ দিন এসেছিল ৩৬ জন। বাচ্চাদের পাতে ছিল সাদা ভাত, আলুর ঝোল আর ডিম সেদ্ধ। তবে মন্ত্রীর কাছে নিখিল শাসমল নামে এক অভিভাবক নালিশ করেন, ‘‘এখানে রোজ সেদ্ধ ডিম দেয় না। কাঁচা ডিম দেয়।” অঙ্গনওয়াড়ির কর্মী আইভা দাস, সহায়িকা বনলতা সরেন তখন অস্বস্তিতে। আইভাদেবী বলার চেষ্টা করেন, “আপনার মেয়ে তো সেদ্ধ ডিম খেয়ে যায়। মেয়েকে জিজ্ঞাসা করবেন।” নিখিলবাবু পাল্টা বলেন, “কাঁচা ডিমই হাতে ধরিয়ে দেয়। মেয়ে তাই বাড়ি নিয়ে যায়।”
আইভাদেবীরা তখন মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে। সহায়িকা বনলতাদেবী বলেন, “ম্যাডাম, আপনি সকলের কথা শুনুন।” ক্ষুব্ধ মন্ত্রী তখন বলে ওঠেন, “আর সকলের কথা শুনতে হবে না। যা শোনার শুনে নিয়েছি।” পরে নিখিলবাবুর উদ্দেশে মন্ত্রীর বার্তা, “দাদা, আপনি জেনে রাখুন, ৩ থেকে ৬ বছরের বাচ্চারা এখানেই খাবে। আপনারাও দেখবেন, কাঁচা ডিম যেন বাড়িতে না যায়।” আর জেলার ডিপিও অসিতবাবুর উদ্দেশে মন্ত্রীর প্রশ্ন, “দফতর টাকা দেয় তো? জেলা থেকে সব ব্লকে টাকা যাচ্ছে। তাও এ সব হচ্ছে কেন?”
নিয়মমতো অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে সপ্তাহে তিন দিন গোটা ডিম, তিন দিন অর্ধেক ডিম দেওয়ার কথা। কিন্তু তা হয় না বলেই অভিযোগ। পরে মন্ত্রী বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, সপ্তাহে তিনদিন খিচুড়ি, তিনদিন আলুর ঝোল ভাত। আমরা সব জায়গায় এটাই দেওয়ার চেষ্টা করি। আর প্রত্যেক দিন সেদ্ধ ডিম দিতেই হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy