Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

শিকাগো যেতে না পারা ‘অশুভ চক্রান্ত’: মমতা

শিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম-সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতার ১২৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সেখানকার বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার কথা ছিল ২৬ অগস্ট। কিন্তু ১১ জুন ওই সোসাইটির পক্ষ থেকেই তাঁকে চিঠি দিয়ে অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানানো হয়।

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০৪:৫৭
Share: Save:

সরাসরি কারও নাম করলেন না। অভিযোগের আঙুলও তুললেন না নির্দিষ্ট কারও দিকে। কিন্তু শিকাগোয় স্বামীজী-স্মরণ অনুষ্ঠানে তাঁর যাওয়া বন্ধ করে দেওয়ার পিছনে ‘অশুভ চক্রান্ত’ হয়েছিল বলে বেলুড় মঠে দাঁড়িয়ে জানিয়ে দিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নানা কথায় বুঝিয়ে দিলেন, তাঁর সফর বাতিলের নেপথ্যে কারা ছিলেন।

শিকাগোয় বিশ্ব ধর্ম-সম্মেলনে স্বামী বিবেকানন্দের বক্তৃতার ১২৫ তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সেখানকার বিবেকানন্দ বেদান্ত সোসাইটি মমতাকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রীর যাওয়ার কথা ছিল ২৬ অগস্ট। কিন্তু ১১ জুন ওই সোসাইটির পক্ষ থেকেই তাঁকে চিঠি দিয়ে অনুষ্ঠান বাতিলের কথা জানানো হয়।

ঠিক তিন মাস পরে মঙ্গলবার বেলুড় মঠের অনুষ্ঠানে ওই প্রসঙ্গ তুলে ক্ষোভ এবং অভিযোগে সরব হন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘‘আমরা শিকাগোয় যাওয়ার চেষ্টা করেছিলাম। স্বামীজী যে হলে বক্তৃতা করেছিলেন, সেখানে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু দুর্ভাগ্যই বলুন বা সৌভাগ্য যাই মনে করুন, সেখানে যাওয়া হয়নি। যদিও আমন্ত্রণ ছিল রামকৃষ্ণ মিশনের। কিন্তু সেখানে না যেতে দেওয়ার পিছনে কোনও অশুভ চক্রান্ত কাজ করেছে বলে আমার মনে হয়। যারা চাইছিল না, রামকৃষ্ণ মিশন যে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে আমরা বাংলার মাটির লোকেরা সেখানে যাই।’’

অনুষ্ঠান বাতিলের চিঠি মিশনের তরফে পাঠানো হলেও তার পিছনে যে অন্য কোনও ‘চাপ’ ছিল, মুখ্যমন্ত্রী এ দিন প্রকাশ্যেই সে কথা উল্লেখ করেছেন। তাঁর বক্তব্য, ‘‘আমাদের যেতে না দেওয়ার পিছনে যে কারণগুলি বলা হয়েছিল, তার নেপথ্যের আসল খবরগুলো আমি সবই জানি। এ জন্য রামকৃষ্ণ মিশনকে দোষ দিই না। তবে আমি বলে দিই এ ভাবে কাউকে রোখা যায় না, যাবে না।’’

মমতার ওই সফর বাতিলের পরে রাজনৈতিক মহলে খবর ছড়িয়েছিল যে, দিল্লির শাসকদের অঙ্গুলি-সঙ্কেতে তাঁর যাত্রা আটকানো হয়েছে। তিনি ওখানে গেলে ‘হিন্দুত্ববাদী’ কোনও কোনও সংগঠন বিক্ষোভ করবে বলেও খবর পৌঁছেছিল। সরাসরি সেই রাজনীতির প্রসঙ্গ না তুলেও মমতা এ দিন খোঁচা দিয়ে বলেছেন, ‘‘কেউ কেউ মনে করছে তারা খুব শক্তিশালী হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই জিনিস যাঁরা করেছেন, তাঁদের আমি বলব স্বামীজী কী বলেছিলেন তা ভাল করে পড়ে দেখুন। স্বামীজী হিন্দু ধর্মের কথা বলেছিলেন। যে ধর্ম বাইরে থেকে আমদানি করা হয়নি। এই ধর্ম আমাদের মাটিতে তৈরি হওয়া ধর্ম। যে ধর্ম বেদ, উপনিষদ থেকে উঠে এসেছে।’’

বেলুড় মঠ কর্তৃপক্ষের উদ্দেশে মুখ্যমন্ত্রীর আহ্বান, ‘‘স্বামী বিবেকানন্দ আজ না থাকলেও তাঁর আদর্শকে এগিয়ে নিয়ে চলা বেলুড় মঠ আছে। আপনারা দেশকে জাগিয়ে তুলুন। কাকে ভয়, কীসের ভয়! বেলুড় মঠ তো আর দখল করে নিতে পারবে না। জোর করে কোনও কিছু দখল করা যায় না। কে কোথায় থাকবে তা ঠিক করা যায় না।’’

এ দিন বেলুড় মঠে স্বামীজীর শিকাগো বক্তৃতার ১২৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে দেশজুড়ে সারা বছরব্যাপি অনুষ্ঠানের সূচনা করেন রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষ স্বামী স্মরণানন্দ। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন প্রধান অতিথি। স্বাগত ভাষণ দেন মঠের সাধারণ সম্পাদক স্বামী সুবীরানন্দ। মুখ্যমন্ত্রী এ দিন বিবেকানন্দ বিশ্ববিদ্যালয়ে জন্য দেড় কোটি টাকা ও রাজারহাটে নির্মীয়মান বিবেক-তীর্থের জন্য ১০ কোটি টাকার চেক রামকৃষ্ণ মিশন মঠ ও মিশনের অধ্যক্ষের হাতে তুলে দেন।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE